বারাকপুর স্টেশনের সংলগ্ন সুকান্ত সদন প্রেক্ষাগৃহের পাশে সাহিত্যিক বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়ের পরিবার বাস করেন। এই বাড়িতে বিভূতিভূষণের অনেক পান্ডুলিপি ও অন্যান্য স্মৃতিচিহ্ন সংরক্ষিত আছে। গত দুই বছর যাবৎ এই পরিবার এবং এই সব জাতীয় সম্পদ বিপদগ্ৰস্ত।

ব্যারাকপুর পুরসভার নেতৃত্বে এই বাড়ির সংলগ্ন জমিতে গড়ে উঠছে বিরাট শপিং মল। নির্মানের সুবিধের জন্য বিভূতিভূষণের বাড়ির পেছন দিকের পাঁচিল ভেঙে দেওয়া হয়েছে। বাড়ির সে দিকটা সম্পূর্ণ বেআব্রু হয়ে পড়েছে, এবং যে কোনো লোক ঢুকে পড়ার মতো অবস্থা সৃষ্টি হওয়ায় বাড়ির নিরাপত্তা বলে আর কিছু নেই। সে দিকের জল নিকাশি ব্যবস্থা বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যার ফলে সামান্য বৃষ্টিতেই বাড়িতে জল জমে রোগ সৃষ্টি হচ্ছে। আমফান ঝড়ের সময় বাড়িতে প্রায় দেড় ফুট জল জমে লেখকের অনেক স্মৃতিচিহ্ন নষ্ট করেছে।

করোনা লকডাউনের পরবর্তী ধাপে কাজ শুরু হওয়ার পরে কর্মীরা বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়তে শুরু করেছে, এবং গত ১৯ জুন তারিখে বাড়ির ভেতরে অবস্থিত একটি জামরুল গাছের অনেকটা অংশ বিনা অনুমতিতে কেটে ফেলেছে।

আজ (২২ জুন) সকাল থেকে তারা বাড়ির সীমানা ঘেঁষে কম্প্যাক্টিং হ্যামার চালানো শুরু করেছে, যার প্রভাবে বাড়ির ভিত ক্রমাগতঃ কাঁপছে, এবং যে কোনো মুহূর্তে বাড়ি ভেঙে পড়তে পারে বলে বাসিন্দারা আতঙ্কিত। বিভূতিভূষণের পুত্রবধূ শ্রীমতী মিত্রা বন্দ্যোপাধ্যায় একজন বরিষ্ঠ নাগরিক এবং হৃদরোগী। এই অত্যাচারে তাঁর জীবন ও স্বাস্থ্য বিপন্ন।


পুরসভার কাছে বারবার আবেদন করা সত্ত্বেও তারা স্তোকবাক্য ছাড়া কিছুই দেয়নি।অভিযোগ, আজকের নতুন উপদ্রবের কথা চেয়ারম্যান উত্তম দাস -কে জানাতে তিনি স্পষ্ট বলে দেন, যে যা পারে করে নিক, কাজ চলতে থাকবে। তিনি যদিও কাজ শেষ হওয়ার পরে বাড়ি মেরামত করে দেওয়ার আশ্বাস দিয়েছিলেন আগে, প্রশ্ন হল ইতিমধ্যে বাড়ি যদি ভেঙে পড়ে এবং বাসিন্দাদের মৃত্যু হয়, তা হলে ক্ষতিপূরণ কাকে দেওয়া হবে, এবং তাতে কার লাভ হবে। দুর্লভ স্মৃতিচিহ্নগুলি ধ্বংস হয়ে গেলে সেই ক্ষতি পূরণ করাও সম্ভব নয়।

এই অবস্থায় বিভূতিভূষণের পরিবার হতাশা ও সন্ত্রাসের মধ্যে দিন কাটাচ্ছেন।