যুবমোর্চা সভাপতির (BJYM President) পদ থেকে ইস্তফা (Resign) নিয়ে সৌমিত্র খাঁ (Soumitra Khan)-এর ফেসবুক বিপ্লব ও বিস্তর নাটকের পর তা প্রত্যাহার একেবারেই ভালো ভাবে নিচ্ছে না বিজেপিও (BJP) শীর্ষ নেতৃত্ব। পদত্যাগের টালবাহানা করতে গিয়ে বিজেপি রাজ্য সভাপতি দিলীপ ঘোষের (Dilip Ghosh) তোপের মুখে পড়লেন সৌমিত্র খাঁ। তাঁকে কার্যত হুঁশিয়ারি সুরে দিলীপ ঘোষ বলেন, “অসুবিধা হলে ইস্তফা দেওয়ার জন্য দরজা খোলা। সোশ্যাল মিডিয়ায় বিপ্লব করার কোনও মানে হয় না।” একইসঙ্গে মহিলা মোর্চা রাজ্য সাধারণ সম্পাদক অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও (Amrita Banerjee) কড়া বার্তা দেন রাজ্য বিজেপি সভাপতি।
প্রসঙ্গত, সৌমিত্র খাঁ গত বুধবার কেন্দ্রের মন্ত্রিসভার রদবদলের দিন দুপুরে হঠাৎ ফেসবুক লাইভে পদত্যাগের ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর নিশানায় ছিলেন শুভেন্দু অধিকারী ও দিলীপ ঘোষ। শুভেন্দু “ছোট ভাই” মন্তব্য করে বিষয়টিকে এড়িয়ে গেলেও দিলীপ ঘোষ ক্ষোভ প্রকাশ করেন। সৌমিত্রকে কটাক্ষ করে তিনি ‘’জোকার’’, ‘’অর্বাচীন’’, “পাগল” ইত্যাদি বিশেষণ প্রয়োগ করেন।
যুব সভাপতিকে নিয়ে দিলীপবাবুর মন্তব্য, “এক জন যুব নেতার এই ধরনের অর্বাচীন কাজ করাটা খুব স্বাভাবিক। বিজেপিতে এসেছেন (তৃণমূল থেকে), বুঝতে সময় লাগছে, বুঝে যাবেন। প্রথম প্রথম ছোটদের দোষ মাফ করে দিই আমরা।’’ তার পরেই রাজ্য বিজেপি সভাপতির হুঁশিয়ারি, ‘‘কারও যদি বয়সের সঙ্গে পরিপক্কতা না আসে, তারও ব্যবস্থা দলে আছে। সব ব্যবস্থা হবে। পাগলামির একটা সীমা থাকে! দলের জন্য কেউ অপরিহার্য নয়। এ রকম চলতে থাকলে দল ছেড়ে দেবে, সমাজও এক দিন তাঁকে ছেড়ে দেবে।’’
সৌমিত্রকে “জোকার’’ বলেও কটাক্ষ করেছেন দিলীপ ঘোষ। তাঁর কথায়, ‘‘রাজনীতিতে জোকারদের গুরুত্ব থাকে সব সময়! কিন্তু নিজের ওজন কমানো ঠিক নয়। তাঁকে দল যে মর্যাদা দিয়েছে, তা রক্ষা করা উচিত।’’
এ দিকে শুধু সৌমিত্র নয়, বেসুরো বিজেপি যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদক অমৃতা বন্দ্যোপাধ্যায়। বৃহস্পতিবার ফেসবুক লাইভে দলের বিরুদ্ধে একরাশ ক্ষোভ উগরে দেন তিনি। তাঁর নিশানায় ছিলেন ভোটের আগে দলবদলু দুই নেতা রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায় (Rajib Banerjee) ও সব্যসাচী দত্তকে। বিধানসভা ভোটে বিজেপির ভরাডুবির জন্য রাজীব-সব্যসাচীকে দায়ী করে অমৃতা এই দুই নেতাকে। অজাত-অপদার্থ-দালাল বলেন।
ফেসবুক লাইভে বোমা ফাটিয়ে ঠিক কী বলেছিলেন অমৃতা?
মহিলা মোর্চা নেত্রীর কথায়, “আমি বা আমার মতো কার্যকর্তারা কারও হাত ধরে বিজেপিতে আসিনি। যেদিন থেকে রাজনীতি বুঝেছি, প্রাপ্তবয়স্ক হয়েছি, ভোটাধিকার পেয়েছি, সেদিন থেকেই এই দলের সঙ্গে আছি। কিন্তু সকলে জানেন আমাদের মতো নেতারা কোনওদিন দল ছাড়বে না। তাই আমাদের চিন্তাভাবনা, আবেগকে একপ্রকার পদদলিত করা হচ্ছে। আমরা সমস্যার কথা কোথাও বলতে পারছি না। কেউ এমন নেই যাঁরা আমাদের কথা শুনবে। আমাদের বলার কোনও অধিকার নেই। কিন্তু মার আমাদের খেতে হয়। নেতারা ফোন ধরেন না। আমাদের মতো মোর্চার পদাধিকারীদের কার্যকতাদের কান্না শুনতে হয়।”
এখানেই শেষ নয়। রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে তীব্র আক্রমণ করে অমৃতা বলেন, “বারবার চার্টার্ড ফ্লাইটে করে দিল্লি গিয়েছেন, সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। বিজেপিতে এসে মুখ্যমন্ত্রী ও তৃণমূলের বিরুদ্ধে বড় বড় কথা বলেছেন। সেদিন বিরোধী দলনেতা তাঁর কাছের লোক ছিল। আজ প্রকাশ্যে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে সমর্থন করে তাঁর বিরুদ্ধে অনেক কথা বলা হচ্ছে। কিন্তু ভারতীয় জনতা পার্টির দলনেতাকে আক্রমণ আমরা মানব না।”
অমৃতা আরও বলেন, “মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় দলে নিচ্ছেন না বলেই এখনও বিজেপি ছাড়ছেন না রাজীব। উনি এবং সব্যসাচী দত্তের মতো দালাল নেতাদের জন্যই দলের এই ভরাডুবি।” যুব মোর্চার সাধারণ সম্পাদকের প্রশ্ন, কেন এখনও শোকজ করা হল না রাজীব বন্দ্যোপাধ্যায়কে। সোনালী গুহকে ‘অপদার্থ’ বলে কটাক্ষ করেন তিনি। বিজেপি প্রার্থীদের নির্বাচনী এজেন্টদের সঙ্গে তৃণমূল যোগ নিয়েও ক্ষোভে ফেটে পড়েন তিনি।
এরপরই বিজেপি রাজ্য দফতরে অমৃতাকে ডেকে পাঠানো হয়। তিনি কেন ফেসবুক বিপ্লব করলেন তার ব্যাখ্যা জানতে চান শীর্ষ নেতৃত্ব। বিষয়টি নিয়ে মহিলা মোর্চা সভানেত্রী অগ্নিমিত্রা পালের সঙ্গেও কথা হয় অমৃতার। রাতে অমৃতা তাঁর ঘনিষ্ঠ মহলে জানান, ২৪ ঘন্টার মধ্যে রাজীব-সব্যসাচীর বিরুদ্ধে দল ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে তিনিও অন্য চিন্তাভাবনা করবেন।
আরও পড়ুন:বিজেপির ‘ব্যর্থ’ নেতারা বহাল,উত্তরবঙ্গে ভালো ফল দেখিয়েও প্রথম কোপে কিশোর বর্মন