শহরজুড়ে হোর্ডিং: 27,28 জানুয়ারি নেতাজি ইন্ডোরে তৃণমূলে ছাত্রযুব কর্মশালা। শেষমেষ চূড়ান্ত ফ্লপ। 27 তারিখেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় চলে যাওয়ার পর হল ফাঁকা, সম্মেলন লাটে। 28 তারিখ কর্মশালাই বসে নি।

প্রশ্ন উঠেছে, অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায়কে নিষ্ক্রিয় করে রেখে যারা লম্ফঝম্ফ করলেন, তারা আয়োজন সামলাতে পারলেন না কেন?

1) নামেই কর্মশালা। বস্তুত একেবারেই নতুনত্বহীন বক্তৃতা। মাঠে ময়দানে যা রোজ চলে। নেত্রীর ভাষণও মেঠো ভাষণ। কর্মশালার নয়।

2) 27 তারিখ নেতাজি ইন্ডোর ভরে নি। খুব খারাপ হাল। সভামুখী মিছিল বা ম্যাটাডোর, যা থাকে শ্লোগানে প্রাণবন্ত; শহরের রাস্তায় নজরে পড়ে নি। দাদাধরা রুটিন জমায়েত। নেত্রীর ভাষণের পরই ফাঁকা। ক্ষুব্ধ অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় ভাষণই দেন নি। 28 তারিখ কর্মশালাই বসে নি। কত বড় ব্যর্থতা !

3) ছাত্র, যুব নেতৃত্বের চূড়ান্ত ব্যর্থতা। কিছু অপদার্থ অযোগ্য লবি করে পদ পেয়েছে। এলাকা সামলানোর ক্ষমতা নেই। নিজেদের কেরিয়ার গোছাচ্ছে। বহু যোগ্য সংগঠক দূরে বসে। অন্য দল থেকে আসা বা তৎকাল তৃণমূলিরা সংগঠনটাকে আই সি ইউতে পাঠিয়ে দিয়েছে। এরা দাদাধরা রাজনীতি করে। অধিকাংশেরই আন্দোলনের মুরোদ নেই। এইগুলো সব পদ আলো করে বসে।

4) তৃণমূল ছাত্রদের বলছে রাজনীতি করতে। অথচ কলেজে নির্বাচন বন্ধ। সেখানেই ছাত্রদের অধিকার নেই। তিন বছর আগের সাধারণ সম্পাদকই এখনও সেই পদে। পরের দুবছরে কেউ পদ পেল না। ছাত্র সংগঠন কি শুধু রাস্তায় বড়দের বিজেপিবিরোধী মিছিলে ভিড় বাড়াবার জন্য? কলেজে কলেজে হতাশা কাজ করছে। বদ্ধ জলার পরিস্থিতি।

5) কর্মশালা আগ্রহ জাগাতে ব্যর্থ। সাংগঠনিক কথা, শ্লোগান, বক্তব্য, পদক্ষেপ, রূপরেখা আলোচনার বালাই নেই। নেত্রীর একঘেয়ে ভাষণ, যেটা বাংলার সব প্রান্তে একই সুরে শোনা যায়। ছাত্ররা বসে থাকার আগ্রহ পাবে কেন?

6) রাজ্য সভাপতি তথা সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক সুব্রত বক্সি মঞ্চ আলো করে বসেছিলেন। এই ছাত্রযুব সম্মেলন চূড়ান্ত ফ্লপ হওয়ার দায় তাঁকেও নিতে হবে। শিক্ষামন্ত্রীকে দেখা যায় নি ইন্ডোরে। কিন্তু তাঁকেও ভাবতে হবে। শোনা যায় পিকের ফর্মুলায় উজ্জীবিত দল শিক্ষামন্ত্রীর ভাবনাকে গুরুত্ব দিতে চায় নি। অথচ এই ইন্ডোরেই একসময়ে অভিষেকের যুবা-র সম্মেলনসহ বহু কর্মসূচি হয়েছে। সেই প্রাণ আজ উধাও কেন?

7) লোকসভার ধাক্কার পর তৃণমূলের পা মাটিতে ফিরেছিল। কিন্তু বিজেপির আত্মঘাতী নাগরিকত্ব নীতির পর তৃণমূলে আবার অতিআত্মবিশ্বাসের ঘোড়ারোগ দেখা যাচ্ছে। বিজেপি হারবেই ধরে নিয়ে তৃণমূলের ভুলভাল পদক্ষেপ ফের শুরু হয়েছে।

8) শাসকদলের ছাত্রযুব কর্মশালা সুপারফ্লপ করাটা গভীর উদ্বেগজনক। জয়া দত্তর সময় থেকেই ছাত্র উঠে গেছে। শুধু দাদাধরে আর লবি করে পদ রাখার ধান্দা। অবিলম্বে ছাত্র সভাপতি থেকে শুরু করে সংগঠনে খোলনলচে বদল জরুরি। সেই সঙ্গে শিক্ষামন্ত্রীর কথাকে গুরুত্ব দিয়ে গোটা নীতিটা ফের ভাবা দরকার।

9) নাগরিকত্ব বিতর্কে বিজেপি নাজেহাল এটা ঠিক। ভোটের অঙ্কে তৃণমূল জিতবে, সেটাও হয়ত ঠিক। কিন্তু ঘোষিত দুটো দিনও যারা ছাত্রযুব সম্মেলন চালাতে পারে না, তাদের ভাবতেই হবে, ক্ষমতার টানে কিছু লোক সঙ্গে থাকলেও আসল ছবিটা কী।

10) নাগরিকত্ব বিতর্ক ও সামাজিক অবস্থানের প্রশ্নে ছাত্রসমাজের মতামত ঠিকভাবে জানা দরকার। তারা যেমন বিজেপির নীতি পছন্দ করবে না, তেমনই একাধিক স্কুলে নিরাপত্তার কারণে সরস্বতী পুজো করা যাচ্ছে না, এটাও মানবে না।

11) প্রশান্ত কিশোর নিশ্চয়ই কাজের লোক। কিন্তু তৃণমূল মানে আবেগ আর লড়াই। ঘরে বসে গোপন রিপোর্টের অঙ্ক সবসময় আবেগের বিকল্প হয় না। তৃণমূল যদি তার মূল রসায়ন হারিয়ে আমলা, পুলিশ আর পিকেনির্ভর হয়ে যায়, তাহলে বিজেপি যতই আত্মঘাতী রাজনীতি করুক; একটা ছাত্রযুব কর্মশালা এই ভরা বাজারেও সুপারফ্লপের কলঙ্ক কিন্তু তৃণমূলকে নিতে হবে।
