Monday, November 24, 2025
    দেবাশিস বিশ্বাস

গতকাল এক মহাভীরু মাতালকে মদ গাঁজা খাবার পয়সা দিয়ে, হাতে এক রিভলবার ধরিয়ে জামিয়া মিলিয়াতে পাঠানো হয়েছিল। তাতেও তার সাহস হয়নি বলে পিছনে উর্দিধারী সুরক্ষাবাহিনীও ছিল। যাতে তাকে কেউ চ্যালা কাঠ দিয়ে ঠেঙিয়ে পাপোশ না বানিয়ে দেয়। এই মাতালটাকে সন্ত্রাসবাদী আখ্যা দেবার কী কারণ বুঝছি না। ভয়ে সে থরথর করে কাঁপছিল। ২জন লাঠি হাতে তেড়ে আসলেই মাতালটা জামাকাপড় নোংরা করে ফেলতো। আরও মজার ব্যাপার কি জানেন, সে যখন গ্রেফতার হয়, তখন সে নাবালক দেখানোর জন্য ভক্ত মিডিয়া তার সিবিএসি আর উচ্চ মাধ্যমিকের মার্কশিট প্রকাশ করে তা ছড়িয়ে দেয়। বিশ্বাস করুন, মাতালটা মাধ্যমিক এ ৫৬% আর উচ্চ মাধ্যমিকে (কমার্স) তিনটি বিষয়ে গাড্ডা মেরেছে। যদিও ওই মার্কশিটের সত্যতা বিচার করা সম্ভব নয়।

এইরকম মাতালগুলো জীবনে কখনও জেএনিউ বা জামিয়া মিলিয়াতে পা অবধি রাখতে পারবে না। এরা নাকি করবে ওই সব অতি মেধাবী ছাত্রদের বিচার!
এই ঘটনা, ভক্তদের শ্রেণিটাকে বুঝিয়ে দিচ্ছে। যারা গরিব নয়, অথচ পড়াশুনা বা অন্য কোনও দিক থেকে প্রতিষ্ঠিত হওয়ার সম্ভাবনাও নেই, কারও কাছে সম্মান পাওয়ার সম্ভাবনাও নেই, বরং সাধারণ মানুষ যাদের বখাটে, বাজে ছেলে, মাতাল ইত্যাদি বলে দূরে সরিয়ে রাখে, নিজের বন্ধু বলে পরিচয় দিতে চায়না, সমবয়সী মেয়েরাও যাদের স্বভাব চরিত্র দেখে বা ভবিষ্যতে তাদের কোনও সম্ভাবনা নেই দেখে পাত্তা দেয় না, সেইরকম ছেলেরা গুরুত্ব পাবার জন্য বা মেয়েদের চোখে একটু সম্মান পাবার জন্য দেশভক্ত হবার পথ ধরেছে। কারণ, দেশভক্ত হওয়ার এখন সহজ রাস্তা ‘জয় হনুমান’ বলা, পাকিস্তান বা মুসলমানদের গালাগালি করা।

মনে পড়ে স্যামুয়েল জনসনের এর সেই চিরস্মরণীয় উক্তি…
“Patriotism is the last resort of all scoundrels”. সমাজে এমন ছেলেমেয়ে যেহেতু অনেক আর পিছনে প্রশাসনের সাহায্য রয়েছে, তাই ভক্তদের সাপ্লাই লাইন চালু থাকবে। এখন তো সোশ্যাল মিডিয়া ভক্ততে ছেয়ে গিয়েছে। একটু কষ্ট করে তাদের প্রোফাইলগুলো খুলবেন, বহু জিনিস কমন পাবেন। তাদের অ্যাকাডেমিক কোয়ালিফিকেশন বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই খুবই সাধারণ বা নিম্ন মানের (বেশিরভাগ ক্ষেত্রে উল্লেখ থাকে না)। পড়াশুনার বাইরে খেলা, গান বাজনা সাহিত্য এসব দিকেও তাদের বলার মতো কিছু নেই। ১০-১৫% বাদ দিলে খুবই সাধারণ মানের চাকরি করে, তারও ডিটেইল কিছু থাকে না। তাদের বেশিরভাগ ক্ষেত্রে ডিপিতে নিজের ছবি থাকে না, খুব বেশী ক্ষেত্রে কোনও শিশুর ছবি থাকে, এছাড়া দেব-দেবী, আবুল কালাম, এঁদের ছবি থাকে। কোনও নিজের করা পোস্ট থাকে না। খালি নানান বিকৃত ছবি, ক্যাপসান আর ভুল ভাল লিঙ্ক শেয়ার। অথচ মজার কথা অতি সাধারণ এক লোকের ৪-৫ হাজার ফলোয়ার। তাদের ফলো করার কী যুক্তি সেটাই বোঝা যায় না। কালকের মাতালটিরও কয়েক হাজার ফলোয়ার। তার শেয়ার করা ভিডিওতে প্রায় ৪.৫ লাখ ভিউ!

তাই মনে হয়, এদের সাথে কোনও তর্ক, লড়াই এসব না করে এদের ইগনোর করাই ভালো। এরা প্রচার চায়, সেটার সুযোগ না পেলেই পালিয়ে যাবে। তাই বলি ওই মাতালটাকে সন্ত্রাসী, নাথুরাম বা কাসভ এরকম বলে মাথায় তুলবেন না।

Related articles

১৭ দিনে কাজ শেষ করলেন রাজ্যের দুই BLO: জানালেন হাজারো সমস্যার কথা

নির্বাচন কমিশন কতটা কাঁটায় ভরা পথে রাজ্যের বুথ লেভেল আধিকারিকদের এসআইআর প্রক্রিয়া করতে বাধ্য করছে, তার প্রমাণ রাখলেন...

পিসেমশাই-বৌমা সম্পর্কে স্বামীকে মারতে সুপারি কিলার! বরাহনগর গুলিকাণ্ডে চাঞ্চল্যকর তথ্য

অবৈধ সম্পর্কের জেরেই বরাহনগরে গুলি চলেছিল, তদন্তে উঠে এলো এমনই চাঞ্চল্যকর তথ্য। স্বামীকে খুন করার জন্য সুপারি কিলার...

দূষণে দমবন্ধ রাজধানীর! বিদেশ সফর নিয়ে মোদিকে কটাক্ষ তৃণমূলের

রাজধানী দিল্লিতে ভয়াবহ দূষণ নিয়ে প্রধানমন্ত্রীকে তীব্র ভাষায় আক্রমণ করলেন তৃণমূলের রাজ্যসভার সাংসদ সাকেত গোখেল। সমাজমাধ্যমে তাঁর কটাক্ষ,...

৪৪ বিধানসভার ভোটার মায়ারানী? SIR স্ক্যানের পর হইচই পাণ্ডবেশ্বরে

বিশেষ নিবিড় সংশোধন (এসআইআর) প্রক্রিয়ার মাঝেই পাণ্ডবেশ্বরে সামনে এল চাঞ্চল্যকর তথ্য। এনুমারেশন ফর্মের কিউআর কোড স্ক্যান করতেই দেখা...
Exit mobile version