আজকাল: সত্যম রায়চৌধুরী নিজেকে অকারণ অপ্রিয় করছেন কেন?

অভিজিৎ ঘোষ

অভিজিৎ ঘোষ

আমার উঠে আসা আসানসোল থেকে। রামকৃষ্ণ মিশনের ছাত্র। একসময়ে আজকাল কাগজের কট্টর পাঠক ও সমর্থক।

পরে সাংবাদিকতায় আসার পরেও আজকাল থেকে গেছিল পছন্দের একনম্বরে।

এবং অশোক দাশগুপ্ত। ভালো লাগার সাংবাদিক। পরিচিতদের মুখে যা শুনতাম, লড়াকু টিম লিডার।

ঘটনাচক্রে আজকালের বহু ঘটনাক্রম আমাদের জানা। সাফল্য, সঙ্কট- এসব জীবনের অঙ্গ।

বিস্তারিত যেতে চাই না।
এখনকার কথায় আসি।

এখন এটা আজকাল-এ কী হচ্ছে?

আমাকে দু একজন বলেছেন, কেন আমরা এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদে আজকালের অশান্তির খবর করছি।

প্রথমত, আমরা প্রথম দুদিন করি নি।

দ্বিতীয়ত, আমি এবং আমরা আজকালভক্ত। পত্রিকার মসৃণতা ও মঙ্গল চাই।

তৃতীয়ত, সঙ্কটে মিডিয়াকর্মীরা বিপদে। অনেক কষ্ট করে ছোটবড় মিডিয়াগুলো বাঁচিয়ে রাখতে হয়। সবটা কর্মীদের হাতে থাকে না। কষ্টটা আমরা বুঝি। তাই কর্মীদের উপর কোপ এলে বিচলিত হতে হয়।

চতুর্থত, যারা মিডিয়ার লোক, যারা বোঝে, তারা একভাবে সঙ্কট সামলায়। কিন্তু মিডিয়ার সঙ্গে যোগহীন লোকেরা যদি মাতব্বরি করে কর্মীদের অপমান করেন, তখন বাংলার প্রবাদ মনে পড়ে- কাদের হাতে যেন তরবারি দিতে নেই।

সত্যম রায়চৌধুরী বাংলার পরিচিত মুখ। শিক্ষা, প্রশিক্ষণে যে কয়েকটি মুখ আছে সত্যম অন্যতম। তাঁর দাদার নেতৃত্বে তিনি যথেষ্ট সফল ব্যবসায়ী। সত্যম কবিতা আবৃত্তির চেষ্টা করেন, উৎসাহী মন। বুদ্ধবাবু হোন বা মমতাদেবী, সত্যম সমানভাবে তাদের প্রিয় থাকতে পারেন। অন্য একটি শিবিরও সত্যমকে পছন্দ করে।

এহেন সত্যম আজকালের সঙ্কটে এগিয়ে এসেছেন পাশে। ভালো কথা। যুগে যুগে এমন অনেকে এগিয়ে এসেছিলেন। তালিকা দীর্ঘ।

আজকালের কারণে সত্যমের আরেকটি পরিচিতি হয়েছে, কাগজমালিক। সেটাও তাৎপর্যপূর্ণ।

যাই হোক, সত্যমের উপস্থিতিতে আজকাল তো সমৃদ্ধ হচ্ছে।
কিন্তু এত তারকা এনেও তার প্রচার, প্রভাব বাড়ে না কেন? মুখ্যমন্ত্রী উজাড় করে সাহায্য দিলেও কেন কাটে না অর্থসঙ্কট?

ইউনিয়ন এবং বহু পুরনো কর্মী ক্ষুব্ধ। অভিমানাহত। নবরা এসে আদিদের উপর। অথচ সোনা ফলছে কই? আবার কঠোর সিদ্ধান্তে আসল ক্ষতিগ্রস্ত আদিরাই।

সত্যমবাবুর অনুভব করা দরকার ইউনিয়ন তাঁর বা অশোকবাবুর শত্রু নয়। তাঁদের সঙ্গেই কথা বলে সমাধান চায়। তার বদলে সত্যম যাঁদের কথা বলতে পাঠাচ্ছেন তাদের ক্ষমতা নেই এসব সামলানোর। দমনপীড়নের ফতোয়ায় অসহায় কর্মীদের কিছুদিন চাপে রাখা যায়, হৃদয় পাওয়া যায় না। অথচ এই হৃদয়টাই ছিল আজকালের সম্পদ। ছিন্নমূল পুনর্বাসন কেন্দ্র সর্বত্র হতে পারে, কিন্তু মিডিয়ায় বিষয়টা কঠিন।

বাংলা মিডিয়ার কর্মী হিসেবে জানি অস্তিত্বের লড়াই কী কঠিন।
সত্যমবাবু কাদের কথায় নিজে অপ্রিয় হচ্ছেন জানি না। ঘনিষ্ঠ কাউকে দিয়ে ফোন করিয়ে অশোকবাবুকে দিয়ে জীবনী লেখালেও এই ঘাটতি মিটবে না।

আমরা চাই আজকালের সঙ্কট কাটুক। মতবিরোধ কাটুক। আজকালভক্ত হিসেবে চাইব অশোকবাবু, সত্যমবাবুরা দমননীতি, সাসপেনশন বন্ধ রেখে কর্মীইউনিয়নের সঙ্গে বসে বিষয়টি মেটান। এই কর্মীরা আজকালের বহু সঙ্কটেই সহযাত্রী। এরা দায়িত্বজ্ঞানহীন নন।

মিডিয়ার চারপাশে যা অবস্থা, তাতে ভয় লাগে কখন কাদের উপর কোপ আসে।
তাই কোথাও সমস্যা দেখলে তার সুষ্ঠু সমাধানের পক্ষে আমরা।

সত্যমবাবুকে কর্মীরা সম্মান করতে। কয়েকটা ভুঁইফোড়ের দাদাগিরিতে তিনি অপ্রিয় হচ্ছেন কেন? মনে রাখুন, এবারের মত গায়ের জোরে জিততে হয়ত পারে ম্যানেজমেন্ট। কর্মীরা বাধ্য হবে সব মানতে। কিন্তু তাতে আন্তরিক পরিবেশ আর প্রাপ্য সম্মান ফিরবে কি?

অশোকবাবুর কলম ও কাগজের রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গির আগাপাস্তলা পরিবর্তন এখানে আলোচ্য নয়।

কিন্তু কর্মীদরদী বলে পরিচিত অশোকবাবু যদি জনমানসে এখানেও পরিবর্তিত হয়ে যান, তাহলে দুঃখ পাব।

আজকালকর্মীরা বিচার না পেয়ে সোশ্যাল মিডিয়ায় পোস্ট করছেন, পোস্টার দিতে বাধ্য হচ্ছেন, এটা চরম দুর্ভাগ্যের পরিস্থিতি। আর তাদের সঙ্গে এখনও কথা না বলে অশোকবাবু কাগজে তাদের খাটো করে বিভ্রান্তিকর লেখা দিচ্ছেন; এটা আরও দুঃখের। অশোকবাবু আমাদের চোখে নায়ক ছিলেন। কিন্তু তার উল্টোদিকটা এত বেশি সামনে আসছে কেন?

আমাদের মত অনেক ছোট হাউসকে ত্যাগস্বীকার করে, ভিক্ষে করে চলতে হয়। তবু দর্শক বেড়েই যাচ্ছেন।
কিন্তু যুগে যুগে সরকারি পক্ষে থেকে, সব সুবিধে পেয়ে, একাধিক ব্যবসায়ীর কাছ থেকে যুগে যুগে টাকা পেয়েও কেন বারবার ক্ষতি আর সঙ্কটের গল্প আসে, এটাও রহস্যের।
বড় হাউসে এসব দেখলে আমাদের মত ছোট মঞ্চের তো বুক কাঁপে।

এই কারণেই অনুরোধ, বিকল্প প্যাকেজের পথে গিয়ে কর্মীদের উপর থেকে কোপ সরান।
মাননীয় সত্যমবাবুর মত মানুষ কেন এই ভুলভুলাইয়ায় অপ্রিয় হচ্ছেন?

Previous articleজেলা সভাপতিদের সঙ্গে ভিডিও কনফারেন্স মমতার
Next articleমানসিক অবসাদ কাটাতে ছাত্রছাত্রীদের কাউন্সেলিং শুরু করছে প্রেসিডেন্সি বিশ্ববিদ্যালয়