Saturday, August 23, 2025

“নতুন কিছু পাওয়ার নেই, জীবনটা তো জেলেই কাটবে”, রশিদের গলায় অভিমানের সুর!

Date:

দিনটি ছিল ১৯৯৩ সালের ১৬ মার্চ। ভয়ঙ্কর বিস্ফোরণে ভোররাতে হঠাৎই কেঁপে ওঠে বৌবাজার। উড়ে যায় আস্ত একটি বাড়ি। মৃত্যু হয় ৬৯ জনের। আহত আরও অনেক বেশি। নিমেষে ধ্বংসস্তূপ। যার অংশ ছড়িয়ে ছিটিয়ে ছিল বড় রাস্তার ট্রাম লাইনে। বাতাসে ছিল বারুদের গন্ধ। মৃত্যু-হাহাকার-কান্না। একেবারে লালবাজারের নাকের ডগায় এমন বিস্ফোরণে চমকে ওঠে গোটা শহর। গোটা দেশ।

এই বিস্ফোরণ কাণ্ডের ভয়াবহতা এতটাই ছিল যে,মুহূর্তে অপেক্ষা না করে প্রশাসনিক মহলে জোরদার তদন্ত শুরু হয়। মূল অভিযুক্ত হিসেবে পুলিশ গ্রেফতার করে রশিদ খানকে। একইসঙ্গে নাম জড়িয়ে যায় একাধিক সিপিএম নেতার। এরপর বিচারে টাডা আদালত যাবজ্জীবনের রায় দেয় রশিদের। গ্রেফতারের পর থেকেই জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে বন্দি জীবন কাটাচ্ছে রশিদ। বৌবাজার বিস্ফোরণের সেই ভয়াবহ-অভিশপ্ত স্মৃতি আজও অনেকের মনে টাটকা। দেখতে দেখতে ২৮ বছর ধরে জেলবন্দি। বাকি জীবনটাও কাটাতে হবে জেলে। তবে করোনা আবহে রশিদ খান আপাতত প্যারোলে বি বি গাঙ্গুলি স্ট্রিটের বাড়ির রয়েছে স্ত্রী এবং ছেলেদের সঙ্গেই।

বৌবাজার বিস্ফোরণের কাণ্ডের মূল পাণ্ডা হিসেবে সাজাপ্রাপ্ত সেই রশিদ খানের মুখোমুখি হয়েছিলাম আমরা। তার বাড়িতে গিয়েছিলেন এখন বিশ্ব বাংলা সংবাদের দুই প্রতিনিধি।

দরজায় টোকা মারতেই ভিতর থেকে মহিলা কন্ঠ “কৌন?” কয়েক সেকেন্ডের মধ্যেই অবশ্য বছর ষাটেকের এক মহিলা দরজার ওপার থেকে প্রশ্ন করলেন, “কী ব্যাপার, কাকে চাই?” সংবাদ মাধ্যমের প্রতিনিধি শুনে ভিতরে ডাকলেন। ভাঙাচোরা অগোছালো ঘরের এক প্রান্তে বসেছিলেন সেই রশিদ খান। সামনের টেবিলে ওষুধের বাক্স। আগের ছবির সঙ্গে কোনওভাবে মেলানো যাচ্ছিল না বার্ধক্যে ভগ্নপ্রায় শরীর। চোয়াল বসে গিয়েছে। মুখটা একেবারে অচেনা। সেটাই স্বাভাবিক। বয়স এখন ৭২। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল, বেশ অসুস্থ।

তবে আমাদের প্রতিনিধিদের আপ্যায়ন জানাতে কোনও কসুর করেননি। বার বার একটাই কথা রশিদের মুখে, “আদালত সাজা দেওয়ার আগেই মিডিয়া ট্রায়ালে আমি মানুষের কাছে দোষী হয়ে গিয়েছিলাম। অথচ, এমন শাস্তি আমার প্রাপ্য ছিল না। তোমার এসেছো। বসো। খাওয়া-দাওয়া করো। আমি খুব বেশি কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই। শরীরটা খারাপ। ওষুধগুলো খেয়ে একটু ঘুমবো।”

কিছুক্ষণ চুপ থেকে বললেন, “আসলে কী জান তো, আমার তো আর কিছু পাওয়ার নেই। জীবনটা তো জেলেই কেটে যাবে। তাই পুরনো কথা আর নতুন করে তুলতে চাই না।”

রশিদের গলায় এবার অভিমানের সুর। বললেন, “সেদিন আমার কথা কেউ শোনেনি। এই তখন থেকে জেলে। এখনও জেলে। তবে একটা কথা বলি, জেলে আমাকে সবাই ভালবাসে। আমার ব্যবহারের জন্য ওখানে আমাকে সবাই পছন্দ করে।”

কথার মাঝেই একটা ওষুধ খেয়ে বললেন, “বয়স হয়েছে ৭২। সুগার, প্রস্টেট, নার্ভের সমস্যা রয়েছে। এভাবে আর ক’দিনই বা বাঁচবো আমি।”

সত্যি, খুব অচেনা এই রশিদ খান। কোমরে জোড়া পিস্তল গুঁজে বাম আমলে মধ্য কলকাতার জুয়া-সাট্টা সাম্রাজ্যের বেতাজ বাদশা আজ বড়ই অসহায়। প্রায় তিনদশক জেলের চার দেওয়ালের মধ্যে থেকে মানসিকভাবে অনেকটাই ভেঙে পড়েছেন। এই বয়সে এসে নিজের ছায়াকেও যেন তিনি বিশ্বাস করতে পারছেন না!!!

Related articles

ডুরান্ড ফাইনালে ডায়মন্ডহারবারকে নিয়ে চড়তে পারদ

ডুরান্ড কাপের ফাইনালে মুখোমুখি ডায়মন্ডহারবার এফসি(DHFC) ও নর্থইস্ট ইউনাইটেড(North East United)। আর মাত্র কিছুক্ষণের অপেক্ষা। এরপরই যুবভারতী স্টেডিয়ামে...

ট্রাম্পের ছায়াসঙ্গী একসঙ্গে ভারত-পাকিস্তান-বাংলাদেশে আমেরিকার রাষ্ট্রদূত! নেপথ্য উদ্দেশ্য নিয়ে জল্পনা

নিজের ছায়াসঙ্গীকেই ভারতে রাষ্ট্রদূত করে পাঠালেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প (Donald Trump)। তাঁর এই সিদ্ধান্তের নেপথ্যে কী উদ্দেশ্য...

WB NEET UG 2025-এ ভর্তির সংশোধিত সময়সূচি ঘোষণা, জেনে নিন কবে কাদের ভর্তি

ওয়েস্ট বেঙ্গল নিট ইউজি(WB NEER UG) ২০২৫-এর ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে শীঘ্রই। পশ্চিমবঙ্গ স্বাস্থ্য শিক্ষা (WB Health and...

ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়ার চক্রান্ত চলছে দেশে, এসআইআর নিয়ে তোপ অমর্ত্য সেনের

এসআইআর-র(SIR) নামে ভোটাধিকার কেড়ে নেওয়া যায় না। এই এসআইআর কিছুটা ভালো করার অজুহাতে বড় রকমের ক্ষতি করার চক্রান্ত।...
Exit mobile version