Thursday, August 28, 2025

বিশ্বাসভঙ্গের অভিযোগ তুলে আজ ভোট প্রচারে নামছেন বিমল গুরুং, বিপাকে বিজেপি, কিশোর সাহার কলম

Date:

 

কিশোর সাহা

এক দশকের বেশি সময়ের সঙ্গী ভরা জনসভায় আপনাকে বিশ্বাসঘাতক বলে লাগাতার প্রচারে নামলে কী করবেন! আপনার সঙ্গী তিন বছর পালিয়ে বেড়ালেও তাঁকে ঘরে ফেরানোর কোনও ব্যবস্থাই কেন করতে পারেননি! অথচ আপনি নিজের আখের গুছিয়ে গিয়েছেন প্রতিটি ভোটেই।
এমন প্রশ্নে আপনি যতটা বিব্রত হবেন, ঠিক ততটাই বিপাকে পড়েছে বিজেপি। কারণ, আজ, রবিবার শিলিগুড়িতে ভিড়ে ঠাসা জনসভা থেকে বিজেপির বিরুদ্ধে বিশ্বাসভঙ্গ, প্রতারণার অভিযোগ তুলে আগামী বিধানসভা ভোটের প্রচার শুরু করবেন। অন্তত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুংপন্থীরা এমনই দাবি করছেন।
এতেই বিজেপির ঘুম ছুটে গিয়েছে। কারণ, গত লোকসভা ভোটে বিজেপি দার্জিলিং লোকসভা আসনে রেকর্ড ভোটে জিতেছিল। উত্তরবঙ্গের নেপালি ভাষী অধ্যুষিত এলাকাতেওএ বিজেপির জয়জয়াকার ছিল। কামতাপুর, গ্রেটার কোচবিহারের আন্দোলনকারীদের জনসংখ্যা যে সব এলাকায় উল্লেখযোগ্য সংখ্যায় রয়েছে, সেখানেও ভাল ফল করেছিল বিজেপি। মোদ্দা হিসেব হল, গত লোকসভায় বিজেপি উত্তরবঙ্গের সাত-সাতটি লোকসভা আসন দখল করেছিল। এবার বিমল গুরুংরা সেই হিসেব উল্টে দিতে আজ থেকে কোমর বেঁধে নামছেন। তার প্রভাব পাহাড়-তরাই-ডুয়ার্স তো বটেই, গোটা উত্তরবঙ্গেই যে পড়বে তা নিয়ে রাজনৈতিক মহলের সন্দেহ নেই।

এমন পোস্টারে ছেয়েছে ডুয়ার্স, তরাই ও পাহাড়ের পথঘাট

মোর্চার অন্দরমহলের খবর হল, বিমল গুরুং সভায় গোড়া থেকেই প্রেক্ষাপট বোঝানোর চেষ্টা করবেন। কেন তিনি এতদিন বিজেপির আশ্রয়ে থেকেও এখন তৃণমূলের শিবিরে যোগ দিয়েছেন। মোর্চার দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, গুরুং প্রথমে যশোবন্ত সিংকে জেতানোর পরে যে পাহাড়ের দাবি মানার ব্যাপারে কোনও কাজ এগোয়নি সেটা তুলে ধরবেন। এর পরে সুরিন্দর সিং আলুওয়ালিয়াকে জেতানোর পরে তিনি মন্ত্রী হলেও সংসদে পাহাড়ের মানুষের দাবি নিয়ে কোনও কাজই কেন এগোতে পারেননি সেই প্রশ্ন তুলবেন গুরুং। তার পরেই মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় মুখ্যমন্ত্রী হওয়ার পরে প্রতিশ্রুতি মতো ডিজিএইচসি ভেঙে গোর্খাল্যান্ড শব্দটি রেখে টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন গড়ার দাবি মেনে নিয়েছেন তা নিয়ে পাহাড় ও সমতলের নেপালিভাষীদের মধ্যে তুলে ধরতে চান তাঁরা।
কিন্তু, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের পাহাড়ে থাকাকালীন অগ্নিগর্ভ আন্দোলনের সময়ে পালিয়ে বিজেপির আশ্রয়ে এতদিন থাকার পরেও কেন তৃণমূলে সামিল হলেন! সেই প্রশ্নেও বিশদে ব্যাখ্যা দিতে গুরুং তৈরি বলে সূত্র জানাচ্ছে। সূত্রটির দাবি, সভায় গুরুং স্পষ্টাস্পষ্টি জানিয়ে দেবেন, প্রায় সাড়ে তিন বছর ধরে দিল্লিতে নানা জনের কাছে ছোটাছুটি করে স্রেফ আশ্বাস মিলেছে। কিন্তু, তাঁকে পাহাড়ে দূরের কথা, শিলিগুড়িতে ফেরানোর জন্য বিজেপির তরফে কোনও সদর্থক পদক্ষেপ হয়নি। গুরুং ঘনিষ্ঠ সহচর রোশন জানান, তাঁরা নিয়মিত বিজেপির কেন্দ্রীয় স্তরের নেতাদের দুয়ারে ঘোরাঘুরি করেও দার্জিলিং পাহাড় নিয়ে একটা ত্রিপাক্ষিক বৈঠকের বন্দোবস্ত করাতে পারেননি। একবার তো বৈঠক ডেকেও তা পিছিয়ে দিয়েছে কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রক। তাই রাজ্যকে ছাড়া যে পাহাড় সমস্যার সমাধান এগোবে না সেটা জানিয়ে আগামী বিধানসবা ভোটে বিজেপিকে সবক শেখানো হবে বলে গুরুং ঘনিষ্ঠরা দাবি করেছেন।

রবিবার সকাল থেকেই ভিড় শিলিগুড়ির গান্ধী ময়দানে

বিজেপির উত্তরবঙ্গের নেতাদের অনেকে তো বটেই, প্রদেশ নেতাদের একাংশও বুঝতে পারছেন, গুরুংরা অল আউট বিরোধিতায় নামলে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে কী হতে পারে! কারণ, অতীতে বিনয় তামাং-অনীত থাপারা বিরোধিতা করায় বিজেপির রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষকে পাহাড় সফর প্রায় অসম্পূর্ণ রেখে নেমে পড়তে হয়েছিল। হেনস্থার ঘটনাও ঘটেছিল। কদিন আগে আলিপুরদুয়ারের দলসিংপাড়ায় ফের বিজেপির রাজ্য সভাপতির সফরে কালো পতাকা দেখিয়ে গাড়িতে হামলারহ অভিযোগ রয়েছে। ফলে, গুরুংরা তঁদের ক্ষোভ-বিক্ষোভ পুষিয়ে নিতে যে বিজেপিকে প্রতি পদে বেগ দিতে মরিয়া সেটা অনেকেই বুঝছেন। তাই বিজেপির উত্তরবঙ্গের কোনও নেতা এখন গুরুংদের কড়া সমালোচনার রাস্তায় যাচ্ছেন না। বিজেপির এক রাজ্য কমিটির সদস্য জানান, আপাতত কাউকেই পাহাড়ের কোনও নেতার বিরুদ্ধে মুখ খুলতে না করা হয়েছে। শুধু তই নয়, বিজেপির দার্জিলিঙের সাংসদ তো এক ধাপ এগিয়ে গুরুংদের সঙ্গে নিয়মিত যোগাযোগ আছে বলে দাবি করে চলেছেন।
এই অবস্থায়, আজ বিমল গুরুং শিলিগুড়ির গান্ধী ময়দানে যে জনজোয়ার হবে বলে দাবি করছেন তা কতটা হবে সেটাও দেখার বিষয়। রাজনৈতিক পর্যবেক্ষকরা অনেকেই মনে করেন, যদি সত্যি জনজোয়ার হয় তা হলে আগামী বিধানসভা ভোটের প্রচারের প্রথম পর্বেই উত্তরবঙ্গে বিজেপির পালের বাতাস কেড়ে নিয়ে অনেকটাই এগোবে তৃণমূল।

Related articles

সাত লুকের ‘বহুরূপ’ সোহমের, চ্যালেঞ্জ নিয়ে চমকে দিলেন অভিনেতা

যা কখনও হয়নি তা এখন হবে, এবার হবে। সেলিব্রেটিদের রিল - রিয়েলের আলাদা রূপ আর লুক নিয়ে কম...

উন্মুক্ত শৌচমুক্ত ৯৪ পুরসভা, স্বচ্ছতার শংসাপত্র বাংলাকে

শহরাঞ্চলে আর খোলা শৌচের দৃশ্য নেই। পুরসভাগুলির উদ্যোগ এবং পুর দফতরের তদারকিতে উন্মুক্ত শৌচমুক্ত হয়েছে কলকাতা সহ রাজ্যের...

ফাঁকা কেন্দ্রগুলিতে দ্রুত ইআরও–এইআরও নিয়োগের নির্দেশ কমিশনের 

ফাঁকা পড়ে থাকা একাধিক বিধানসভা কেন্দ্রে দ্রুত ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (ইআরও) এবং অ্যাসিসটেন্ট ইলেক্টোরাল রেজিস্ট্রেশন আধিকারিক (এইআরও) নিয়োগের...

নথিভুক্ত অথচ নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে তলব করল কমিশন 

নির্বাচন কমিশনের নির্দেশে ফের সক্রিয় হল রাজ্যের মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের দফতর। নথিভুক্ত হলেও কার্যত নিষ্ক্রিয় রাজনৈতিক দলগুলিকে শুনানিতে...
Exit mobile version