রাজ্য বিজেপির বৈঠকে ভাষণ দিতে গিয়ে বাংলার তৃণমূল সরকারকে নিশানা করেছেন বিজেপির (Bjp) সর্বভারতীয় সভাপতি জেপি নাড্ডা (Jp Nadda)। কিন্তু তিনি যে অভিযোগ সরকারের বিরুদ্ধে করেছেন, তার কতটা সত্যিই বা তথ্যভিত্তিক? একনজরে দেখে নেওয়া যাক তিনি কী অভিযোগ করেছেন? আর রাজ্যের বাস্তব পরিস্থিতিটা ঠিক কীরকম?
• *নাড্ডার অপপ্রচার* :
ভোট-পরবর্তী হিংসায় রাজ্যে বিজেপি বহু পরিবার ঘর ছাড়া। বিজেপির কার্যালয়ে আগুন ধরিয়ে দেওয়া হয়েছে। এমনকী মহিলারাও এরাজ্যে নিরাপদ নন। তাঁদের উপর অত্যাচারের ঘটনা ঘটেছে। জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের প্রতিনিধিদের সামনে অনেকেই এসে এ বিষয়ে অভিযোগ জানিয়েছেন।
• *বাস্তব হল:*
ভোটের আগে বিজেপি নেতাদের উস্কানিমূলক মন্তব্যের জেরে বিধানসভা নির্বাচনের ফল বেরোনোর পরে কয়েকটি জায়গায় বিচ্ছিন্ন ঘটনা ঘটেছিল। সেখানেই শুধু বিজেপি কর্মীরাই আক্রান্ত হয়েছিলেন তা নয়, আক্রান্ত হয়েছিলেন শাসকদলের নেতা-কর্মীরাও। এমনকী অন্যান্য দলের কর্মীরাও প্রাণ হারিয়েছেন। নির্বাচনের সময় আইন-শৃংখলার দায়িত্ব ছিল নির্বাচন কমিশনের হাতে। কিন্তু মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Bandopadhyay) শপথ গ্রহণের পরে দায়িত্বভার নিয়েই কড়া হাতে এই সন্ত্রাসের মোকাবিলা করেন। শুধু তাই নয়, দলমত নির্বিশেষে যেসব পরিবার তাদের রাজনৈতিক হিংসায় স্বজনদের হারিয়েছে, তাদের হাতে আর্থিক সাহায্য তুলে দেন।
কেন্দ্রের রিপোর্ট অনুযায়ী, দেশের মধ্যে মহিলাদের জন্য সবচেয়ে নিরাপদ শহর হল কলকাতা। বিজেপি শাসিত রাজ্যগুলি তো বটেই, দেশের অন্যান্য অনেক রাজ্যের থেকেই এখানে মহিলাদের নিরাপত্তা অনেক বেশি- এটি কেন্দ্রের রিপোর্টে প্রকাশিত।
• *নাড্ডার অপপ্রচার*
বাংলায় দুর্নীতিগ্রস্ত সরকার রয়েছে। টিকা দেওয়ার বিষয়ে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ই প্রথম বলেছিলেন যে ভ্যাকসিন (Vaccine) কতটা সফল হবে, তা আমার জানা নেই। পরে, তিনি বলেছিলেন যে আমরা নিজেরাই ভ্যাকসিনটি কিনব। তারপরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি (Narendra Modi) ভ্যাকসিন দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেন। 21 জুন থেকে এই প্রচার চলছে। ভ্যাকসিন নিয়ে কোনও কেলেঙ্কারি হয়ে থাকলেও পশ্চিমবঙ্গে তা ঘটেছে।
• *বাস্তব হল:*
বাংলায় এখনও পর্যন্ত দু’কোটি ১৭ লক্ষ লোককে ভ্যাকসিন দেওয়া হয়েছে। তার মধ্যে কেন্দ্রীয় সরকারের কাছ থেকে ১ কোটি ৯৯ লক্ষ ভ্যাকসিন পাওয়া গিয়েছে। বাকি ১ কোটি ৯৮ লক্ষের ব্যবস্থা করেছে রাজ্য সরকার।
কেন্দ্রের রিপোর্টে প্রকাশিত ভ্যাকসিন নষ্ট হওয়ার তালিকায় সবচেয়ে ভালো ফল বাংলার। এ রাজ্যে সবচেয়ে কম ভ্যাকসিন নষ্ট হয়েছে।
৪১ লক্ষ সুপার স্প্রেডারকে ইতিমধ্যেই টিকা দেওয়া হয়েছে।
রাজ্য সরকার ৫৯ কোটি টাকা খরচ করে সরাসরি প্রস্তুতকারী সংস্থা থেকে ভ্যাকসিন কিনেছে।
কলকাতায় ভুয়ো ভ্যাকসিনেশন ক্যাম্প চালানোর বিষয়টি একেবারেই বিচ্ছিন্ন ঘটনা। সেটি সামনে আসার সঙ্গে সঙ্গে পদক্ষেপ করেছে রাজ্য প্রশাসন। এই ঘটনার তদন্তে সিট (Sit) গঠন করা হয়েছে পাশাপাশি মূল অভিযুক্ত-সহ আরো অনেক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করা হয়েছে। তাদের পুলিশ হেফাজতে জিজ্ঞাসাবাদ চলছে।
• *নাড্ডার অপপ্রচার*
কেন্দ্র বাংলার ২০ লক্ষ কৃষককে কিষান সম্মান নিধির সুবিধা দিয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে বাজেট ছিল ১.২২ লক্ষ কোটি টাকা। আজ এটি দাঁড়িয়েছে ২.১১ লক্ষ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী কিষাণ সম্মান নিধির অধীনে ১০ কোটি কৃষককে টাকা দেওয়া হয়েছে।
• *বাস্তব হল:*
রাজ্য যত কৃষক প্রধানমন্ত্রীর কিষান সম্মান নিধি সুবিধা পান তার চেয়ে অনেক বেশি কৃষক রয়েছেন রাজ্য সরকারের ‘কৃষক বন্ধু’ প্রকল্পের অধীনে। নির্বাচনের আগে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় প্রতিশ্রুতি দেন, ক্ষমতায় আসার পর কৃষক বন্ধুর প্রকল্পের টাকা ছয় হাজার থেকে বাড়িয়ে ১০০০০ করে দেবেন। শপথ নেওয়ার দু’মাসের মধ্যেই সেই প্রতিশ্রুতি পূরণ করেছেন মুখ্যমন্ত্রী। প্রধানমন্ত্রীর কিসান নিধি প্রকল্পের তুলনায় অনেক বেশি টাকা পাওয়া যায় কৃষক বন্ধু প্রকল্পে।
আরও পড়ুন- জোগানে ঘাটতি: বুধ-বৃহস্পতিতে শুধুমাত্র দ্বিতীয় ডোজ কলকাতা পুরসভার ভ্যাকসিনেশন সেন্টারে