Monday, August 25, 2025

জীবন বদলে দেওয়া স্বামীজীকে ‘বাবা’ বলে ডাকতেন বিখ্যাত ফরাসি গায়িকা কাল্ভে

Date:

Share post:

স্বামী বিবেকানন্দ(Swami Vivekananda)। এ নাম শুধু ভারতবর্ষ(India) নয় সীমান্তের কাঁটাতার পেরিয়ে গোটা বিশ্বে তিনি এক মহান সন্ন্যাসী। সমস্ত সীমা অতিক্রম করে কট্টরপন্থার বাইরে বেরিয়ে হিন্দু ধর্মকে তিনি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন উদারতার অন্যতম নিদর্শন হিসেবে। দেশ তো বটেই পৃথিবীর বহু মানুষ মুগ্ধ হয়েছিল তাঁর জ্ঞান-দর্শনে। মাত্র ৩৯ বছরের জীবনে গোটা বিশ্ব মাঝে তিনি জ্বালিয়েছেন জ্ঞানের আলো। সেই আলোয় আলোকিত হতে তাঁর কাছে দেশ-বিদেশ থেকে ছুটে আসতেন বহু মানুষ। তেমনি একজন ছিলেন তৎকালীন ফরাসি গায়িকা মাদাম এমা কাল্ভে(madame emma calve)।

সালটা ১৮৯৪ সালের মার্চ মাস‌। খ্যাতির সর্বোচ্চ শিখরে থাকা এমা কাল্ভে একটি মেট্রোপলিটন অপেরা কোম্পানির সঙ্গে শিকাগো এসেছিলেন। খ্যাতি ছিল ঠিকই কিন্তু তাঁর বাস্তবিক জীবন ছিল পুরোমাত্রায় বিশৃংখল। অত্যন্ত বদমেজাজি, একগুঁয়ে এবং ভোগী ক্লাভের জীবনে শান্তি ছিল না। স্বামী বিচ্ছিন্ন এই গায়িকার জীবনে ঘটে যায় আরও একটি দুর্যোগ। শিকাগোতে আগুনে পুড়ে মৃত্যু হয় তার একমাত্র কন্যার। এরপর আত্মহত্যাপ্রবণ হয়ে পড়েন কাল্ভে। এই সময় শিকাগোতে ছিলেন স্বামীজি। কাল্ভের এক বন্ধু সেই সময় কাল্ভেকে স্বামী বিবেকানন্দের কাছে নিয়ে যেতে চাইলে তিনি যেতে রাজি হননি। বরং চারবার আত্মহত্যার চেষ্টা করে বিফল হন। এরপর দৈবাৎ তাঁর মতিভ্রম ঘটে একদিন ভোরে স্বামীজি যেখানে ছিলেন সেই বাড়িতে এসে উপস্থিত হন তিনি। ডাক আসে তাঁর।

আরও পড়ুন:‘আয়ুষ্মান’ নয়, ‘স্বাস্থ্যসাথী’-তেই আস্থা দিলীপ ঘোষের পরিবারের

যে ঘরে স্বামীজি বসে ধ্যান করছিলেন সেখানে প্রবেশ করেন তিনি। নিশ্চুপ এক প্রশান্তির পরিবেশ তখন সেই ঘরে। কিছুক্ষণ পর চোখ না তুলেই স্বামীজি বললেন, ‘বাছা, কী ঝোড়ো হাওয়াই না তুমি নিয়ে এলে। শান্ত হও।’ তারপর অতি শান্তস্বরে মাদামের জীবনের গোপন জটিলতা, উদ্বেগ সম্বন্ধে বহু কথা বলতে লাগলেন, যে সব কথা মাদামের ঘনিষ্টতম বন্ধুরাও কোনওদিন জানত না।’ কাল্ভের কাছে তখন যা ঘটছে তা সবটাই অলৌকিক। রীতিমত অবাক হয়ে তিনি প্রশ্ন করে বসেন, ‘আপনি এত কিছু জানলেন কি করে? কে আপনাকে এত সব বলেছে? স্বামীজি মৃদু হেসে তাঁর দিকে তাকালেন, যেন ছোট্ট শিশুর মত প্রশ্ন করেছে সে। তারপর বলেন, ‘কেউ আমাকে কিছু বলেনি। আমি খোলা বইয়ের মত তোমার ভেতরটা পড়তে পারি।’ স্বামীজি তাকে বলেছিলেন, ‘চুপ করে বসে শুধু দুঃখের কথা ভেবোনা। তোমার আধ্যাত্মিক স্বাস্থ্যের জন্য এটা দরকার। তোমার শিল্পকলার জন্যও।’

সেদিন স্বামীজীর কথায়, তাঁর পরামর্শে, তাঁর ব্যক্তিত্বে মুগ্ধ হয়ে বিদায় নিয়েছিলেন মাদাম এমা কাল্ভে। পরবর্তীকালে স্বামীজীকে তিনি সম্বোধন করতেন ‘মঁ পেরে’ বলে। ফরাসি এই শব্দের বাংলা অর্থ আমার পিতা। এরপর থেকে স্বামীজীর সুস্থ হয়ে ওঠেন কাল্ভে। পরে স্বামীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করতে ভারতের মাটিতেও পা রাখেন তিনি।

Advt

spot_img

Related articles

কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি: দু-মলাটে বাংলার দুর্গোৎসবের ৪৩৪ বছরের ইতিহাস

রবিবাসরীয় সন্ধেয় গড়িয়াহাটের একটি ব্যাঙ্কয়েটে আড্ডার আবহে প্রকাশিত হল সাংবাদিক-লেখক সম্রাট চট্টোপাধ্যায়ের বই 'কলকাতার সর্বজনীন পুজো ডিরেক্টারি'। উপস্থিত...

তৃণমূল–সমাজবাদী পার্টির পথে এবার আম আদমি পার্টি! জেপিসিতে থাকছে না আপও 

সংবিধান সংশোধনী বিল খতিয়ে দেখতে গঠিত যৌথ সংসদীয় কমিটি (জেপিসি) থেকে দূরে থাকার সিদ্ধান্ত নিল আম আদমি পার্টি।...

মোদির বিরুদ্ধে সরব! হিটলারি কোপে লাদাখের সোনম ওয়াংচু

দফা এক দাবি এক। লাদাখের জন্য একই দাবিতে আজও অনড় সমাজকর্মী সোনম ওয়াংচু (Sonam Wangchuk)। লাদাখের জমি, যা...

শান্তিপুরে মহিলা স্বয়ম্ভর গোষ্ঠীর ভোটে গোহারা বিজেপি! ২৬-৪-এ জয়ী তৃণমূল 

এসআইআর ইস্যু নিয়ে রাজ্যে বিজেপির মাতামাতির মধ্যে নদিয়ার শান্তিপুরে মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর ক্লাস্টার কমিটির নির্বাচনে বড় সাফল্য পেল...