Thursday, November 13, 2025
কণাদ দাশগুপ্ত

দুনিয়ার অন্য প্রান্তের আতঙ্ক আজ ধীরে ধীরে গ্রাস করছে আমাদের সমাজকেও৷ অথচ, এখনও আমাদের অনেকেই বিষয়টি হালকাভাবেই নিচ্ছে৷ আমাদের অনেকের মধ্যেই সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বিষয়ে বিন্দুমাত্র সচেতনতা দেখা যাচ্ছে না৷ তাহলে আমরা ঠিক কী চাইছি?

এভাবে কি কোনও যুদ্ধ জেতা যায়? শত্রু যেখানে অজানা, লড়াই যেখানে ছায়ার সঙ্গে, সেখানে তো আমাদের আরও আগেই সতর্ক হওয়া দরকার ছিলো৷ যে কোনও যুদ্ধের ‘বেসিক’ নিয়ম, শত্রুকে অবজ্ঞা করা যাবে না, শত্রুকে বুদ্ধিমান ভাবতে হবে, শত্রুকে কখনও কখনও ভয়ও করতে হবে৷ এবং মুখ বন্ধ করে শুনে যেতে হবে দক্ষ সেনাপতির কথা এবং নির্দেশ৷
আমরা যখন এ সব শোনার বা মানার চেষ্টা করছিনা, তখন যুদ্ধ জয়ের আশা করছি কেন?

সমাজ যদি এতখানি দুর্বিনীত,অবাধ্য এবং অসংগঠিত হয়, তাহলে যুদ্ধজয়ের আশা পরিত্যাগ করে শত্রু’র পদতলে নতজানু হওয়াই তো আমাদের ভবিতব্য৷ লকডাউন অমান্য করে বিনা কারনে পথে নামা, জটলা করা, এমনকী রাস্তার ধারে দাঁড়িয়ে বা বসে খোশগল্প করার দৃশ্যও আমাদের নজরে আসছে৷ ওদিকে গুটি গুটি পায়ে শত্রুপক্ষ আমাদের ঘরের দরজায় এসে দাঁড়িয়ে পড়েছে৷

করোনাভাইরাস সংক্রমণ ঠেকাতে কেন লকডাউন, কেন সোশ্যাল- ডিসট্যান্সিং, তা এখন আমাদের কারোরই অজানা নয়৷ আমরা নানাভাবে জেনে গিয়েছি, করোনাভাইরাসটি এক মানুষের থেকে কাছাকাছি অন্য মানুষে ছড়ায় ‘ড্রপলেট’ অর্থাৎ ছোট ছোট ফোঁটার মাধ্যমে। করোনা-আক্রান্ত মানুষের হাঁচি-কাশি, এমনকি কথা বলার সময়েও এই ভাইরাস অতি ক্ষুদ্র জলীয় ফোঁটার মাধ্যমে বাইরে আসে৷ অসতর্ক মানুষ সেই ভাইরাস নিজের শরীরে বহন করে পৌঁছে দিতে পারে বহু দূরে। যেমনভাবে বিদেশ থেকে এ রাজ্যে ভাইরাস এসেছে৷ এ তথ্য বিশেষজ্ঞদের৷ এরপরও কিছু মানুষ নির্লিপ্ত হয়ে আগের মতোই জীবনযাপন করছে, লকডাউন বিধি তোয়াক্কা না করেই৷ আরও অনেকভাবে এই বিষ শরীরে ঢুকতে পারে৷ সে কারনেই বারবার সামাজিক দূরত্ব বজায় রাখার বা Social Distancing- এর কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু কিছু মানুষ সজ্ঞানে, বিনা প্রয়োজনে এ সবের ধার ধারছেন না৷ কেন্দ্র বা রাজ্য সরকার তো বৃহত্তর ভাবনা ভাবছেই৷ অথচ আমরা আমাদের এইটুকু কর্তব্য পালন করতেই অনীহা দেখাচ্ছি৷ আমরা সবাই দায়িত্বটুকু ঠিকমতো পালন করলে আগামী দিনে আরও কঠিন পরীক্ষার মধ্যে পড়তে হত না৷ কিন্তু নিজেদের দোষেই আমরা কঠিনতর, কঠিনতম পরিস্থিতি ডেকে আনছি৷

আসলে এটা আমাদের সামাজিক সমস্যা৷ আমাদের অসংগঠিত বোধের সমস্যা৷ লকডাউন বা Social Distancing- এর বিষয়টি এখনও অনুরোধ-এর রয়েছে৷ তাই একশ্রেণীর শিক্ষিত এবং অশিক্ষিত মানুষ এসব অনুরোধ কেয়ার করছেনা৷ এখন বোঝা যাচ্ছে স্কুলে কেন একসময়ে বেত-এর প্রচলন ছিলো৷ বাস্তব এটাই, আমাদের মানসিকতা আসলে ভৃত্যশ্রেণীর৷ আমরা হুকুম মানতে যতটা স্বচ্ছন্দ, অনুরোধ মানতে ততটা নই৷ তাই সময় এসেছে, হুকুম করার৷ সরকার বা সেনাবাহিনী আমাদের এ সব মানতে হুকুম করুক, তখন আমরা ল্যাজ গুটিয়ে সব কথা শুনবো৷ দায়িত্বজ্ঞানহীনতা ক্রমশ বাড়ছে৷ না হলে এভাবে এক পরিবারের দুধের শিশু-সহ ৫জনের সোয়াব টেস্টের রিপোর্ট পজিটিভ হতে পারে ? দেশের শিক্ষিত উচ্চশ্রেণীর মানুষ যে কোয়ারান্টাইন ব্যাপারটাই বোঝেন না, এটা মানা অসম্ভব৷ মেরি কম, দুষ্ম্যন্ত সিং, কনিকা কাপুর বা বাংলার কিছু “তারকা”-র মতো দেশের সচেতন সমাজ, শিক্ষিত উচ্চশ্রেণীর মানুষ আজ কোয়ারান্টাইন ব্যাপারটাই মানছেন না৷ এবং বুঝিয়ে দিচ্ছেন, ঘাড় ধরে না মানালে সমাজের একটা অংশ এ সব নিয়ম মানতে রাজি নন৷

দায়িত্বজ্ঞানহীনতা মাশুল দেওয়া শুরু হয়ে গিয়েছে৷ দেশে ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া থামানো যাচ্ছে না৷ অন্যান্য দেশের থেকে ভারত তুলনায় ভালো অবস্থায় থাকলেও দেশবাসীর একাংশ সেই ভালো অবস্থার যেন অবসান চাইছেন৷ নির্দেশ না মেনে শহর থেকে সাধারণ মানুষ দেশের প্রত্যন্ত গ্রামে ফিরে যেতে শুরু করেছেন৷ তাঁদের শরীর বেয়ে দেশের সর্বত্র ভাইরাস ছড়িয়ে পড়া স্রেফ এখন সময়ের অপেক্ষা৷ এর পর তো রোগী বা রোগীর সংস্পর্শে আসা মানুষদের খুঁজে বের করাও দুঃসাধ্য হবে।

তাই সময় এসেছে, বোঝা যাচ্ছে, পরামর্শ বা অনুরোধে কাজ হবেনা৷ এবার আমাদের উপর আদেশ নেমে আসুক৷ সেই আদেশ অমান্য করলে কঠোর শাস্তি ঘোষণা করা হোক৷ এই অপরাধে কঠোর শাস্তি দিয়ে, সে কথা আনা হোক সংবাদমাধ্যমে৷ আমরা চাকর-বাকরের জাত, ‘ইয়েস স্যর’ বা ‘জো হুজুর’ বলতেই যে বেশি ভালোবাসি৷ দেশ, রাজ্য তথা দেশবাসীকে বাঁচাতে কড়া বিধি জারি করা প্রয়োজন এখনই৷ এখনই জারি হোক কার্ফু, এখনই নজর রাখুক সেনাবাহিনী৷

এবার ব্রাত্য হোক অনুরোধ৷

Related articles

“রিচার নামে স্টেডিয়াম ইতিহাস হয়ে থাকবে”, উচ্ছ্বসিত ঝুলন

শিলিগুড়িতে রিচা ঘোষের(Richa Ghosh)  নামে স্টেডিয়াম হচ্ছে শিলিগুড়িতে। কিছুদিন আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের ঘোষণা করেছেন বিশ্বকাপজয়ী ক্রিকেটারের নামে...

‘হাঁটি হাঁটি পা পা’-র ট্রেলার-পোস্টার লঞ্চে ‘বাবা-মেয়ে’র রসায়নে চিরঞ্জিৎ-রুক্মিণী

অর্ণব মিদ্যার ছবি 'হাঁটি হাঁটি পা পা'-র ট্রেলার ও পোস্টার লঞ্চের জমজমাট অনুষ্ঠান হল ফ্লোটেলে। বৃদ্ধ বাবা ও...

লক্ষ্য ২০২৭! ২৫ নভেম্বর শুরু ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যানের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ

ঘাটাল মাস্টারপ্ল্যান প্রকল্পের দ্বিতীয় পর্যায়ের কাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২৫ নভেম্বর থেকে। রাজ্যের সেচ ও জলপথ মন্ত্রী মানস...

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কে স্বচ্ছতা আনতে চালু অনলাইন অডিট ব্যবস্থা

রাজ্যের সমবায় ব্যাঙ্কগুলির আর্থিক লেনদেনে স্বচ্ছতা আনতে বড় পদক্ষেপ নিল রাজ্য সরকার। এ বার থেকে সমস্ত সমবায় সমিতি...
Exit mobile version