Sunday, November 9, 2025

ক্যান্সার আক্রান্তদের পাশে ‘ব়্যাপুনজেল’ শ্রীতমা

Date:

Share post:

ছোটবেলায় ইচ্ছে ছিল ব়্যাপুনজেলের রাজকুমারীর মতো লম্বা চুল হবে তার। বিনুনি ঝুলিয়ে দোতলার বারান্দায় বসলে, গলিতে থাকা কালু, ভুলুরা আবার চেটে দেবে না তো? এই ভয়টাও ছিল ছোট্ট মামমাম ওরফে শ্রীতমা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। কিন্তু তারপরে মনে হত ওই বিনুনি ধরে যদি উঠে আসে প্রিন্স চার্মিং! বড় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে রূপকথা আবছা হয়ে এলো। কিন্তু লম্বা চুলের শখটা হারায়নি। কলকাতার নামী বেসরকারি ইংরাজি মাধ্যম স্কুলের ক্লাস টেনে পড়া শ্রীতমা ছোট থেকে চুল কাটানো পছন্দ করত না। মায়ের পীড়াপীড়িতে হয়ত একটু ট্রিমিং হত, তার বেশি কিছু নয়।

হঠাৎই একদিন তার মা সল্টলেকের এফ ডি ব্লকের বাসিন্দা রূপা বন্দ্যোপাধ্যায় তাকে একটা ঘটনা বলেন। মায়ের মুখ থেকে মামমাম জানতে পারে ‘হেয়ার ফর হোপ’ নামে স্বেচ্ছাসেবী সংগঠনের কথা। যাদের কাজ হল ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীদের পরচুল বানানোতে সাহায্য করা। এই কাজে প্রয়োজন অনেক চুল। কারণ, এগুলি কিনতে বা বিদেশ থেকে আমদানি করতে হলে অনেক বেশি খরচ হয়। অনেক ক্যান্সার আক্রান্ত রোগীরই সেই সামর্থ্য থাকে না। তাই কোনও সহৃদয় ব্যক্তি যদি চুল দান করেন, তাতে কাজটা অনেকটা সুবিধাজনক হয়। রূপার মুখে এ কথা শোনার পরেই ভাবতে বসে কিশোরী। তার মতোই ছোট ছোট ছেলে-মেয়ে, যাদের কেমোথেরাপির ফলে পড়ে গিয়েছে সব চুল। তাদের জন্য মনটা কেঁদে ওঠে তার। মায়ের কাছে সে জানতে চায়, “আমি চুল দিতে পারি না? আমার তো অনেক লম্বা চুল”। যে মেয়ে ছোটবেলা থেকে চুলে কাঁচি চালাতে দেয়নি, তার কাছ থেকে এই প্রস্তাবে আশ্চর্য হয়ে যান রূপা।

বান্ধবীর মাধ্যমে তিনি যোগাযোগ করেন ‘হেয়ার ফর হোপ’-এর সঙ্গে। সংস্থা থেকে ইন্দ্রনীল সল্টলেকের বাড়িতে গিয়ে বুঝিয়ে দেন, কীভাবে চুল কাটালে সেটি গ্রহণ করা যাবে। সেই মত 14 বছরের কিশোরী যায় বিউটি পার্লারে। সেখানে হেয়ার স্টাইলিস্টকে বুঝিয়ে বললে, তাঁরাও যত্ন করে প্রয়োজনীয় নির্দেশ অনুযায়ী চুল কেটে দেন। 4 ইঞ্চি লম্বা চুল হলেই সেটা গ্রহণযোগ্য হয়। শ্রীতমার ক্ষেত্রে নির্দিষ্ট দৈর্ঘ্যের থেকে অনেক বেশি ছিল। পরিষ্কার করে চুল ধুয়ে, কেটে বাধা অবস্থায় রাখতে হয়। মাটিতে পড়া চুল নেওয়া যায় না। সেই ভাবেই চুল সংগ্রহ করে রাখেন রূপা এবং শ্রীতমা। যথাসময়ে ইন্দ্রনীল গিয়ে সেটি নিয়ে যান। এখন ছোট চুল নিয়ে বেশ খুশিতেই আছে শ্রীতমা। কারণ, তার সবচেয়ে ভালো লেগেছে, সোশাল মিডিয়ায় তার কথা জেনে অনুপ্রাণিত হয়ে এগিয়ে আসছেন আরও অনেকে। আর রূপা ভাবছেন, সঠিকভাবে মেয়ের মধ্যে মূল্যবোধ, মানুষের পাশে দাঁড়ানোর মানসিকতা তৈরি করে দিতে পেরেছেন তিনি। খুশি শ্রীতমা। কন্যার জন্য গর্বিত রূপা।

আরও পড়ুন-বাগুইআটি বন্ধুমহল ক্লাবের অভিনব উদ্যোগ ‘তারের বাঁধনে ঐক্য সাধনে’

 

spot_img

Related articles

বালিচকের প্লাটফর্মে ধাক্কা মালগাড়ির, অল্পের জন্য বড় দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা

রবিবার সকালে খড়্গপুর ডিভিশনে রেল দুর্ঘটনা। নটা নাগাদ বালিচক স্টেশনে বিকট আওয়াজে একটি মালগাড়ির ইঞ্জিন ধাক্কা মারে প্ল্যাটফর্মে।...

তারকেশ্বরে শিশুকন্যাকে অপহরণ করে যৌন নির্যাতন, গ্রেফতার দাদু!

চার বছরের ঘুমন্ত শিশুকন্যাকে মশারি কেটে বের করে নিয়ে গিয়ে যৌন নির্যাতন। তারকেশ্বর স্টেশন (Tarkeswar Station) সংলগ্ন ড্রেন...

রবিবাসরীয় সকালে চাঁদনী চকের CESC অফিসের ট্রান্সফর্মারে বিস্ফোরণ!

সাতসকালে মহানগরীতে ফের অগ্নিকাণ্ড (Fire incident in Kolkata)। সকাল ৭টা ১০ মিনিট নাগাদ চাঁদনী চকের CESC অফিসের একটি...

গ্রিন লাইনে ট্র্যাফিক ব্লক, রবির শেষ মেট্রোসূচিতে বদল!

ছুটির দিনে মহানগরীর পাতাল পরিষেবায় বদল। হাওড়া ময়দান - সেক্টর ফাইভ (Howrah Maidan to Sector V) রুটে শেষ...