আত্মনির্ভর ভারতের ভুয়ো প্রচার! ঝুপড়িবাসী লক্ষ্মী অবাক মোদির পাশে নিজের ছবি দেখে

বিজ্ঞাপনের মিথ্যাচার নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে বারবার। তবে ভোটে গরম বাংলায় বিজেপির মত ‘সুশৃংখল’ একটি রাজনৈতিক দলের সরকার যে এমন মিথ্যাচার করতে পারে তা কল্পনাও করতে পারেননি বছর পঞ্চাশের লক্ষীদেবী(Lakshmi Devi)। বৌবাজারের মলঙ্গা লেনে ঝুড়ির মধ্যে ছোট্ট ভাড়া বাড়ির বাসিন্দা লক্ষী। নামটা পরিচিত না হলেও মুখটা পরিচিত হয়ে গিয়েছে এতদিনে গোটা বাংলায়। কেন্দ্রীয় সরকারের(central government) আত্মনির্ভর ভারতে এক বিশাল পাকা বাড়ির সামনে হাসিমুখে দাঁড়িয়ে রয়েছেন এই লক্ষীদেবী। পাশে নরেন্দ্র মোদির(Narendra Modi) ছবি। ভোটের বাংলায় মানুষের মন পেতে এই ছবি তুলে ধরেই প্রচার করছে বিজেপি সরকার। তবে বিজ্ঞাপনের লক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে বাস্তবের লক্ষ্মীদেবীর আকাশ পাতাল পার্থক্য।

আত্মনির্ভর ভারতে নিজের পাকা বাড়ির মুখ যাকে করেছে বিজেপি সরকার তার আসলে বাস ঝুপড়ির মধ্যে ৭০-৮০ বর্গফুটের একচিলতে ভাড়ার ঘরে। ছোট্ট এই ঘরে গাদাগাদি করে থাকেন ৮ জন। হঠাৎ একদিন তিনি দেখেন প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর পাশে তার ছবি। এবং পিছনে যে পাকা বাড়িটা রয়েছে সেটিও নাকি তার। মোদি সরকারের প্রকল্পে নাকি আত্মনির্ভর হয়ে উঠেছেন অভাগী লক্ষী। যদিও স্বামীর মৃত্যুর পর ঠিকা শ্রমিকের কাজ করে লক্ষীদেবী অবশ্যই আত্মনির্ভর। তিন ছেলেকে মানুষ করেছেন একা হাতে। তবে মাথা গোঁজার ঠাঁই না থাকায় রাতে ঘরের মধ্যে ঘুমায় কেবল মেয়েরা। ছেলেরা থাকে খোলা আকাশের নিচে ফুটপাতে। এহেন লক্ষ্মীর ছবি কেন্দ্রীয় সরকারের বিজ্ঞাপনের সাফল্যের মুখ হিসেবে উঠে আসতেই দরিদ্র পরিবার হয়ে উঠেছে হাসি মশকরার পাত্র। দরিদ্র ওই পরিবারের দাবি যে মিথ্যে ছবি তুলে ধরে তাদের তামাশার পাত্র করা হয়েছে সেই মিথ্যে ছবিটা এবার সত্যি করুক মোদি সরকার।

জানা গেছে, গত ১৪ এবং ২৫ ফেব্রুয়ারি প্রধানমন্ত্রী আবাস যোজনায় আত্মনির্ভর ভারতের বিজ্ঞাপনে ব্যবহার করা হয়েছে লক্ষ্মীর ছবি। যে ছবিতে দেখা গিয়েছে কেন্দ্রীয় প্রকল্পে পাওয়া বাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছেন বছর পঞ্চাশের ওই প্রৌঢ়া তার পাশে নরেন্দ্র মোদি। কিন্তু লক্ষ্মীদেবীর বক্তব্য, ‘পুরো মিথ্যে কথা। আমার ছবি ব্যবহার করে একটা ভুল প্রচার করা হচ্ছে।’ ছবিটি আদৌ লক্ষ্মীদেবীর কি না, তা নিয়ে সরকারি আধিকারিকরা নিশ্চিত নন। তবে লক্ষ্মীদেবীর দাবি, মাস কয়েক আগে গঙ্গাসাগরের মেলায় তিনি চুক্তিভিত্তিক কাজ করেছিলেন। সে সময় একদল ফটোগ্রাফার তাঁর ছবি তোলেন। পরে তিনি দেখেন, সেই ছবি ব্যবহার করে একাধিকবার বিজ্ঞাপন প্রকাশিত হয়েছে। এমনকী কলকাতায় হোর্ডিং-ফ্লেক্সও পড়েছে।

আরও পড়ুন:১০০ কোটির তোলাবাজির অভিযোগ স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বিরুদ্ধে, টালমাটাল জোট, আজই বৈঠক

এদিকে ভোটের বাংলায় এই ঘটনাকে নিয়ে শুরু হয়ে গিয়েছে রাজনীতি। বিজেপির বিরুদ্ধে মিথ্যাচারের অভিযোগ তুলে লক্ষ্মী দেবীর সঙ্গে দেখা করে এসেছেন তৃণমূল নেতৃত্ব। তৃণমূল সাংসদ সৌগত রায় বলেন, ‘এ ভাবেই ফেক নিউজ ছড়িয়ে ওঁরা মানুষকে বিভ্রান্ত করে। এবার তো সরাসরি কেন্দ্রীয় সরকারের ব্যানার দিয়ে ফেক নিউজ ছড়ানো হয়েছে।’ অন্যদিকে বিজেপি সূত্রের খবর, এই বিজ্ঞাপনের দেখভাল করেন কেন্দ্রীয় সরকারের অফিসাররা ফলে এর সঙ্গে দলের কোনো সম্পর্ক নেই।

Advt

Previous articleসারদা মামলায় তিন সেবি আধিকারিকের বাড়িতে সিবিআই তল্লাশি
Next articleজনতা কার্ফুর বর্ষপূর্তি, ফের হু হু করে বাড়ছে করোনা সংক্রমণ