ওপারে গিয়েও নজরে এপারের ভোট, মতুয়া মন জয়ের লক্ষ্যে মতুয়া মন্দিরে ‘কৌশলি’ মোদি

বাংলাদেশে সরকারি সফরে গিয়েও কার্যত পশ্চিমবঙ্গের ভোটপ্রচার সারলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি৷ বাংলার নির্বাচনে মতুয়া ভোট বড় ফ্যাক্টর৷ ভোটের মুখে সেই ভোটব্যাঙ্ক দখল করতেই প্রধানমন্ত্রীর সফর-সূচিতে তাৎপর্যপূর্ণভাবে ঢোকানো হয় ওড়াকান্দি’তে মতুয়া ধর্মের প্রবক্তা হরিদাস ঠাকুরের জন্মস্থান সফর৷ শনিবার সেই সুযোগের সদ্ব্যবহার করলেন নরেন্দ্র মোদি৷

বাংলাদেশ সফরের দ্বিতীয় তথা শেষ দিনে শনিবার ওড়াকান্দি’তে মতুয়া ধর্মের প্রবক্তা হরিদাস ঠাকুরের জন্মস্থান ঘুরে দেখলেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi)। শুধু ঘুরে দেখা বা শ্রদ্ধা জানানো নয়, গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের (Thakur Harichand) প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বার বার সামনে এনেছেন তাঁর সঙ্গে বাংলা তথা ভারতের মতুয়া সম্প্রদায়ের সম্পর্ক কতখানি নিবিড়, বোঝালেন ঠাকুরনগরে গিয়ে ‘বড়মা’র সঙ্গে সাক্ষাৎ করে তিনি কতখানি ধন্য হয়েছেন এবং জানালেন, “বড়মা আমাকে নিজের সন্তানের মতই স্নেহ করতেন”৷ পশ্চিমবঙ্গে ভোটের মুখে প্রথম প্রধানমন্ত্রী হিসেবে মোদির ওড়াকান্দি সফর মতুয়া ভোট টানতে ‘মাস্টারস্ট্রোক’ হবে‌ বলেই মনে করছেন বিজেপি নেতৃত্ব। একইসঙ্গে মোদি ভারত সরকারের তরফে ওড়াকান্দি’তে একটি বিশ্বমানের বিদ্যালয় গড়ে দেওয়ারও আশ্বাস দেন৷

এদিন প্রধানমন্ত্রী টুঙ্গিপাড়া থেকে গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি-র ওড়াকান্দি ঠাকুরবাড়ির সামনের হেলিপ্যাডে নামেন। সেখান থেকে তিনি মতুয়াদের প্রধান তীর্থপীঠ শ্রীধাম ওড়াকান্দিতে হরিচাঁদ মন্দিরে যান এবং সেখানে পুজো দেন। পরে তিনি ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গেও কথা বলেন। বাংলাদেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে আসা মতুয়া প্রতিনিধিদের সামনে বক্তব্য রাখার সময় বার বার উল্লেখ করেন পশ্চিমবঙ্গের বিজেপি সাংসদ তথা হরিচাঁদ ঠাকুরের উত্তরাধিকারী শান্তনু ঠাকুরের (Santanu Thakur) নাম৷ তিনি বলেন, “আমার থেকে বয়সে ছোট হলেও আমি শান্তনুকে সম্মান করি, কারন, উনি হরিচাঁদ ঠাকুরের ভাবাদর্শে শিক্ষিত ৷ ওড়াকান্দি’র মতুয়া আচার্য পদ্মনাভ ঠাকুর বলেছেন, ঠাকুর পরিবারের সদস্য ও মতুয়া প্রতিনিধিদের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি কথা বলেছেন। সারা দেশ থেকে ৩৫০ জন মতুয়া প্রতিনিধি নরেন্দ্র মোদির এই অনুষ্ঠানে যোগ দেন। মোদির এই সফরের মধ্যে দিয়ে দুই দেশের মধ্যে পারস্পরিক সম্পর্ক আরও নিবিড় হবে বলেও তিনি বিশ্বাস করেন।

পশ্চিমবঙ্গের বিধানসভা নির্বাচনের প্রাক্কালে মোদির বাংলাদেশ সফর এবং সেই সফরের সূচিতে জ্বলজ্বল করতে থাকা “মতুয়া ধাম” দর্শন খুবই তাৎপর্যপূর্ণ বলে মনে করছেন রাজনৈতিক মহল। মতুয়াদের প্রধান তীর্থস্থানে নরেন্দ্র মোদির সফর মূলত এপার বাংলার মতুয়া মন জয় করার চেষ্টার একটি অংশ বলেই মনে করা হচ্ছে। এ রাজ্যের বিধানসভা নির্বাচনের মতুয়া-ভোট বিজেপির কাছে গুরুত্বপূর্ণ নির্ধারক। মোট ২৯৪টি বিধানসভা কেন্দ্রের প্রায় ৮৪টিতে মতুয়া ভোটারের সংখ্যা ১৭ লক্ষেরও বেশি। বাংলার ভোটে বড় সংখ্যার আসন দখলের যে দাবি বিজেপি করছে, তার অনেকটাই নির্ভরশীল মতুয়াদের উপর। বিশেষ করে নদিয়া এবং উত্তর ২৪ পরগণার মোট ৫০টি বিধানসভা কেন্দ্রের ৩২-৩৩টি আসনের নির্ধারক মতুয়া ভোট। পশ্চিমবঙ্গে প্রথম দফার ভোটগ্রহণ যখন চলছে, ঠিক সেই সময়ে মতুয়া-গুরু হরিচাঁদ ঠাকুরের পরিবারের সঙ্গে দেখা করে এবং মন্দিরে গিয়ে শ্রদ্ধা জানিয়ে মোদি সুকৌশলে পশ্চিমবঙ্গের ভোটের প্রচার করেছেন বলেও মনে করছে রাজনৈতিক মহল।

Advt

Previous articleভোটের বিধিতে বদলের দাবি তুলে কমিশনের দফতরে তৃণমূলের প্রতিনিধিদল
Next articleভোট বড় বালাই: ওড়াকান্দিতে ভারতের তরফে প্রাথমিক স্কুল গড়ার প্রতিশ্রুতি মোদীর