Sunday, August 24, 2025
কুণাল ঘোষ

আমি রীতিমত বিস্ময়ে হতবাক।
এটা আমাদের সেই সরকারি মধ্যবিত্ত বাঙালি স্কুল? এটা সেই টাকি বয়েজ?
এ আমি কী দেখছি!!
ঘোর কাটতে অনুভব করলাম, ঠিক দেখছি, এটাই টাকি বয়েজ।

শুক্রবার ইউনিভার্সিটি ইন্সটিটিউট হলে স্কুলের বার্ষিক অনুষ্ঠান। যত কাজ থাকুক, এই অনুরোধ রক্ষা করতেই হয়। নিজের মনের নির্দেশ। একটি কাজ সেরে গেছি একটু দেরিতে। মঞ্চে তখন ভরপুর অনুষ্ঠান।

কিন্তু এ কী দেখলাম। আমাদের শৈশব থেকে দেখা সেই ভেতো বাঙালি টাকির আজকের খুদেরা এ কী করছে? ইংরেজিতে নাটক, স্বার্থপর দৈত্য। পাশ্চাত্য সঙ্গীতের সঙ্গে অসাধারণ নাচের উপস্থাপনা। ভাষা সাবলীল, শরীরী ভাষা অনায়াস। আমি অভিভূত। এই তল্লাটের বাংলা স্কুলের মধ্যে ইংলিশ মিডিয়াম শাখা শুরু হল তো এই সেদিন। তার মধ্যেই বিলিতি সংস্কৃতির আঙিনায় ছোটদের এমন বিচরণ ! এটা শুধু দৃষ্টিনন্দন নয়, দরকারিও বটে। ঘোষিত নামি উচ্চমার্গের ইংরেজি মাধ্যমকে টেক্কা দেওয়ার ইঙ্গিত রাখল টাকি।

আর শুধু ইংরেজি নয়; বাংলা উপস্থাপনার বৈচিত্রও নজরকাড়া। পরিচিত নানা গানের মিশ্রণভাবনা ও তার ভিত্তিতে গীতিনৃত্য, মন্ত্রমুগ্ধ ছিলাম সত্যিই। সুস্থ সময়োপযোগী সংস্কৃতির নিপুণ বিচ্ছুরণ। তার মধ্যে ছবি তোলার প্রতিযোগিতার পুরস্কার বিতরণও। সেখানেও দক্ষতার ছাপ। শিক্ষকশিক্ষিকা, ছাত্ররা মিলে এক সার্বিক সুন্দর বার্ষিক অনুষ্ঠান উপহার দিলেন পুজোর আগে। সঙ্গে যোগ্য সঙ্গতে প্রাক্তনীরা; উপভোগ্য রাজর্ষির সেতার।

আমি আন্তরিক ধন্যবাদ জানাব প্রধান শিক্ষিকা স্বাগতা মল্লিক বসাক এবং আজকের শিক্ষকশিক্ষিকাদের। তাঁরা সত্যিই ছেলেগুলোকে ঠিকভাবে তৈরি করছেন। পড়াশোনায় এবং এই সাংস্কৃতিক ময়দানে। টাকি বয়েজের ঐতিহ্য এঁদের হাতে নিরাপদ, সুরক্ষিত। সহকারী প্রধান শিক্ষক অমিত ছুটছে আয়োজনে। ওদিকে আরেক শিক্ষক অর্ক দুরন্ত তবলায় প্রাণ দিচ্ছে মঞ্চের পারফরমেন্সকে। শিলাদিরা খুদেদের সামলাচ্ছেন। সব মিলিয়ে এক স্বতঃস্ফূর্ত অথচ সুপরিকল্পিত প্রদর্শন, যা একটি স্কুলের গুণগত মান বুঝিয়ে দেওয়ার পক্ষে যথেষ্ট। বিশ্বজিতদা, রাজীবদা, অশোক, আমরা, প্রাক্তনী টিব্যাক সদস্যরা সম্মোহিত। কবে কোন কালে বাবা মায়ের হাত ধরে ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হতে আসা। ফ্ল্যাশব্যাকে কত মুহূর্ত। আজ আমরা দেখছি, বাংলা মাধ্যমের কোনো হীনমন্যতা নয়; বাংলার ভিতের উপর উঠছে স্মার্ট ইংরেজির পোক্ত কাঠামো; আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতির ভিতের উপর বিশ্ব সংস্কৃতির আবাহন; আমাদের মাতৃভূমি টাকি বয়েজ এগিয়ে চলেছে যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে। মাথা উঁচু করে।
প্রাক্তণ শিক্ষকশিক্ষিকারা ভিত গড়েছেন গভীরে। আজকের শিক্ষকশিক্ষিকারা নির্মাণ তুলছেন আকাশ ছুঁতে।
স্যালুট তাঁদের।

আমি গর্বিত আমি সরকারি বাংলা মাধ্যম স্কুলের ছাত্র।
এবং, আমি গর্বিত আমি ছিলাম টাকি বয়েজের ছাত্র।

Related articles

পরিযায়ী শ্রমিকদের জন্য ‘শ্রমশ্রী’ প্রকল্পে নাম নথিভুক্তি শুরু

পরিযায়ী শ্রমিকদের সুবিধার্থে এবার আরও এক পদক্ষেপ রাজ্য সরকারের। ‘আমাদের পাড়া আমাদের সমাধান’ কর্মসূচির আওতায় দুয়ারে সরকার শিবিরেও...

‘নিখুঁত ভুলগুলি’, উৎপল সিনহার কলম

একটা দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান হয়ে ওঠে ...একটি দুঃখের কথা পথে ও বিপথে ঘুরে প্রত্যাখ্যাত হতে হতে গান...

ষোলতেই ১৩০ কেজি! ছেলের খাবার জোগাতেই নাজেহাল বাবা-মা

মুর্শিদাবাদ জেলার সাগরদিঘি থানার কাবিলপুর পঞ্চায়েতের মথুরাপুর গ্রাম। এখানেই থাকেন দিনমজুর মুনশাদ আলি। তাঁর ছোট ছেলে জিশান আলি...

কবে থেকে শুরু জয়েন্টের কাউন্সেলিং? দিনক্ষণ জানিয়ে দিল বোর্ড

ফলপ্রকাশের পর এবার ১৫ দিনের মধ্যেই কাউন্সেলিং প্রক্রিয়া তথা ভর্তি প্রক্রিয়া শেষ করবে জয়েন্ট এন্ট্রান্স বোর্ড। এবার কাউন্সেলিং...
Exit mobile version