Thursday, November 6, 2025

নীলু-কালু-ভুলু যে শাস্তি পায় সেই শাস্তি প্রধান শিক্ষকের হতে পারে না! অভিজিৎ ঘোষের কলম

Date:

অভিজিৎ ঘোষ

পশ্চিম মেদিনীপুরের দাসপুরের হাটসবেড়িয়া স্কুল। লকডাউনের মাঝেও সেখানে একদিন ক্লাস নেওয়া হয়েছে দশম শ্রেণির। দিনটা বুধবার। খুব বেশি হলে ক্লাস করেছে ২৬-২৭ জন। আর সে নিয়ে উথাল-পাতাল হচ্ছে শিক্ষামহল, শিক্ষা দফতর। কী কী শাস্তি দেওয়া যায়, সে নিয়ে কত আলোচনা, কত সব মন্তব্য। সব দেখেশুনে মনে হচ্ছে বাজনার চেয়ে খাজনা বেশি।

কেন বলছি? তার আগে প্রথমেই বলে রাখি, স্কুলের প্রধান শিক্ষক বৃন্দাবন ঘটকই যেহেতু শেষ সিদ্ধান্ত নেওয়ার মালিক, তাই তিনি মহামারি আইন ভেঙেছেন, এটা মানতেই হবে। কিন্তু এখানে কিছু প্রশ্ন উঠছে, এবং সেই স্বর জোরালো হচ্ছে। কী সেই যুক্তি?

এক. প্রধান শিক্ষক তো একা সিদ্ধান্ত নেননি। স্বেচ্ছ্বাচারী ভঙ্গিতে ক্লাস করতে হবেই এমন ফরমান তিনি দেননি। একদিকে অভিভাবকদের অনুরোধ ছিল, স্কুলের গভর্নিং বডির কর্তার ‘হ্যাঁ’ সূচক সম্মতি ছিল এবং শিক্ষকরাও গররাজি ছিলেন, এমন তথ্য কিন্তু কোথাও নেই। তাহলে প্রশ্ন, প্রধান শিক্ষক যদি লকডাউন আইন ভাঙায় দোষী হন, তাহলে গভর্নিং বডির কর্তা, অ্যাসিস্ট্যান্ট টিচারদের শাস্তির কথা কেন এড়িয়ে গিয়ে প্রধান শিক্ষককে বলির বখরা করা হচ্ছে? প্রধান শিক্ষককে সাসপেন্ড কিংবা ইনক্রিমেন্ট বন্ধের নির্দেশ যদি শাস্তি হিসাবে দেওয়া হয়, তাহলে গভর্নিং বডির কর্তা ও শিক্ষকরা কোন আইনে বাদ যান?

দুই. সব আইন ভাঙার শাস্তি এক হতে পারে না। অসুস্থ রোগীকে গাড়িতে চাপিয়ে হাসপাতালে নিয়ে যাওয়ার সময় সিগন্যাল ভাঙলে যে জরিমানার সম্ভাবনা থাকে, সদ্য ১৮-য় পা দেওয়া তরুণরা ব্যাপক গতিতে সিগন্যাল উপেক্ষা করলে কী একই শাস্তি হবে? বৃন্দাবনবাবুর কোনও অসৎ উদ্দেশ্য ছিল না। তিনি সকলের অনুরোধ রাখতেই এবং টেনের পড়ুয়াদের কথা মাথায় রেখেই এই ক্লাস নিয়েছিলেন। শুধু তাই নয় ছাত্রীদের সামাজিক দূরত্ব মেনে বসা, মাস্ক পরা সব কিছুই ছিল আইন মোতাবেক। অন্তত ভিডিও তো তাই বলছে। তাহলে একজন শিক্ষক আর লকডাউনে রাস্তায় বেরনো ফোড়েদের একই শাস্তির সম্ভাবনা হয় কী করে?

৩. পড়ুয়াদের মিড ডে মিল দিতে লাইন দিয়ে অভিভাবকরা আসেন স্কুলে। সেক্ষেত্রে আইন ভাঙা হয় না! কলকাতার স্কুলগুলির কথা ছাড়ুন। গ্রাম বাংলার অধিকাংশ স্কুলে গিয়ে দেখুন, মিড ডে মিল নিতে বহু পড়ুয়াও আসছে। শুধু কি তাই? রাস্তায় মিছিল হচ্ছে। মৃতদেহ নিয়ে মিছিল হচ্ছে। পার্টি অফিসে লোকজন। বাজারে চুলোয় যাচ্ছে সামাজিক দূরত্ব। গড়িয়াহাট, যদুবাবু, বাগুইআটি বা মানিকতলা বাজারে একবার ঢুকুন আইনের রক্ষকরা। তাহলে কিন্তু বাজারটাই বন্ধ করে দিতে হবে। তাহলে বৃন্দাবন ঘটককে কেন টার্গেট করা হবে? শিক্ষক হলে বেশ নরম নরম মাটি হয়, তাই না! এই লকডাউনে আন্দোলনেও নামার সুযোগ নেই। শিক্ষিত মানুষ, জেনেই একটা ভুল করে ফেলেছেন। ফলে প্রকাশ্যে এ নিয়ে মুখ খুলতেও পারবেন না। তাই তাঁকে শাস্তি দিয়ে দেখাও আমরা কত নিয়মতান্ত্রিক। শিক্ষককেও ছাড়ি না! কত কড়া! কিন্তু ঠগ বাছতে তো গাঁ উজাড় হয়ে যাবে!

এই মকারি বা হাস্যাস্পদ ব্যাপার বন্ধ হোক। মাননীয় মধ্যশিক্ষা পর্ষদ সভাপতি কল্যাণময় গঙ্গোপাধ্যায়, বৃন্দাবন ঘটক কড়া শাস্তি পেলে শিক্ষা ক্ষেত্রে নেতিবাচক উদাহরণ তৈরি হবে। প্রধান শিক্ষককে সতর্ক করে ছেড়ে দেওয়াটাই যথাযথ হবে। আপনার শিক্ষকরা তো প্রতিবার মাধ্যমিকে খাতা দেখায় ভুল করেন। সেই কারণেই তো রিভিউ প্রসেস এসেছে। রিভিউতে নম্বর বাড়ে অনেক ক্ষেত্রেই। সেই সব খাতা যে শিক্ষকরা দেখেছিলেন, তাদেরও কি সাসপেন্ড বা ইনক্রিমেন্ট বন্ধ করার নিদান দেন!

মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী, বৃন্দাবন ঘটক পাড়ার নীলু, বিলু, কালু হতে পারেন না! সরকারি নির্দেশ লঙ্ঘনে তাঁকে আর পাঁচজনের মতো শাস্তি দেওয়া যায় না। অন্তত নৈতিকভাবে ঠিক হবে না। শিক্ষামহলে অন্য বার্তা যাবে। শিক্ষকের সম্মান আপাতত আপনার হাতে।

Related articles

হরিয়ানায় ভোটার জালিয়াতি: প্রকাশ্যে এসে ব্রাজিলিয়ান ‘মডেল’ বললেন, ভারতেই যাইনি কোনওদিন

হরিয়ানায় ভোটার জালিয়াতিতে যার ছবি ব্যবহার করা হয়েছিল বলে অভিযোগ, সেই ব্রাজিলিয়ান মডেলের (Brazilian  Model) নাম 'ল্যারিসা'। এবার...

লালবাজারে কাছে গাড়ির টুলসের গোডাউনে আগুন, ঘটনাস্থলে দমকলের ৫ ইঞ্জিন

শহর কলকাতায় ফের অগ্নিকাণ্ড (Fire breaks Out in Kolkata)। বৃহস্পতিবার সকালে লালবাজারের কাছে ২১ নম্বর আর এন মুখার্জি...

সকালে শীতের আমেজ, রাতে পারদ পতনের সম্ভাবনা!

শীতের (Winter) অফিশিয়াল ঘোষণা হোক বা না হোক নভেম্বরের গোড়া থেকেই সকাল রাতে প্রকৃতির হিমেল ছোঁয়ায় শিহরিত হচ্ছে...

তারাসুন্দরীর মঞ্চে ম্যাজিক দেখালেন গার্গী

কুণাল ঘোষ বাংলার নাট্যমঞ্চে ইতিহাসের পাতাকে পুনরুজ্জীবিত করেই এক নতুন ইতিহাস লেখা হল। লিখলেন অভিনেত্রী গার্গী রায়চৌধুরী (Gargi Raychowdhuri),...
Exit mobile version