Monday, August 25, 2025

জীবন ফেরানোর কারিগর অনিরুদ্ধর অকালে চলে যাওয়া মানতে পারছেন না কেউ

Date:

Share post:

চন্দন বন্দ্যোপাধ্যায়

নিয়তির কাছে মানুষ যে কত অসহায় তা জীবন দিয়ে বুঝিয়ে দিয়ে গেলেন ধাপা মাঠপুকুরের ২৮ বছরের তরতাজা যুবক অনিরুদ্ধ জানা ।
পাড়ার এই অকুতোভয় ছেলেটা বরাবরই যে কোনও বিপদে ঝাঁপিয়ে পড়তেন। বহুবার এর সাক্ষী থেকেছেন প্রতিবেশীরা।
আজও তারা ভুলতে পারেন নি বছর কয়েক আগে শহরের বুকে ভেঙে পড়া পোস্তা উড়ালপুলে উদ্ধার কাজে ঝাঁপিয়ে পড়ে কতজনকে জীবন ফিরিয়ে দিয়েছিলেন । নিজের জীবনকে বাজি রেখে বাঁচিয়েছিলেন কত মানুষের প্রাণ। দশ ফুট বাই দশ ফুটের ঘরের দেওয়াল আলমারিতে তার স্বীকৃতির স্মারক এখনও জ্বলজ্বল করছে। অথচ সেই ছেলেটাই আজ অতীত । মাকে হারিয়েও বাবা আর বোনের স্নেহের দিব্যি কাটছিল দমকল কর্মী অনিরুদ্ধর জীবন। তা যে এত তাড়াতাড়ি থেমে যাবে তা কেউই কল্পনা করতে পারেন নি।
বাবা মোহনলাল জানা ডিস্ট্রিক্ট স্পোর্টস কাউন্সিলের সেক্রেটারি । বাড়ির অমতে যোগ দিয়েছিলেন কলকাতা দমকল বাহিনীতে। টাকী বয়েজের প্রাক্তনী ২০০৯ সালে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করেন । অন্য প্রাক্তনীরা স্মৃতির সরণিতে বেশ মনে করতে পারেন তারের প্রিয় অনি ছিল হার না মানা মানসিকতার মানুষ ।
সেই অনিরুদ্ধ এবারও ঝাঁপিয়ে পড়েছিলেন শহরের স্ট্র্যান্ড রোডের বিপর্যয়ে। এবারও কয়লাঘাটায় আগুনের লেলিহান শিখার মাঝে মানুষের প্রাণ বাঁচাতে মরিয়া প্রয়াস চালিয়েছেন। কিন্তু নিয়তি বোধহয় মিটিমিটি হাসছিলেন । ঝলসে গিয়েছে ডাকাবুকো ছেলেটার শরীর।
বাড়িতে শোকেসের মাথায় রাখা অনিরুদ্ধর ছবি। জ্বলজ্বল চোখে তারুণ্যের দীপ্তি, মুখে অমলিন হাসি।
অনিরুদ্ধর সহকর্মীরা বলছেন, হয়তো অনিরুদ্ধও লিফটে ওঠার চেষ্টা করেছিলেন। আর সেখানেই লেলিহান শিখা ঝলসে যায় শরীর। লিফটের সামনে থেকেই উদ্ধার হয় অনিরুদ্ধর দেহ। ভয়াবহ ওই পরিস্থিতির সামনে দাঁড়িয়ে হয়তো তাৎক্ষণিক সিদ্ধান্ত নিতে ভুল করেছিলেন অনিরুদ্ধ! সহকর্মীরা বলছেন, স্ট্র্যান্ড রোডের আগুনের (Strand Road Fire) খবরটা পাওয়ার পর একেবারে উচ্চ পদস্থ দমকল কর্মীদের কাঁধে কাঁধ লাগিয়ে তিনি লড়েছেন। কিন্তু একটু অসতর্কতায় ঝলসে গিয়েছে তাঁর শরীর।
বাবার দুচোখ বেয়ে শুধুই জলের ধারা। বাকরুদ্ধ বাবা কিছুতেই মেনে নিতে পারছেন না তার প্রিয় বাবুশোনা আর নেই!
সাংবাদিকতা নিয়ে পড়াশোনা করলেও সরকারি চাকরি করার শখ ছিল বরাবর। বাবা বলছেন, আমার কথা মানেনি । দমকল দফতরে চাকরি শুরু করেছিল। প্রতিদিন বেরোনোর সময় বলত, তাড়াতাড়ি ফিরে আসবে। আজ আর বলার কেউ থাকল না।
অনিরুদ্ধ জানা ওরফে রাজীব চাকরি করছেন প্রায় সাত বছর হয়ে গিয়েছে। বোনের বিয়ে দিয়েছেন নিজের হাতে। সেই বোনও কথা বলার পরিস্থিতিতে নেই । পাড়া প্রতিবেশীদের সান্ত্বনাতেও কোনও ভ্রুক্ষেপ নেই কারো। আসলে অনিরুদ্ধদের যে কখনও ভোলা যায় না । ভালো থেকো, আত্মার শান্তি কামনা করি- এই প্রার্থনাতেই নিজের মনকে সান্ত্বনা দিচ্ছেন পরিজনরা।

spot_img

Related articles

একগুচ্ছ প্রকল্পের শিলান্যাস! মঙ্গলে জেলা সফরে বর্ধমানে মুখ্যমন্ত্রী

আগামিকাল, মঙ্গলবার বর্ধমানে যাচ্ছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। জেলা সফর ঘিরে চলছে শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি। ইতিমধ্যেই সাজিয়ে তোলা হয়েছে...

বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার শুরু, ধাপে ধাপে সরানো হবে দোকান

শিয়ালদহ ফ্লাইওভার বা বিদ্যাপতি সেতুর সংস্কার কাজ শুরু করতে চলেছে কেএমডিএ। তার আগে সেতুর নীচে গড়ে ওঠা দোকানগুলিকে...

দার্জিলিংয়ে প্রথম ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, তাকদায় সূচনা নতুন দিগন্তের

চলতি সপ্তাহেই নতুন দিগন্ত খুলতে চলেছে দার্জিলিং পাহাড়ে। প্রথমবারের জন্য পাহাড় পাচ্ছে একটি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ। সরকারি-বেসরকারি যৌথ উদ্যোগে...

ঘোষণা ছাড়াই টালিগঞ্জ থেকেই ঘুরছে মেট্রো! স্বস্তি উড়েছে যাত্রীদের

কথা দিয়ে কথা রাখছে না মেট্রো! কোনও ঘোষণা ছাড়াই নিজেদের ইচ্ছেমতো ট্রেন চালাচ্ছে মেট্রো কর্তৃপক্ষ। আর তাতেই ক্ষোভ...