Friday, August 29, 2025

চাঁদে পাড়ি দিচ্ছি আমরা। 4G-র পরে মুঠোফোনে আসছে 5G পরিষেবা। স্মার্টফোন জীবনকে নাকি অনেকটাই স্মার্ট করেছে। কিন্তু সত্যি কতটা আধুনিক হয়েছি আমরা? পোশাক-পরিচ্ছদে, চলনে-বলনে আধুনিক হলেও মনে শিক্ষার আলো প্রবেশ করেছে কি? প্রশ্ন ওঠে অনলাইনে অদ্ভুত ধরনের ওষুধ বিক্রির বিজ্ঞাপন দেখে। সম্প্রতি জনপ্রিয় অনলাইন শপিং সাইটের বিজ্ঞাপন দেখা যাচ্ছে ‘আই-ভার্জিন’-এর। কিন্তু তার কার্যকারিতা শুনে চোখ কপালে উঠেছে নেটিজেনদের। বিয়ের পরে প্রথম শারীরিক মিলনের সময় মহিলাদের যে রক্তপাত হয়, সেটাই নাকি ঘটাতে সক্ষম এই ট্যাবলেট। অর্থাৎ রক্তপাত না হলেও এই ট্যাবলেটের মাধ্যমে কৃত্রিম রক্তপাত ঘটিয়ে ‘সতীত্ব’-এর প্রমাণ দিতে পারবেন নববধূ।

সমাজের একটা বড় অংশের এখনও বিশ্বাস, বিয়ের প্রথম রাতে মিলনের পর হাইমেন ছিঁড়ে রক্তপাত হলেই প্রমাণ হয় নববধূ যে কুমারী ছিলেন। এখনও অনেক জায়গাতেই বিছানার চাদর রক্তাক্ত করে নিজেদের চরিত্রের পরিচয় দিতে হয় মেয়েদের। রক্তপাত না হলে অনেক শ্বশুরবাড়ি নাকি সন্দেহের চোখে দেখে নতুন বউকে। এই চিরাচরিত ধারণা যে সত্য নয়, তা অনেক আগেই জানিয়ে দিয়েছেন চিকিৎসকরা। চিকিৎসাশাস্ত্র বলে, হাইমেন অক্ষত থাকা বা না থাকার সঙ্গে শারীরিক মিলনের কোনও সম্পর্ক নেই। সাইক্লিং, সাঁতার, যোগব্যায়াম বা অন্যান্য খেলার সঙ্গে যুক্ত থাকা কারণে অনেক সময়ই কিশোরী বয়সে সেটি ছিঁড়ে যেতে পারে। অথচ, চিকিৎসক বিজ্ঞানকে পাত্তা নি দিয়ে, সমাজের মান্ধাতা আমলের ধ্যানধারণাকে বাণিজ্যিকভাবে প্রোমোট করছে অনলাইন শপিংসাইট। সতীত্বের প্রমাণ দিতে অনেকেই নাকি সংগ্রহ করছেন ‘আই-ভার্জিন’। এইসব অশিক্ষা, কুসংস্কার শুধু যে প্রান্তিক সমাজের নয়, এটা যে আধুনিক সমাজেরও মানসিকতা তার প্রমাণ মিলল আমাজনের এই পণ্যে। কারণ আমাজনের টার্গেট বায়ার্স প্রান্তিক মানুষ হওয়ার সম্ভাবনা কম। তাহলে নিশ্চয়ই স্মার্ট ফোন হাতে, স্মার্ট পোশাক পরা আধুনিকরাই ৩১০০টাকা বিনিময় এইসব ওষুধের অর্ডার দিচ্ছেন।

ওষুধ প্রস্তুতকারী সংস্থার দাবি, ওষুধের কোনও পার্শ্বপ্রতিক্রিয়া হয় না। যদিও ডাক্তাররা এ কথায় সহমত নন। তাঁদের মতে, এই ওষুধের ফলে পার্শ্ব প্রতিক্রিয়া হওয়ার সম্ভাবনাই বেশি।

এই বিজ্ঞাপন ঘিরে তুমুল সমালোচনার ঝড় উঠেছে। সমাজবিদ এবং মনোবিদদের মতে, অবিশ্বাস ও মিথ্যাচারকে উস্কানি দিচ্ছে এই বিজ্ঞাপন। এই পণ্যের বাজারে ছড়িয়ে গেলে, কয়েক দশক আগে এই বর্বরতার বিরুদ্ধে যে আন্দোলন হয়েছিল, তার উপর জল পড়ে যাবে। শুধু তাই নয়, পুঁথিগত শিক্ষার বাইরে মানসিক উদারতা না হওয়ার প্রমাণ দেয় এই ধরনের ওষুধের কেনাবেচা। এই পণ্য বিক্রির অনুমতি এই মুহূর্তে বন্ধ করা উচিত বলেও মত সমাজতাত্বিকদের। কারও কারও মতে আবার, এই ধরনের ওষুধ পুরুষের যৌন অধিকার ও স্বেচ্ছাচারকে মান্যতা দেয়। যেখানে স্যানিটারি ন্যাপকিন নিয়ে সব দ্বিধা কাটিয়ে সমাজে এগিয়ে আসছেন মহিলারা, এ নিয়ে প্রকাশ্যে কথা বলতে বা আলোচনা করতেও পিছপা হচ্ছেন না তাঁরা। সেখানে এই ধরনের বিজ্ঞাপন সমাজকে পিছনের দিকে ঠেলে দিচ্ছে বলে মত সকলের।

Related articles

রজতজয়ন্তীতে ডব্লিউবিএনইউজেএসকে উচ্চ প্রশংসা, মুখ্যমন্ত্রীকে ধন্যবাদ প্রধান বিচারপতির

কলকাতার পশ্চিমবঙ্গ জাতীয় আইন বিশ্ববিদ্যালয় (ডব্লিউবিএনইউজেএস)-এর উৎকর্ষতা এখন বেঙ্গালুরুর থেকেও এগিয়ে—রজতজয়ন্তী অনুষ্ঠানে এমন মন্তব্য করলেন কলকাতা হাই কোর্টের...

এসএসসি নিয়োগ পরীক্ষা পিছবে না, আবেদন খারিজ করল সুপ্রিম কোর্ট 

স্কুল সার্ভিস কমিশনের নিয়োগ পরীক্ষা পিছিয়ে দেওয়ার দাবিতে সুপ্রিম কোর্টে মামলা করেও লাভ হলো না কিছু প্রার্থীর। দেশের...

যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ! রবিবার টালিগঞ্জ থেকে ক্ষুদিরাম পর্যন্ত বন্ধ মেট্রো 

কলকাতার ব্লু লাইনের যাত্রীদের জন্য দুঃসংবাদ। আগামী রবিবার মহানায়ক উত্তম কুমার (টালিগঞ্জ) থেকে শহিদ ক্ষুদিরাম স্টেশন পর্যন্ত বন্ধ...

এনএইচএম কর্মীদের বড় উপহার, উৎসবের মুখে বোনাস ঘোষণা রাজ্যের 

উৎসবের দোরগোড়ায় জাতীয় স্বাস্থ্য মিশনের কাজে নিযুক্ত রাজ্যের স্বেচ্ছাসেবক ও চুক্তিভিত্তিক কর্মীদের জন্য বড় ঘোষণা করল রাজ্য সরকার।...
Exit mobile version