
সোমবার থেকেই লাগু হয়েছে ‘লকডাউন-৫’ অথবা ‘আনলক-১’৷ নির্দেশিকা অনুসারে এই লকডাউনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা কনটেনমেন্ট জোনগুলির৷ অথচ কেউ জানেনা, কলকাতা শহরের অথবা গোটা রাজ্যের কোন কোন এলাকা কনটেনমেন্ট জোনে আছে৷ কেন এই গোপনীয়তা ? এ তথ্য গোপন রেখে করোনা-যুদ্ধ আরও কঠিন করা হচ্ছে কেন ?

রাজ্য সরকারের ঘোষণা অনুসারে সোমবার, ১ জুন থেকে খুলতে চলেছে কলকাতার ৪৫টি পুরবাজার৷ রাজ্য প্রশাসন জানিয়েছে, শর্তসাপেক্ষে এসব বাজার খোলা থাকবে সকাল ১০টা থেকে বিকেল সাড়ে পাঁচটা পর্যন্ত। তার পরেই নাকি বাজারের বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেওয়া হবে।

অনেকেরই মনে আছে, গত ১৮ মে রাজ্য প্রশাসন এক নির্দেশিকা জারি করে করোনার আক্রান্তের নিরিখে কলকাতাকে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ জোনে ভাগ করছে। এই নির্দেশিকা এখনও বহাল৷ বলা হয়েছিলো,

◾‘এ’ জোন, অর্থাৎ সংক্রমিত জোনে কোনও দোকান খোলা যাবে না।

◾‘বি’ অর্থাৎ বাফার জোনে একটি বাজারের মধ্যে থাকা নন-এসেনশিয়াল দোকানের ২৫ শতাংশ খোলা যাবে।

◾ ‘সি’, অর্থাৎ ক্লিন জোনে খোলা যাবে সব দোকান।
#কয়েকটি_প্রশ্ন_আছে :

(১) কলকাতাকে যে ‘এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ জোনে ভাগ করা হয়েছে, তার তালিকা কোথায় পাওয়া যাবে ? লকডাউনের প্রথমদিকে কলকাতা পুরসভার দেওয়া ‘রেড’, ‘অরেঞ্জ’ এবং ‘গ্রিণ’ জোন এবং ‘কনটেনমেন্ট’ জোনের তালিকা নিয়মিত প্রকাশ করতো কলকাতা পুলিশ৷ কলকাতার নাগরিকরা ওই তালিকা দেখে বুঝতে পারতেন তাঁরা কোন জোনে আছেন, আরও কতখানি সতর্ক থাকতে হবে৷ সে তালিকা প্রকাশ দীর্ঘদিন ধরেই বন্ধ হয়ে গিয়েছে৷
ফলে, সাধারণ নাগরিকদের পক্ষে কিছুতেই জানা সম্ভব নয়, তাঁরা কোন জোনের বাসিন্দা, তাঁদের এলাকা, তাঁদের ঠিকানা ‘কনটেনমেন্ট’ জোনের আওতায় পড়েছে কি’না !

◾সাধারণ মানুষকে এই তথ্য না জানানোর কারন কি?
◾সাধারণ নাগরিকদের এভাবে অন্ধকারে রাখলে করোনা-যুদ্ধে সফলতা দ্রুত আসবে, কোন কোন উর্বর মস্তিষ্ক এমন ভাবছেন ?
◾আমার ওয়ার্ড, আমার রাস্তা বা আমার পাড়া কোন জোনভুক্ত, এটা জানার অধিকার আমার নেই, কে এটা ঠিক করলো ?
◾কেন প্রতিদিন এ’, ‘বি’ এবং ‘সি’ জোন এবং কনটেনমেন্ট’ জোনের তালিকা প্রকাশ করা হবে না?

(২) পুরসভা এখন বলেছে, সোমবার থেকে যে সব পুরবাজার খোলা হচ্ছে, সে সবই ‘ক্লিন জোনে’ রয়েছে৷

◾কোন যাদুবলে বেছে বেছে কলকাতার সমস্ত পুরবাজার এলাকা ‘ক্লিন জোন’ হয়ে গেলো ?
◾প্রশাসন গোটা রাজ্যে সেই যাদু কেন প্রদর্শন করতে পারছে না ?
◾”বাজার খুলে দিতেই হবে”, এই চাপেই কি টেবিলে বসে রাতারাতি এ সব বাজার-এলাকা ‘ক্লিন জোন’ হয়ে গেলো ?
◾কোন কোন বাজার খুলছে সেই তালিকা-ই বা পুরসভা প্রকাশ করছে না কেন ?
◾সাধারণ মানুষ কেন জানতে পারবেন না পুরবাজার আছে কলকাতার এমন কোন ৪৫টি এলাকা ‘ক্লিন জোন’ ?

অযথা এসব রহস্য তৈরি করার পিছনে কারন তো কিছু একটা আছেই৷ প্রশাসনিক কর্তাদের এমন ধারনা হচ্ছে কেন, সেই কারণসমূহ কেউ ধরতেই পারছে না৷

কলকাতার করোনা-পরিস্থিতি জটিল থেকে জটিলতর হচ্ছে৷ করোনা-যুদ্ধের প্রথমদিকের দৃশ্যমান সক্রিয়তা এখন ঘরবন্দি৷ রোজ লাফিয়ে লাফিয়ে শহরে বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা৷ রবিবার, ৩১ মে, ২০২০, রাত ৮টা ১৫ মিনিটে প্রকাশিত সরকারি হিসাব:

◾কলকাতায় আক্রান্ত ২,১৯৭।

◾কলকাতায় মৃত্যু – ১৬৪।

◾ কো-মর্বিডিটির কারণে মৃত্যু – ৫২।
◾ কলকাতায় মোট মৃত্যু – ২১৬ জন৷
◾ রাজ্যে করোনাযুক্ত মৃত্যু- ৩২৫ জন৷
◾কলকাতা বাদ দিয়ে গোটা রাজ্যের সব জেলা মিলিয়ে করোনাযুক্ত কারনে মৃত = ৩২৫ – ২১৬ = ১০৯ জন৷
এই ভয়ঙ্কর পরিস্থিতিতে কলকাতার ১৪৪টি ওয়ার্ডের জোন-বিন্যাস বা কনটেনমেন্ট’ জোনের তালিকা গোপন করে ঠিক কী ধরনের করোনা-যুদ্ধ চলছে ?
করোনা-যুদ্ধের সেই প্রথম দিন থেকেই কেন্দ্র, রাজ্য, পুরসভা সাধারণ মানুষকে গাদা গাদা হোম-টাস্ক দিয়েই চলেছে৷ এটা করতে পারবেন না, সেটা মানতে হবে, ওটা করলেই শাস্তি৷ সব কিছু সাধারণ মানুষকেই যখন করতে হচ্ছে, তখন প্রকৃত চিত্রই বা তাঁরা জানবেন না কেন ? ওই তথ্যের ঘোরাফেরা কেন সীমাবদ্ধ থাকবে বিশেষ বিশেষ ক্ষেত্রে?
প্রকৃত চিত্র জানলে সাধারণ মানুষই তো নিজেরা সুস্থ থাকবেন বলে নিজেদের স্বার্থেই আরও কয়েক ধাপ এগিয়ে আসবেন প্রশাসনের দিকে৷ নিজেরাই আরও সতর্ক হবেন, প্রতিবেশীকে সতর্ক করবেন৷
জানা নেই, এতে প্রশাসনিক কাজে বাধা সৃষ্টি হয় কি’না ?