করোনা-কালেই শেষ পুর-মেয়াদ,নতুন সংকটে কলকাতা

বড়সড় এক সংকট অপেক্ষা করছে কলকাতাবাসীর জন্য!

এই করোনা-কালে কলকাতার ৬০-৭০ শতাংশ কাউন্সিলরকে ওয়ার্ডের বাসিন্দারা প্রতিদিন দেখেছেন সামনের সারিতে দাঁড়িয়ে যুদ্ধ চালাতে৷ ওয়ার্ডের নাগরিকরা এই কাউন্সিলরদের পাশে পেয়েছেন যে কোনও বিপদে বা দরকারে৷

বাকি ৩০-৪০% কাউন্সিলর নিরাপদে স্রেফ বুড়ি ছুঁয়ে দিন কাটাচ্ছেন৷ ফোন করলে অবলীলায় অজুহাত দিয়ে বলছেন ওয়ার্ডের অন্যপ্রান্তে ভীষন ব্যস্ত আছেন৷ এই সংকটে কলকাতার মানুষ সঠিকভাবেই নিজেদের এলাকার তিনস্তরের জন-প্রতিনিধিদের বুঝে ফেলেছেন৷ আগামী ভোটে এই ধারনার প্রভাব নিশ্চিতভাবেই পড়বে ইভিএমে৷

সমস্যা এ সব নয়৷ গোটা দেশের সঙ্গে এই শহরেও লকডাউন চলবে ৩ মে পর্যন্ত৷ ৩ তারিখেই যে কলকাতা যাবতীয় শৃঙ্খলমুক্ত মুক্ত হবেন, এমন উচ্চাশা কেউই করছেন না৷ ৩ মে’র পরেও দীর্ঘদিন নানা ধরনের বিধিতে মোড়া থাকবেন শহরবাসী৷

আর ওদিকে কলকাতা পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৭মে৷ সেই দিনই অস্তিত্বহীন হবে কলকাতা পুরসভার নির্বাচিত বোর্ড৷ থাকবেন না কোনও মেয়র, মেয়র পারিষদ বা কাউন্সিলর ৷ পুরসভা চলে যাবে প্রশাসকের হাতে৷

তখনও কিন্তু স্বাভাবিক হবে না কলকাতা৷ অথচ শহরের বিস্তীর্ণ এলাকার কাজের কাউন্সিলররা সেদিন আর সরকারি প্রতিনিধি থাকবেন না৷ তখনও হয়তো তাদের পাওয়া যাবে, কিন্তু সরকারি কোনও ক্ষমতা তাঁদের থাকবেনা৷ এই সংকটকালে নাগরিকদের হামেশাই লাগছে নানারকম শংসাপত্র বা সার্টিফিকেট৷ কে দেবেন সে সব ? এলাকার বিধায়কদের ‘বিশেষ বিশেষ’ সময় ছাড়া পাড়ার ঢুকতে দেখা যায়নি এই করোনা-কালে৷ বহু এলাকায় আছেন এমন বিধায়ক যারা এলাকার বাইরে থাকেন৷ নাগরিকরা এততো সব বিধি এড়িয়ে কীভাবে পৌঁছাবেন সেখানে ? আর যাবেনই বা কেন ? অথচ এ পর্যন্ত হাতে গোনা জনাকয়েক বিধায়ককে এই সংকটে পথে দেখা গিয়েছে৷ কী হবে সেদিন ?

প্রশ্ন উঠছে, ৭ মে-র পর কারা সামলাবেন ওয়ার্ডের মানুষের রোজকারের প্রয়োজন? তা ছাড়া ওয়ার্ডের করোনা- প্রতিরোধের কর্মসূচিও কি জবরদস্ত ধাক্কা খাবে না ? প্রসঙ্গত, গত ২০১৫ সালের মে মাসে বর্তমান পুরবোর্ড কাজ শুরু করে। ওই বছরের মে মাসের ৮ তারিখে নির্বাচিত কাউন্সিলরদের প্রথম সাধারণ বৈঠক হয়। কলকাতা পুর আইন বলছে, নির্বাচিত কাউন্সিলরদের প্রথম সাধারণ বৈঠকের দিন থেকে পরবর্তী ৫ বছর পর্যন্ত কাউন্সিলর পদের মেয়াদ থাকবে। এই বছর বর্তমান কাউন্সিলরদের মেয়াদ শেষ হচ্ছে আর হাতে গোনা কয়েকদিন পর, আগামী ৭ মে।

কলকাতা পুর ভোটের প্রস্তুতিও শুরু হয়েছিলো৷ কিন্তু ভোটের দিন ঘোষণার আগেই সব কিছু ওলটপালট করে দিয়েছে করোনাভাইরাস৷ আইন বলছে, ভোটের করতে হয় কমপক্ষে ভোটের ২৩-৩০ দিন আগে৷ ৭ মে
কলকাতা পুরসভার মেয়াদ শেষ হচ্ছে৷ কিন্তু আইন বলছে, আজই ভোট ঘোষণা হলেও তা হবে ৭ মে-র পরেই৷

এই পরিস্থিতিতে সমস্যা একাধিক :

◾ করোনা-কালে নাগরিকদের পাশে থেকে কাজ করছেন সংখ্যাগরিষ্ঠ কাউন্সিলররাই।

◾ আগামী ৭ মে তাঁদের পদ চলে গেলে পুলিশ, প্রশাসন কেউ আর আগের মতো তাঁদের পাত্তাই দেবে না। নির্দেশিকা জারি করলেও অভাব থাকবে গ্রহণযোগ্যতার৷

◾নিজের ওয়ার্ডের নাগরিকদের কাছে এক জন কাউন্সিলর যে সরকারি সুবিধা পৌঁছে দিতে পারেন, তা-ও বন্ধ হয়ে যাবে।

◾ স্বাভাবিক ভাবেই নাগরিকরা এই বিপদের সময়ে ধৈর্য হারিয়ে ফেলতে পারেন।

◾রাজ্য সরকার বা প্রশাসন সম্পর্কে ভুল বার্তা যেতে পারে৷

◾ওয়ার্ডের নাগরিকদের সমস্যা বা অভিযোগ মেটাতে না পারলে এই স্পর্শকাতর সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি বিনষ্ট হতে পারে৷

◾ কাউন্সিলররা সব ‘প্রাক্তণ’ হয়ে যাবেন৷ পরবর্তী সময়ে টিকিট পাবেন কিনা, তা অনিশ্চিত ৷ ফলে তাঁদের কাজে আর দায়বদ্ধতা নাও থাকতে পারে৷

◾কলকাতা পুরসভার কাজের ধরন কাউন্সিলর-কেন্দ্রিক। পুর- অফিসারদের কেউ পাত্তা দেয়না৷ কাউন্সিলররা এলাকায় প্রভাবশালী৷ তাঁরা যত সহজে সমস্যা মোকাবিলা করতে পারেন,
পুর- অফিসারদের পক্ষে তা অসম্ভব৷

◾কাউন্সিলরের মেয়াদ উত্তীর্ণ হলে পুর পরিষেবা দেওয়ার কাজ বিঘ্নিত হবেই।

ফলে, ৭ মে-র পর বোঝা যাবে প্রশাসন কাদের দিয়ে এবং কীভাবে এই করোনা-যুদ্ধ চালাবে শহর কলকাতায় !

Previous articleকল্পতরুর অষ্টম দিনে মহা-উপলব্ধি অভিষেকের
Next articleএ বার রাজ্যে শুরু হচ্ছে করোনাভাইরাস র‍্যাপিড অ্যান্টিবডি টেস্ট