চন্দ্র অভিযানকে ব্যর্থ বলতে যাব কেন?

ল্যান্ডার বিক্রমের সঙ্গে যদি সম্পর্ক শেষ পর্যন্ত স্থাপন করা না যায় তাহলেও এটা বলা যাবে না যে এই চন্দ্রযান-2 মিশন অসফল। প্রথমত অরবিটার চাঁদের কক্ষপথে সফলভাবে পরিক্রমণ করছে এবং সেখান থেকে চাঁদ সম্পর্কে তথ্যাদি পাঠাচ্ছে। তবে ল্যান্ডিং যদি ঠিকঠাক ভাবে না হয়ে থাকে তাহলে বলা যেতে পারে যে এই মিশন আংশিকভাবে অসফল। তবে এর থেকে যে অভিজ্ঞতা লাভ হয়েছে তার ভিত্তিতে আগামী দিনে সফল মিশন হতে পারে।

এই ল্যান্ডিং জিনিসটা খুবই জটিল প্রক্রিয়া। কাজেই এর সাফল্য সম্পর্কে আমরা আশাবাদী হয়েও মনের মধ্যে একটা আশঙ্কা তো ছিলই। আমি আগেও লিখেছি যে প্রচণ্ড দ্রুতগতি সম্পন্ন একটি যানকে দূর সঞ্চালনের মাধ্যমে গতি কমিয়ে কমিয়ে একেবারে শূন্য গতিতে নিয়ে আসাটা খুবই কঠিন কাজ। তার ওপর চন্দ্রপৃষ্ঠে অবতরণের আগে চন্দ্রের মাধ্যাকর্ষণকে প্রতিহত করে খুব ধীর গতিতে অবতরণের জন্য যে রিভার্স ইঞ্জিন চালু করা হয় তা চন্দ্রপৃষ্ঠে যে গ্যাসীয় চাপ তৈরি করে তার ফলে ব্যাপক ধূলিকণায় এই ল্যান্ডারের ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা থাকে। এই ধূলিঝড়ের কারণে সিগন্যাল বাধাপ্রাপ্ত হতে পারে। তাই ল্যান্ডিঙের সমস্যা অনেক।

ভারত এর আগে কোন মহাকাশযানকে কোন গ্রহ কিংবা উপগ্রহের ল্যান্ডিং করায় নি। তাই এর সাফল্য আমাদের মহাকাশ প্রযুক্তিতে একটি মাইলফলক সাদৃশ্য হতো নিশ্চয়ই। তাই আমরাও রাত জেগে এই ঐতিহাসিক ক্ষণের অপেক্ষায় ছিলাম। ল্যান্ডার বিক্রম যখন চন্দ্রপৃষ্ঠ থেকে মাত্র 2.1 কিলোমিটার ওপরে আর কয়েক মিনিটের মধ্যেই সেই মাহেন্দ্রক্ষণ সমাগত ভেবে আমাদের প্রায় দমবন্ধ অবস্থা ঠিক তখনই ল্যান্ডারের সঙ্গে যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ায় পুরো দেশজুড়ে হতাশা নেমে আসাটাই স্বাভাবিক। তবে প্রতিটি অসাফল্য থেকেই শিক্ষা লাভ করাটা বিজ্ঞানীদের ধর্ম। তাই অদূর ভবিষ্যতে ভারতের চন্দ্রযান চাঁদের মাটিতে সফল ভাবে অবতরণ করবে এই আশা নিয়ে ইসরোর বিজ্ঞানীদের এই আংশিক সাফল্যের জন্য জানাই হার্দিক অভিনন্দন।

Previous articleবাঁধ ভাঙ্গলো আবেগ, মোদির আলিঙ্গনের সময়ে সিভনের চোখভরা জল
Next article90তম জন্মদিনে “কোকিল কণ্ঠী” লতা মঙ্গেশকরকে ‘ডটার অব দ্য নেশন’ সম্মান