খেলা হবে অন্য পিচে, বিজেপির অফার বাউন্ডারিতে পাঠিয়ে দাবি মনোজের

ব্রেট লি, মিচেল জনসন, লাসিথ মালিঙ্গাদের কিংবা দেশয়োলি জাহির খান, ইশান্ত শর্মাদের চোখে চোখ রেখে একের পর এক বাউন্সার সামলেছেন সাবলীলায়। বাউন্ডারির বাইরে পাঠিয়েছেন বিষ মাখানো ভয়ঙ্কর সুয়িং। ক্রিকেটের বাইশ গজ ছেড়ে এবার ভোটের ময়দানে কীভাবে গুগলি সামলান, এখন সেদিকেই নজর রাজনৈতিক মহলের।

মুখ্যমন্ত্রী তথা তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় হাওড়ার শিবপুরের তৃণমূল প্রার্থী হিসেবে ঘোষণা করেছেন ক্রিকেটার মনোজ তিওয়ারি (Monojog Tiowari) নাম। এখনও বিজেপি বা বাম-কংগ্রেস জোট প্রার্থী ঘোষণা করেনি। রাজনীতির প্রথম ডেলিভারি ফেস করতে দাঁড়িয়ে উল্টো দিকের ‘বোলার’ নিয়ে ভাবছেন না মনোজ।

লড়াই কঠিন। প্রতিপক্ষ ক্ষুরধার। কীভাবে সামলাবেন? বিশ্ববাংলা সংবাদের সাংবাদিক সোমনাথ বিশ্বাসের মুখোমুখি হয়ে মনোজের সোজাসাপটা উত্তর, “আমি কোনও দিনই উল্টো দিকের বোলারদের নিয়ে ভাবিনি। নিজের টিম, নিজের খেলার উপর ফোকাস করি। এখানেও সেটাই করব। এখানে আমার টিম তৃণমূল কংগ্রেস। আমার ক্যাপ্টেন মমতা ব্যানার্জি। ম্যাচ কীভাবে বের করতে হয় সেটা বিলক্ষণ জানি।”

মনোজ সঙ্গে জুড়েছেন, “দিদি আমার আদর্শ। তিনি ফাইটার। আমার জীবনও লড়াইয়ে ঘেরা। সেই ফাইটের জন্য দিদি আমার আদর্শ। ক্রিকেটের মতো রাজনীতির ময়দানে যখন এসেছি, তখনও এই লড়াইটা জারি থাকবে। আমি ক্রিকেট থেকে নাম, যশ সব পেয়েছি। কিন্তু ক্রিকেট আমার জীবনে শেষ কথা ছিল না। আমি সব সময় রাজনীতির খবর রাখতাম। দেখতাম, একজন মহিলা কীভাবে লড়াই করছে। তাই দিদিকে জেতাতে এবার সরাসরি রাজনীতিতে।”

২০১৯ সালে প্রথমবার তৃণমূল কংগ্রেসের সঙ্গে যোগাযোগ মনোজের। তবে তার পর বিষয়টা সে ভাবে এগোয়নি। এই বছর সৈয়দ মুস্তাক আলি ট্রফি চলাকালীন নতুন করে আলোচনা। তার উপর চোটের জন্য খেলতে পারেননি বিজয় হাজারে ট্রফিতে। নীট ফল, রাজনীতিবিদ মনোজ তিওয়ারির আবির্ভাব। হাওড়ার ব্যাটসম্যান অবশ্য এ ভাবে ব্যাপারটা ভাবছেন না। তাঁর সোজাসাপ্টা বক্তব্য, ”মানুষের পাশে থেকে মানুষের জন্য কাজ করাই আমার লক্ষ্য। সে জন্য রাজনীতিতে আসা। আমি সবসময় মানুষের জন্য কাজ করেছি। কিন্তু মিডিয়ায় হাইলাইট হওয়ার জন্য কোনও দিন নিজের ঢাক নিজে পেটাইনি।”

বিজেপি অফার দিয়েছিল। হেলায় তা ফিরিয়ে দিয়ে তৃণমূলের পতাকা তুলে নিলেন মনোজ তিওয়ারি। আজ, বুধবার সাহাগঞ্জের সভায় মমতা বন্দ্যোপাধ্যাই মনোজ তিওয়ারির হাতে দলীয় পতাকা তুলে দেন। চতুর্দিকে যখন বিজেপিতে যোগদানের রমরমা, তখন মনোজ কেন তৃণমূলে? বঙ্গ ক্রিকেটের গর্ব মনোজের স্পষ্ট বক্তব্য, কাজ দেখে তৃণমূলে যেতে চাইছেন তিনি। অতীতেই সরকারি নানা কর্মকাণ্ডে মনোজকে দেখা যেত এবার আনুষ্ঠানিক ভাবেই তিনি চলে এলেন তৃণমূলের পতাকাতলে।

প্রসঙ্গত এর আগে হাওড়া থেকে তৃণমূলে যোগ দেন ক্রিকেটার লক্ষীরতন শুক্লা। তাকে বিধানসভা ভোটে প্রার্থী করে দল। হাওড়া থেকে জিতে তিনি রাজ্যের মন্ত্রীও হন। কিন্তু তাল কাটে হঠাৎই। লক্ষ্মীহারা হতে হয় তৃণমূলকে। তিনি বিধায়ক থাকলেও দল ও সাংগঠনিক পদ থেকে তিনি অব্যাহতি নেন। যদিও কোনও অসূয়া ছিল না কোনও পক্ষেরই। তৃণমূলে আজকের মনোজের যোগদানে বার্তাটা থাকছে- লক্ষ্মী-হারা হলেও কিন্তু তৃণমূল ক্রিকেটার-হারা হয়নি।

মনোজ তিওয়ারি বাংলার ক্রিকেট মহলে যথেষ্ট জনপ্রিয় নাম। দলত্যাগের বাজারে মনোজ তৃণমূলের যোগ দিলে যে বাড়তি মাইলেজ পাবে ঘাসফুল শিবির তা বলাই বাহুল্য। মনোজ তিওয়ারি অবশ্য শুধু বঙ্গ ক্রিকেটেই নয় আন্তর্জাতিক ক্রিকেটও নাম৷ জাতীয় দলের জার্সি গায়ে শতরান আছে তাঁর৷ কপাল খারাপ হওয়ায় একাধিকবার চোটের কবলে পড়ায় মাত্র ১২ টি আন্তর্জাতিক ক্রিকেট ম্যাচে খেলেছেন তিনি৷ ২০০৮ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিরুদ্ধে ম্যাচ দিয়ে কেরিয়ার শুরু হয়েছিল তাঁর৷

নিজের হাওড়া জেলা টিকিট পাওয়াটা হয়তো অ্যাডভান্টেজ মনোজের। তবে কেন্দ্র নিয়ে তাঁর কোনও ছিল না বলেই দাবি। গত বিধানসভায় হাওড়া থেকে তৃণমূলের হয়ে জিতে মন্ত্রী হয়েছিলেন লক্ষ্মীরতন শুক্লা। এ বার মনোজের বন্ধু অশোক দিন্দা যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে, প্রাথীও হয়েছেন ময়না থেকে। অন্যদিকে, শিবপুরের বর্ষীয়ান তৃণমূল বিধায়ক জটু লাহিড়ী টিকিট না পেয়ে যোগ দিয়েছেন বিজেপিতে। আবার শোনা যাচ্ছে, এই কেন্দ্রে গেরুয়া শিবিরের প্রার্থী জনপ্রিয় অভিনেতা রুদ্রনীল ঘোষ। মনোজের অবশ্য মাথায় এত কিছু নেই। নতুন পিচে দাঁড়িয়ে শুধু ভোটের ডেলিভারির জন্য নিচ্ছেন স্টান্স। কারণ, ক্যাপ্টেন সেই মমতা ব্যানার্জি।

Advt

 

Previous articleএগিয়ে থেকেও ড্র বাগান ব্রিগেডের
Next articleঅবশেষে ঘোষণা মোর্চার শরিক কংগ্রেসের ১৩ প্রার্থীর নাম