হুঁহুঁবাবা ! ওরা কিন্তু মেধাবী

#হুঁহুঁবাবামেধাবী

কী যা-তা প্রশ্ন করেন আপনারা! জেএনইউ, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সির মতো হাতে গোনা কয়েকটা বিশ্ববিদ্যালয়েই কেন ঝামেলা লেগে থাকে? অন্য অধিকাংশ প্রতিষ্ঠান স্বাভাবিক ভাবে কেন চলে? এগুলো কোনও প্রশ্ন হল!
আরে বাবা, জেএনইউ, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সিতে মেধাবীরা পড়েন। দেশ-রাজনীতি-সমাজ নিয়ে ওঁরাই তো ভাববেন!
অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড… ও সব বিশ্ববিদ্যালয়েও মেধাবীরাই পড়েন বলেই জানি। কিন্তু কখনওই আন্দোলনে অচল হয়ে যেতে দেখি না। তাই মাঝেমধ্যে একটু ধন্দই জাগে। ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর পড়ুয়ারা সম্ভবত জেএনইউ-যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির বামপন্থীদের মতো মেধাবী নন।

ব্রেক্সিটের মতো এত বড় ইস্যু! গোটা ব্রিটেন, গোটা ইউরোপ শুধু নয়, গোটা পৃথিবী ভাবিত বিষয়টা নিয়ে। কিন্তু অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ অচল হয়ে যেতে দেখলাম না! মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প তো একের পর এক ইস্যু দিয়ে চলেছেন বিরোধী শিবিরকে। পরিস্থিতি এমন হয়েছে যে, ট্রাম্পের বিরুদ্ধে ইমপিচমেন্ট প্রক্রিয়া শুরু হয়ে গেল। আমেরিকার ইতিহাসে ক’বার এমন হয়েছে, হাতে গুনে বলে দেওয়া যায়। কিন্তু পড়ুয়া বিক্ষোভে হার্ভার্ড অচল হয়ে গিয়েছে— এমন কোনও শিরোনাম চোখে পড়ল না।

ও সব বিশ্ববিদ্যালয়ের পড়ুয়ারা সব কেমন যেন ম্যাদামারা-অগামার্কা! মেধাবী ছাত্রছাত্রীরাই যে রাষ্ট্রচালনা সংক্রান্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার প্রশ্নে সর্বোচ্চ কর্তৃপক্ষ, সে কথাটা বোঝেই না। মাসের পর মাস বি‌শ্ববিদ্যালয় চত্বর উত্তাল থাকবে, উপাচার্যরা ঘেরাও হয়ে থাকবেন, পড়াশোনা অনেক পিছনের সারিতে চলে যাবে, মাঝেমধ্যেই সংঘর্ষ-নৈরাজ্য গ্রাস করে নেবে গোটা বিশ্ববিদ্যালয়কে, কেউ সার্ভার বিকল করে দেবেন, কেউ ওয়াইফাই রুম বন্ধ করে দেবেন, কেউ রেজিস্ট্রেশন করাতে আগ্রহী পড়ুয়াদের ধরে ধরে বেধড়ক পেটাবেন, কেউ বিশ্ববিদ্যালয় চত্বরে মন্ত্রীর চুলের মুঠি ধরে নাড়াবেন, কেউ আচার্যকে ঢুকতে দেবেন না, কেউ হস্টেল ভাঙচুর করবেন, কেউ সহপাঠীদের মাথা ফাটিয়ে দেবেন— এ সব ছাড়া কি কোনও বিশ্ববিদ্যালয় মেধার পীঠস্থান হিসেবে চিহ্নিত হতে পারে? কেন যে লোকে অক্সফোর্ড, কেমব্রিজ, হার্ভার্ড, এমআইটি-কে মাথায় তুলে নাচে, বুঝি না!

বিশ্ববিদ্যালয়ে অগ্রাধিকার পাওয়া উচিত পড়াশোনারই, তার পরে আসবে রাজনীতি-সমাজ ভাবনা— এ সব কথা কারা বলে? আশ্চর্য! আগে রাজনীতি জরুরি, আগে ক্যাম্পাসে একচ্ছত্র আধিপত্য কায়েম করা দরকার। রাষ্ট্রকে ছাত্ররাই চালাবেন, সরকার নয়— এ কথা আগে সকলকে বুঝিয়ে দেওয়া দরকার। তার পরে সময় যেটুকু বাঁচবে, পড়াশোনা তাতেই হবে।

জেএনইউ, যাদবপুর বা প্রেসিডেন্সির কাছ থেকে ওই বিশ্ববিদ্যালয়গুলো কিছু শেখে না কেন কে জানে! জেএনইউ বা প্রেসিডেন্সির অনেক প্রাক্তনী তো ওই সব বিশ্ববিদ্যালয়ে দীর্ঘ দিন ধরে পড়াচ্ছেন। তাঁরা তো খুব নামী শিক্ষকও। তাঁরা কি নিজেদের ছাত্রছাত্রীদের অনুপ্রাণিত করতে পারছেন না? ভারত যে ভুল পথে চলছে বা ভারত যে নাৎসিদের পথে এগোচ্ছে, এ কথা তো জেএনইউ বা প্রেসিডেন্সির ওই স্বনামধন্য প্রাক্তনীরা দারুণ ভাবে ব্যাখ্যা করছেন। পুঁজির পীঠস্থানে এবং পুঁজির ঘেরাটোপে বসে থেকে, পুঁজির বৈভবে ভাসতে ভাসতেও তাঁরা নিজেদের বামপন্থী ‘নৈতিকতা’য় অবিচল রয়েছেন। সাত সমুদ্দুর-তের নদীর পারে বসেও তাঁরা জেএনইউ-যাদবপুর-প্রেসিডেন্সির আন্দোলকে নিরন্তর অনুপ্রেরণা জুগিয়ে চলেছেন। এমন সাংঘাতিক শিক্ষকদের কাছ থেকে রোজ সরাসরি অনুপ্রেরণা নেওয়ার সুযোগ থাকা সত্ত্বেও অক্সফোর্ড-কেমব্রিজ-হার্ভার্ডের পড়ুয়ারা যে কেন নির্বিষ ঢোঁড়া সাপের মতো বইতে মুখ গুঁজে পড়ে থাকে বুঝি না!

ও অক্সফোর্ড, ও কেমব্রিজ, ও হার্ভার্ড— শুনতে পাচ্ছেন? আরে কিছু শিখুন আমাদের দেশের এই মেধাবীদের কাছ থেকে। জেএনইউ, যাদবপুর, প্রেসিডেন্সিতে মেধাবীরা পড়েন ভাই। দেশ-রাজনীতি-সমাজ নিয়ে ওঁরা খুব সিরিয়াসলি ভাবেন। আপনারাও এ বার একটু ভাবুন! ভাবা প্র্যাকটিস করুন!
(CFB)

Previous articleএক নজরে মহানগরে ধর্মঘটের হাল হকিকৎ
Next articleএটাই রাজ্যের কর্মসংস্কৃতি, ধর্মঘট ব্যর্থ করে জমজমাট নবান্ন