রাজীবকুমারকে কার্যত খোলা চিঠি কুণাল ঘোষের, রাজীবকুমার শুনছেন?

কুণাল ঘোষ

আমি এই মুহূর্তে নতুন করে কোনো বিতর্ক চাই না। কিন্তু কিছু যন্ত্রণার কথা না বলে থাকা যাচ্ছে না।

যে রাজীবকুমার অ্যান্ড কোং 2013 সালে বারবার আমাকে ডেকেছেন, আমি গেছি; যে রাজীবকুমার আমার বক্তব্য না শুনে পরিকল্পিত চিত্রনাট্যে আমাকেই কলঙ্কিত করে মামলার মালা পরিয়ে আমাকে ধ্বংস করে ইস্যু ধামাচাপার উন্মত্ত খেলায় মেতেছিলেন; যে রাজীবকুমারের তৈরি বেড়াজালে আমি আজও মামলাগুচ্ছে চরকি কাটছি; যে রাজীবকুমারের সৃষ্ট কাগজপত্রের জেরে আমি সিবিআই, ইডির থেকেও বেরোতে পারছি না; কোর্টের বিচারের লক্ষ্যে লড়াই করছি;

সেই রাজীবকুমার এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? কেন তিনি প্রাতিষ্ঠানিক পৃষ্ঠপোষকতা পাচ্ছেন?

আইন সবার জন্য সমান! হাস্যকর কথা।
যার টাকা আছে, যার প্রভাব আছে, আইনি সুবিধা তার।
Good Money, Good Relief.
বিচারব্যবস্থাকে সম্মান দিয়েই বলছি:
কখনও সুরক্ষাবলয় মামলা, কখনও আগাম জামিন; সর্বোচ্চ আদালত থেকে নিম্ন আদালত, আবার নিম্ন আদালত থেকে উচ্চ আদালত; ধারাবাহিক মামলা। টাকার জোর না থাকলে সম্ভব? উকিলবাবুদের খরচই তো প্রচুর। এত নামীদামী উকিল। বিলম্বের কৌশলে দিনের পর দিন শুনানি। হাওয়ায় হচ্ছে? হয় টাকা; নয় প্রভাব।

যেভাবে আত্মগোপন, বড়সড় মিত্রশক্তি না থাকলে সম্ভব?

যদি সাধারণ কোনো ব্যক্তি উধাও থাকত, খোদ রাজীব কী করতেন? তার বাড়ির লোক, ঘনিষ্ঠরা ঘুমোতে পারত? সিবিআই কী করছে?

এই যে একটার পর একটা কোর্টে হার, তারপর আরেকটি কোর্টে যাওয়া; আইনে যতই থাকুক, এটাও তো একধরণের relief পাওয়ার কৌশল। আইনের ফাঁক খোঁজার চেষ্টা। ততদিন আত্মগোপন। যদি কোনো কোর্টে কপাল খুলে যায়।

মহামান্য আদালত, বারাসাত জেলা জজ, যেদিন রাজীবের আবেদন, সেদিনই শুনানি? মহামান্য হাইকোর্ট, যেদিন আবেদন, অনুরোধ রেখে পরদিনই শুনানি? সাধারণ মানুষের ক্ষেত্রেও হয় তো? হবে তো?

মাননীয় মুখ্যসচিব, স্বরাষ্ট্রসচিব, ডিজি- কোনো আত্মগোপনকারী আইপিএস আপনাদের প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষ সহযোগিতা পাচ্ছেন না তো?

রাজীবকুমার সারদাতদন্ত লাটে তোলার মূল নায়ক। তিনি সক্রিয় থাকলে এত মানুষ এত বিপদে পড়ত না। যদিও এতবছর পর, এত নথি লোপাট সাক্ষী প্রভাবিত করার পর, রাজীবের গোটা অপরাধ আজ প্রমাণ করা যথেষ্ট কঠিন; তবু, ঈশ্বরের বিচারে, রাজীবকে আজকের দিনটা দেখতে হচ্ছে, পালাতে হচ্ছে। কেন পালাচ্ছেন বীরপুঙ্গব? আসুন। সামনে আসুন। face করুন।

যে পন্ডিতরা বলছেন, রাজীবকে অন্যায়ভাবে টার্গেট করা হচ্ছে, এসব যুক্তি আগের দিনই হাইকোর্টের রায়ে উড়ে গেছে।

কেউ কেউ রাজীব সম্পর্কে বলতে গিয়ে বাড়তি কিছু নাম এনে তৃণমূলকে আক্রমণ করছেন। আমি বলি , সেই অভিশপ্ত সময়ে রাজীবের ঘনিষ্ঠ পরিচিত, গাইড কিন্তু এখন বিজেপিতেও ময়ূরপুচ্ছধারী কাক, যিনি বা যাঁরা রাজীবকে আড়ালের চেষ্টা চালাচ্ছেন। ফলে আলোচনা আপাতত রাজীবে সীমাবদ্ধ থাকাই ভালো। আমি শিলংএ বসেই বলেছিলাম, প্রভাবশালীদের হাত অনেক লম্বা এবং সব শিবিরে লম্বা। এখনও প্রভাবশালী লবি রাজীবকে সাহায্য করে চলেছে।

মাননীয় রাজীব, আপনি ডাকলে আমি নিয়মিত যেতাম। শেষে ছলাকলার আশ্রয় নিয়ে আমার সর্বনাশ করলেন। এখন পালিয়ে বেড়াচ্ছেন কেন? আসুন, তদন্তে সহযোগিতা করুন। আমাকে শিলংয়ের পর কী বাঁশ দেওয়ার চেষ্টা হচ্ছে, কে কোথায় দিল্লিতে কী করছে, সব খবর আমি রাখি। যা বাঁশ আসবে, আমি দেখব, বুঝব, লড়ব। কিন্তু রাজীব, আপনার যা চলছে, এটাও একটা শাস্তি। পলাতক গোয়েন্দাপ্রধানের বিরলতম উপাধি আপনার মুকুটে; এই কলঙ্কিত তকমা আপনার প্রাপ্য ছিল।

আইন ও বিচারের প্রতি সম্মান রেখেই বলি আইন আইনের পথে চলবে, আর আইন সবার জন্য সমান, এই কথাগুলি আজ প্রহসনে পরিণত। নিজেদের সম্মান ফেরানোর দায়িত্বটা কিন্তু আইন ব্যবস্থারই।

রাজীব, 2013র অক্টোবর, নভেম্বরে এক অসহায়কে যদি বলির পাঁঠা না করে ন্যায়বিচার দিতেন, তাহলে হয়ত আজকের দিনটা আপনাকে দেখতে হত না।

আবার বলছি, আমি বিতর্ক চাই না। কোর্টে লড়াই চলছে। কিন্তু রাজীবের জন্য আমি চরকি কাটি, তাহলে রাজীব চক্রান্তের অংশীদার হয়ে বাড়িতে ঘুমোবেন কেন?

রাজীবের আইনি পদক্ষেপ নিয়ে দুএকটা কথা বলার ছিল। এখন না। দিন আসছে। বলব।

বিজেপির দুএকজন নেতার রাজীব নিয়ে সংলাপ দেখলাম। অনুরোধ: এখনই আপনারা রাজীবের নিন্দে করবেন না। ভবিষ্যতে ‘ওয়েলকাম রাজীব’ বলার দরজা খোলা রাখার গন্ধটাও আছে। ফলে একটু সময় নিন।

রাজীব, হাইকোর্ট বা সুপ্রিম কোর্টে আপনি relief পান বা নাই পান; আমারও যত ঝড়ঝাপ্টা আসুক; দেখা হবে, হতেই হবে। এই মামলায় এই কোর্টে। আমিও হাজিরা দিতে যাব। আসতে হবে একই দিনে, আপনাকেও।

রাজীব, আপনার মনের অবস্থা বুঝতে পারছি। প্রাকশারদীয়া শুভেচ্ছা থাকল।

পুনশ্চ: বন্দি কুণাল ঘোষকে সামলাতে 150 পুলিশ নামিয়ে কোর্টে হুক্কা হুয়া করতে হত। রাজীব, সেই কুণাল ঘোষ মরে যায় নি। কালের নিয়মে একটু ঘুমোচ্ছে মাত্র। আর, একজনের কথা তার ভালো লাগছে। কুণাল ঘোষ চিরকাল সম্পর্ককে গুরুত্ব দেয়, সেটাই দিচ্ছে, ধৈর্য ধরছে। মরে যায় নি।

Previous articleফের সক্রিয় বর্ষা, সিঁদুরে মেঘ দেখছেন মৃৎশিল্পীরা
Next articleমাইল আবিষ্কার করেছিলেন বিদ্যাসাগর, এ কী বললেন মমতা!