হাইওয়ের ওপর দিয়ে ছুটে চলেছে ১৪ চাকার ট্রাক। এক রাজ্য থেকে অন্য রাজ্যে, এক শহর থেকে অন্য শহরে । রাতের অন্ধকার, ঝড়-বৃষ্টি কোনও বিপদকে তোয়াক্কা না করে এগিয়ে চলেছে। চালকের আসনে স্টিয়ারিং হাতে মধ্য বয়স্ক মহিলা যোগিতা !

সংসারের তাগিদে এই পেশাতে এলেও লেখাপড়াতেও পিছিয়ে নেই তিনি। আইনের ডিগ্রি ছিল তাঁর। কিন্তু প্র্যাকটিস করার প্রয়োজন পড়েনি কখনও। সংসারেই মন দিয়েছিলেন তিনি। তখন কাজ শুরুও করেছিলেন আইনজীবী হিসেবে। কিন্তু রোজগার হত প্রয়োজনের তুলনায় কম। সন্তানদের লেখাপড়া শেখানো মাথা গোঁজার ঠাঁই এইসব তাগিদেই হাতে ধরলেন ট্রাকে স্টিয়ারিং । কুড়ি বছর ধরে একইভাবে ট্রাক চালিয়ে দেশের কোণা-কোণা চষছেন তিনি। রোজগার করছেন যথেষ্ট। ছেলেমেয়েরা এখন বড় হয়েছে। কিন্তু ট্রাকচালনার জগতে আজও একই রকম দাপটের সঙ্গে রাজত্ব করছেন দেশের প্রথম ও একমাত্র মহিলা ট্রাকচালক, যোগিতা রঘুবংশী। শুধু তা-ই নয়। কমার্সে স্নাতক হওয়ার পরে আইনের ডিগ্রি সঙ্গে নিয়ে, দেশের সব চেয়ে শিক্ষিত ট্রাকচালকও তিনি।

মহারাষ্ট্রের নন্দুরবারে তাঁর জন্ম। নিজের পছন্দমতোই পড়াশোনা করেছিলেন তিনি। আইন পাশ করেছিলেন। কিন্তু কাজ শুরু করার আগেই ১৯৯১ সালে তাঁর বিয়ে হয়। পাত্র ভোপালের হাইকোর্টের আইনজীবী। কিন্তু বিয়ের কয়েক বছর পরেই যোগিতা জেনেছিলেন, নিজের পেশা সম্পর্কে মিথ্যে কথা বলেছেন তাঁর স্বামী। তিনি মোটেও হাইকোর্টের আইনজীবী নন। তবে তত দিনে যোগিতার কোলে এসে গেছে দু’টি সন্তান। মেয়ে যশিকা এবং ছেলে যশ্বিন।
এই ঘটনা জানার কিছু বছর পরেই পথ দুর্ঘটনায় মারা যান তাঁর স্বামী। দুই ছোটো সন্তানকে নিয়ে যোগিতা তখন নেমে পড়েন যুদ্ধের ময়দানে।

নিজে মেয়ে বলে নিজেকে কোনও ভাবেই দুর্বল বলে মানতে নারাজ যোগিতা। ট্রাক চালানোর পাশাপাশি, অবসর সময়ে তাই সেলাইও করেন তিনি। তৈরি করেন নিজের পোশাক। এই পেশা নিয়ে যোগিতার কিছু অনুযোগও রয়েছে। ট্রাক ওভারলোডিংয়ের তিনি ঘোরতর বিরোধী। এতে বহু দুর্ঘটনা ঘটে বলে জানান তিনি। দুই, যোগিতা চান ট্রাক চালকেরা নেশা করে রোজগারের টাকা না উড়িয়ে, নিজেদের জীবন শুধরে নিন। চান এই পেশার প্রতি একটু সন্মান।



২০১৩ সালে মাহিন্দ্রার তরফে তাঁকে ‘মাহিন্দ্রা ট্রান্সপোর্ট এক্সেলেন্স’ পুরস্কার দেওয়া হয়। সঙ্গে দেওয়া হয় তাঁর নিজের একটি ট্রাক, সেই নিজস্ব ট্রাক নিয়ে যোগিতা এখন সারা ভারত চষে বেড়ান।

