Sunday, November 16, 2025

বিজেপিতে যোগ দেওয়ার পর টানা প্রায় দেড় বছর ধরে রাজনৈতিক শীতঘুমে চলে গেলেও তৃণমূলের প্রাক্তন মেয়র ও মন্ত্রী শোভন চট্টোপাধ্যায়কে (sovan chatterjee) কেন এখনও এতটা রেয়াত করছে বিজেপি (bjp)? সাধারণভাবে এতে অবাক লাগারই কথা যে, বিজেপির মত তথাকথিত শৃঙ্খলাবদ্ধ দল তৃণমূল (tmc) থেকে আসা এক নেতাকে তোয়াজ করতে এত পরিশ্রম করে চলেছে! যে মোদি-শাহ-নাড্ডার দল এই মুহূর্তে দেশের সবচেয়ে বৃহৎ ক্ষমতাধর রাজনৈতিক শক্তি, তারাই এরাজ্যে এরকম চক্ষুলজ্জাহীন দেউলিয়াপনা দেখাচ্ছে কেন? বিশেষত, শোভন চট্টোপাধ্যায়ের মত দলবদলু নব্য বিজেপি নেতার যা ভাবমূর্তি, তা গেরুয়া শিবিরের কাছেও খুব যে উজ্জ্বল, এমনও নয়। শোভন চট্টোপাধ্যায়ই এই কলকাতা তথা বঙ্গের একমাত্র মেয়র, যাকে সাংবাদিকের স্টিং অপারেশনে কলকাতা পুরসভার অ্যান্টিচেম্বারে বসে তোয়ালে মুড়ে ঘুষের টাকা নিতে দেখেছে বঙ্গবাসী। এছাড়া তাঁর বর্তমান জীবনচর্যাকে মেঠো হাসিঠাট্টার বিষয় করে তুলেছেন তিনি নিজেই। এরকম এক রাজনৈতিক ব্যক্তি, যিনি বিজেপিতে প্রায় দেড় বছর আগে যোগ দিয়েও সেই দলের একটি কর্মসূচিতেও এখনও পর্যন্ত সামিল হননি, উল্টে দলকেই বিভিন্নভাবে বেকায়দায় ফেলেছেন, নানা অছিলায় দলের কর্মসূচি এড়িয়ে যেতে ছেঁদো যুক্তির অবতারণা করেছেন এবং সর্বশেষ তাঁকে কেন্দ্র করে আয়োজিত মিছিলেই অনুপস্থিত থেকে দলকে প্রকাশ্যে বেইজ্জত করেছেন, তেমন নেতাকে তৈলমর্দনের পিছনে বিজেপির কী উদ্দেশ্য? বিজেপি কি শোভনকে ভালোবেসে তাঁর যাবতীয় বায়নাক্কা হজম করছে, নাকি তৈলমর্দনের আসল কারণ বৃহত্তর রাজনৈতিক স্বার্থ পূরণের তাগিদ?

লোকসভা ভোটের পর থেকেই বিজেপি ধারাবাহিকভাবে প্রচার করে আসছে এবার পালাবদল অবশ্যম্ভাবী। দলের কেন্দ্রীয় নেতৃত্ব, বিশেষত অমিত শাহ প্রকাশ্যে একাধিকবার বলেছেন, অন্য রাজ্যে জিতলেও বাংলা ও কেরল হাতে না এলে পূর্ণ সাফল্য অধরা থাকবে। কেরলে আপাতত গেরুয়া শিবিরের রাজ্যপাট পাওয়ার কোনও সম্ভাবনা নেই। কিন্তু কিছুটা সম্ভাবনার ক্ষেত্র তৈরি করা গিয়েছে বঙ্গে। কংগ্রেস ও বামেদের পুরোপুরি অপ্রসাঙ্গিক করে দিয়ে বিজেপিই এখন এরাজ্যে প্রধান বিরোধী শক্তি। কিন্তু বাংলায় ক্ষমতায় আসতে হলে শেষ পর্যন্ত বিজেপিকে যে পরিমাণ আসন পেতে হবে, এই মুহূর্তে সেই পরিস্থিতি যে নেই তা গেরুয়া শিবিরের সাংগঠনিক গুরুরাও জানেন। জয়ের লক্ষ্যে বিরাট প্রচারের বাতাবরণ তৈরির চেষ্টা যাই হোক, বাস্তবের অঙ্কটা তার সঙ্গে মিলছে না। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ সমীক্ষার হিসেব বাদ দিলেও গেরুয়া শিবিরের নিজেদের করা সমীক্ষাতেই এখনও জয়ের নিশ্চয়তা উঠে আসেনি। আর সেটা বিজেপি জানে বলেই তৃণমূল ভাঙানো বা দলবদলুদের রাজার সম্মান দিতে বাধ্য হচ্ছে তারা। কারণটা স্রেফ রাজনৈতিক স্বার্থ। তৃণমূলের অভ্যন্তরীণ কোন্দল আর সুবিধাবাদী কিছু নেতার দলত্যাগ সেজন্য তাদের বড় পুঁজি। বিভিন্ন জেলায় এই ছকে কাজ শুরু হলেও দক্ষিণবঙ্গের দুটি গুরুত্বপূর্ণ জেলা কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণায় এখনও দাঁত ফোটাতে পারেনি বিজেপি। তারাও জানে কলকাতা ও দক্ষিণ ২৪ পরগণা থেকে বড় সংখ্যায় আসনপ্রাপ্তি না হলে বিধানসভা জয়ের স্বপ্ন এবার অধরাই থেকে যাবে। আর এই সাংগঠনিক ঘাটতি থেকেই শোভন চট্টোপাধ্যায়কে মাঠে নামাতে এতটা মরিয়া কেন্দ্রীয় বিজেপি। এই দুই জেলার আদি বিজেপি নেতাদের উপর কেন্দ্রীয় নেতৃত্বের ভরসা নেই। গত লোকসভা ভোটেও এই নেতাদের সাংগঠনিক দৌড় বোঝা গিয়েছে। তাই বিধানসভা ভোটের আগে তৃণমূলত্যাগী শোভনকেই ‘সোনার ডিম পাড়া হাঁস’ ঠাওরেছে গেরুয়া শিবির। নিজেদের যাবতীয় মান-অপমান বিসর্জন দিয়ে শোভনকে মাঠে নামানোই তাদের একমাত্র লক্ষ্য। এই দুই জেলায় তৃণমূলের অটুট সাম্রাজ্যে দাঁত ফোটাতে না পারলে সব হিসেব বানচাল হয়ে যাওয়ার ভয় পাচ্ছেন বিজেপি নেতারা। এই কাজে শোভনই বিজেপির তুরুপের তাস।

Related articles

কাপড়ের ব্যবসা করে জীবন কাটাচ্ছেন ধর্ষণের দায়ে জেল খাটা বলিউড নায়ক!

বলিউডের (Bollywood) একসময়ের নামকরা হিরো এখন রিয়েল লাইফে জিরো। 'গ্যাংস্টার'-এর মতো সুপারহিট সিনেমায় অভিনয়ের পর ধর্ষণের দায়ে সাত...

ডিসেম্বরেই সম্পন্ন হবে নিয়োগ প্রক্রিয়া! এসএসসির তালিকা প্রকাশ হতেই জানালেন শিক্ষামন্ত্রী

কারা ডাক পেলেন একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির ইন্টারভিউ তালিকায়, এবার সেই নাম প্রকাশ করল এসএসসি। শনিবার ২০ হাজার নামের এক...

চলতি মাসেই কাজ শেষের লক্ষ্য! এসআইআর ফর্ম সংগ্রহে কড়া নির্দেশ মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিকের

রাজ্যের সমস্ত ভোটদাতার কাছ থেকে এসআইআর ফর্ম সংগ্রহের কাজে আরও গতি আনতে নির্দেশ দিলেন মুখ্য নির্বাচনী আধিকারিক মনোজ...

পাঁচ দফা দাবিতে শিলিগুড়িতে বাংলা পক্ষের মহামিছিলে জনজোয়ার

পাঁচ দফা দাবিকে সামনে রেখে শনিবার শিলিগুড়িতে অনুষ্ঠিত হল বাংলা পক্ষের মহামিছিল। বাঙালি জাতীয়তাবাদী এই সংগঠনের ডাকে হাজার...
Exit mobile version