Unbelievable
জানালার ধারে সিট
মাননীয় রেল কর্তৃপক্ষ ও আমার বন্ধুদের জন্য এই লেখা লিখছি।আমরা যারা ট্রেনের যাত্রী এই লেখা তাদের জন্য।গতকাল অর্থাৎ ১৫.০১.২০২০ শিয়ালদহ থেকে রাত্রি ৯.৫০এর আপ শান্তিপুর লোকাল ধরলাম।জেলা র লোক আমরা,কলকাতা গেলে সব কাজ মিটিয়ে ফিরতে আমাদের রাতই হয়।সারাদিনের ক্লান্তির পর ঠেলেঠুলে আমরা যারা প্রচণ্ড ভিড়ে শুধু দাঁড়াবার জায়গা পেলেই নিজেকে টাটা-আম্বানি মনে করি এ লেখা তাদের জন্য।আমরা যারা বসার সিট পেলে নিজের জীবনকে সার্থক জনম মনে করি এ লেখা তাদের জন্য।আমরা যারা ভারতীয় রেলকে বিশ্বাস করি এ লেখা তাদের জন্য।
যাইহোক,শিয়ালদহ স্টেশন থেকে যখন ৯.৫০ ছাড়ল,তখনও আমরা জানি না কী বিপদ আমাদের জন্য অপেক্ষা করে ছিল গতকাল রাতে।শিয়ালদহ থেকে ট্রেন ছাড়ার সময় ও আমরা জানি না,যার উপর বিশ্বাস করে আমরা কয়েক হাজার মানুষ শুয়ে-বসে-দাঁড়িয়ে চলেছি তিনি নিজের মধ্যে নেই।আচ্ছা মাননীয় রেল আধিকারিক গণ কী বলেন,আমাদের বিশ্বাস করা ঠিক নয়?বন্ধুরা কী বলেন?আমাদের কয়েক হাজার মানুষের জীবন মূলত যার হাতে তিনি কী এতটা অবিবেচক হতে পারেন?হয়তো হতে পারেন,এ দেশে সবই সম্ভব !রাতের ট্রেন কামরার বেশিরভাগ যাত্রী রা তখন আধোঘুমে।
আমি প্রথম বিপত্তি টা টের পেলাম পায়রাডাঙা স্টেশনে।রানাঘাটের আগের স্টেশন এটি।সাধারণত বেশিরভাগ লোকল ট্রেন এই স্টেশনে দাঁড়ায়। কিন্তু কী আশ্চর্য কালকের ট্রেনের ড্রাইভার বেমালুম ভুলে গেলেন পায়রাডাঙা স্টেশনের কথা।সিগন্যাল ভেঙে না দাঁড়িয়ে উনি ট্রেন চালিয়ে দিলেন।বেশকিছুটা এগিয়ে আসার পর ট্রেন চালকের মনে হল-যাঃ!পায়রাডাঙা নামে একটা স্টেশন ছিল না!-মনে পড়াতে ট্রেন আবার ব্যাক করে এলো।ঠিক আছে দাদা,মানুষ মাত্রই ভুল হয়,মেনে নিলাম।আমরা ভারতীয় মেনে নেওয়াটা আমাদের অভ্যাস। চালক দ্বিতীয় খেলাটি দেখালেন কালীনারায়ণপুর স্টেশনে এসে।কালীনারায়ণপুর স্টেশনের আগে চূর্ণী নদীর ব্রিজে যখন ট্রেন,হঠাৎ বুঝতে পারলাম।ট্রেন স্বাভাবিকের থেকে বেশি গতিতে চলছে।এতদিন যাতায়াত করছি,ব্রিজে এতো গতি নিয়ে ট্রেন চলতে দেখিনি।হঠাৎ জোড়ে ব্রেক!কেঁপে উঠলো পুরো ট্রেন। বুঝতে পারলাম,অস্বাভাবিক,কিন্তু ওই যে বললাম,ভারতীয়,মেনে নেওয়া অভ্যাস।আর অত রাতে ট্রেন থেকে নেমে যাবই বা কোথায়!অগত্যা বসে থাকলাম।আবার ছুটলো ট্রেন।চালক সিগন্যাল দেখেও ভুলে গেলেন ফুলিয়া নামে একটি স্টেশন ছিল।ট্রেনযাত্রী দের সমবেত চিৎকারেও দাঁড়ালেন না চালক।নিস্ক্রিয় গার্ড বাবুও। সেই প্রচণ্ড গতিশীল ট্রেন এসে দাঁড়ালো বাথনা-কৃত্তিবাস হল্ট স্টেশনে।
এরপর যাত্রীরা হইহই করে ট্রেন থেকে নেমে ড্রাইভারের কাছে ছুটে গেলেন।ড্রাইভার তখন অপ্রকৃতিস্থ।মদের নেশায় চুর ড্রাইভার অসম্ভব গালাগালি করছেন। ব্যাস,শুরু হয়ে গেল লণ্ডভণ্ড পরিস্থিতি।মারামারি,গণ্ডগোল।ঘড়িতে তখন রাত একটা।ধন্যবাদ জানাই শান্তিপুর থানাকে।সবার আগে ওরাই এলেন,পুলিশকে দেখে একটু ভরসা পেলাম।তারপর রেল পুলিশ এল টোটোয় চেপে।কী অবস্থা রেলপুলিশের একটা গড়িও নেই !এরা দুর্ঘটনা ঠেকাবেন কী করে,পৌঁছতেই তো সময় চলে যাবে।
এরপর নানা নাটকের পর,শান্তিপুর থেকে একটি বিশেষ ট্রেন এসে উদ্ধার করলেন ফুলিয়ার যাত্রীদের।তারপর অন্য একজন ট্রেন চালক মাতাল ড্রাইভারের পরিবর্তে আমাদের নিয়ে এলেন শান্তিপুর।তখন রাত দুটো।
জানি,বাংলা কবিতা লিখি এত সহজে মরবো না।যদি মরেই যেতাম,কী দিতেন,মাননীয় রেল কর্তৃপক্ষ,সমবেদনা আর জীবনের পরির্বতে পরিবারকে টাকা।তীব্র ধিক্কার জানাচ্ছি।
আরও পড়ুন-বিশ্বভারতী কাণ্ডে দুই মূল অভিযুক্তকে গ্রেফতার করল পুলিশ