Thursday, November 20, 2025

দৃষ্টিভঙ্গি বদলান, মেয়ে নয় ছেলেকে আটকান: ঊর্মিমালা

Date:

কোনদিকে চলেছি আমরা? লালসার শিকার আট থেকে আশি-র নারী। এটাই শুধু চিন্তার কারণ নয়, আমায় ভাবাচ্ছে ধর্ষকদের বয়সও। নাবালক থেকে সদ্য যুবক তারাও এই জঘন্য কাজে লিপ্ত হচ্ছে। কেন এই অবক্ষয়? মেয়েদের বাড়ি থেকে বেরোনো না আটকে, অভিভাবকদের বলব, ছেলে যদি নিজের ইন্দ্রিয়কে বশে রাখতে না পারে তাহলে তাকে বাড়িতে চেন দিয়ে বন্দি করে রাখুন।

মেয়েদের পোশাক কখনোই তার লাঞ্ছিত, নিগৃহীত হওয়ার কারণ হতে পারে না। যে কোনও পোশাক পরার অধিকার সবার আছে। হ্যাঁ, নিশ্চয়ই স্থান-কাল-পাত্র বিশেষে পোশাক পরা উচিত। কিন্তু সেটাও প্রত্যেকের ব্যক্তিগত নির্বাচন। এই কারণে কাউকে নিগ্রহ করা যায় এটা আমি ভাবতেও পারি না। তাছাড়া ছেলেরাও তো অনেক উত্তেজক পোশাক পরে। বিভিন্ন বিজ্ঞাপনে তারাও অঙ্গ প্রদর্শন করে। তাহলে কি মেয়েরা তাদেরকে নিগ্রহ করতে যায়? এই মানসিকতা পরিবর্তন হওয়া উচিত। আগে পাড়ার দাদারা অভিভাবক ছিলেন, তাঁরা প্রয়োজনে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিতেন। কিন্তু আজ বেড়েছে ‘দাদাগিরি’। অথচ পাশের বাড়ির বাসিন্দাকেও ভালো করে কেউ চেনে না।

আমাকে যতই সেকেলে ভাবা হোক না কেন, আমি এটা বলতে বাধ্য যে ইন্টারনেট যতই আমাদের সুবিধা করে দিক না কেন, তাতে অনেক খারাপ জিনিস হাতের নাগালে চলে আসছে। বয়ঃসন্ধিতে যদি সঠিক যৌন শিক্ষা না হয় তাহলে তা মারাত্মক। সচেতনতা বাড়ছে সমাজে। মেয়েদের “গুড টাচ, ব্যাক টাচ” শেখানো হচ্ছে। কিন্তু ছেলেদের সেই যৌনশিক্ষা হচ্ছে কি? অথচ কিশোর বয়সে নিষিদ্ধ সম্পর্কের প্রতি একটা অসীম কৌতুহল জন্মায়। সেখানে অভিভাবকরা ছেলেদের সঠিক পথ দেখাতে চান না। তখন পাড়ার কোনও অনভিজ্ঞ দাদা জুটে যায়, সেও ভুল বোঝায়। বা হাতে আসে ইন্টারনেটের পর্ন সাইট। সে ক্ষেত্রে সেই কিশোর বয়সের কৌতুহল ভুল পথে চালিত হয়।

আরও একটা কারণ আমার মনে হয় মদ। অনেক অনৈতিক কাজের সাহস যোগায় মদ্যপান। হায়দরাবাদের ঘটনায় দেখা যাচ্ছে বন্ধুরা সন্ধে থেকে সেখানে বসে মদ খাচ্ছিল। আর তখনই মেয়েটিকে টার্গেট করে তারা। যৌনতা আসে মস্তিষ্ক থেকে সেই মস্তিষ্ক যখন কাজ করে না, তখন যৌনতা হামলায় পরিণত হয়। তখন সেটা আর ভালো লাগা থাকে না। আর সেই কারণেই তরুণী চিকিৎসকের মৃতদেহকেও ধর্ষণ করতে ছাড়েনি ওই চার দুষ্কৃতী।

কোন দিকে যাচ্ছি আমরা? শুধু কি ধর্ষণ? মহিলাদের অপমানজনক কথা না বলা। সর্বসমক্ষে সোশ্যাল মিডিয়ায় কোনও মহিলাকে সে যেই হোন না কেন, তাকে কুৎসিত মন্তব্য করা? এগুলোও তো নিগ্রহ। মেয়েদের নিয়ে খারাপ কথা বলা, চটুল আলোচনা- প্রত্যেক পদে পদে জড়িয়ে আছে তাদের অসম্মান। এই ছোট ছোট জায়গাগুলোতে প্রতিবাদ হওয়া উচিত। কোন একটা বড় ঘটনা ঘটলে, আমরা তখন সেটা নিয়ে আলোচনা করি, কথা বলি, প্রতিবাদে সরব হই। কিন্তু যদি ছোট ছোট ঘটনা থেকে মেয়েদের প্রতি সমাজের সম্মানের জায়গা তৈরি করা যায়, তাহলে এভাবে একটা 26 বছরের মেয়েকে গণধর্ষিত হয়ে খুন হয়ে পুড়ে যেতে হয় না।
কী করে এর থেকে মুক্তি হবে? আমার মতে, শাস্তি একমাত্র পথ এবং তা দিতে হবে দ্রুত। আলোচনা করলে আস্তে আস্তে ক্ষতে মলম পড়ে যাবে এত আলোচনা, এত কথার তো কিছু নেই। যত দ্রুত সম্ভব শাস্তি করতে হবে। তা না হলে নির্ভয়ার ধর্ষকদের মতো এরাও জেলে বহাল তবিয়তেই থাকবে। কেন এখনও নির্ভর ধর্ষকদের শাস্তি হল না? হায়দারাবাদ নিয়েই বা এত কথা হচ্ছে কেন? যত তাড়াতাড়ি সম্ভব এর শাস্তি বিধান করতে হবে। দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি। তবেই এই ঘটনা বন্ধ হবে বলে আমার মনে হয়।

আর তাছাড়া একটি মেয়ে একবার ধর্ষিতা হয়। কিন্তু তারপরে প্রতিক্ষেত্রে তাকে অপমানিত হয়ে যেতে হয় বাঁচতে হয়। সমাজে তার একটাই পরিচয়, সে ধর্ষিতা। তার বিবেক, তার মনন, তার আত্মা সবচেয়ে চূড়ান্তভাবে অপমানিত হয়েছে- এ কথা কেউ মনে রাখে না। উল্টে তার দিকেই আঙুল ওঠে। তাই অবিলম্বে যেটা প্রয়োজন সেটা হল সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদল। মেয়েদের প্রতি সমাজের দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে। মেয়েদের নিরাপত্তা দেওয়ার পাশাপাশি, ছেলেদের গতিবিধি, তাদের আচরণের ওপরেও নজর দিতে হবে। তাদের সমাজের প্রতি দৃষ্টিভঙ্গি, মেয়েদের তারা কী চোখে দেখে, সেদিকেও নজর দিতে হবে অভিভাবকদের। পুরুষের দৃষ্টিভঙ্গি যদি নারীর প্রতি সঠিক না হয়, তাহলে হাজার আইন করেও মেয়েদের নিগ্রহ, অপমান, ধর্ষণ বন্ধ করা যাবে না।

Related articles

এবার কোন্নগর! এসআইআর ফর্ম বিলির চাপে সেরিব্রালে আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি বিএলও

এসআইআর ফর্ম বিলি ও সংগ্রহের অতিরিক্ত চাপে অসুস্থ হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হলেন কোন্নগরের অঙ্গনওয়াড়ি কর্মী ও বিএলও তপতি...

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের জন্য রাজ্যের সহানুভূতি স্কলারশিপ! জানুন আবেদন পদ্ধতি

বিশেষ চাহিদাসম্পন্ন পড়ুয়াদের পাশে দাঁড়াতে রাজ্যের সহানুভূতি স্কলারশিপের আবেদন প্রক্রিয়া শুরু হয়েছে। নবম থেকে কলেজ স্তরের পড়ুয়াদের জন্য...

বালিতে যুব তৃণমূলের প্রতিবাদ-মিছিলে জনস্রোত! বিজেপির SIR চক্রান্তের অভিযোগ স্নেহাশিসের

বাংলার প্রকৃত ভোটারদের নাম বাদ দিতে তাড়াহুড়ো করে এই রাজ্যে এসআইআর করছে কেন্দ্রের বিজেপি সরকার। এর বিরুদ্ধে আমরা...

পুরসভা প্রতিবাদের আঁতুড়ঘর! বাংলার মনীষীদের অপমানের ঘটনায় কড়া সুর মেয়রের

বাংলার কৃষ্টি-সংস্কৃতি ও মনীষীদের ক্রমাগত অপমান-অসম্মানের বিরোধিতায় উত্তাল হল কলকাতা পুরসভা। ডবল ইঞ্জিন বিজেপি সরকারের নেতা-মন্ত্রীরা যেভাবে রামমোহন...
Exit mobile version