‘জাগোবাংলা’য় লেখার জন্য ছমাসের জন্য সাসপেন্ড অজন্তা

‘জাগোবাংলা’য় লেখার জন্য অধ্যাপিকা অজন্তা বিশ্বাসকে সাসপেন্ড করল সিপিএম জেলা কমিটি। ছ’ মাসের জন্য এই সাসপেনশন। তবে পার্টিতে তীব্র প্রতিক্রিয়া এবং জনমানসে নেতিবাচক প্রভাবের ভয়ে এই সিদ্ধান্ত ঢাকঢোল পিটিয়ে ঘোষণার ঝুঁকি নেয়নি পার্টি। অন্তত এই লেখা প্রস্তুত হওয়া পর্যন্ত। সংবাদমাধ্যমকে ফিসফিস করে খবর দিচ্ছেন কোনো কোনো নেতা। অজন্তার দিক থেকে এখনও কোনও কিছু বলা হয়নি। এ নিয়ে কলকাতার বৈঠকে দ্বিমতও দেখা যায়। বিমান বসু আসবেন বলেও আসেননি। রবীন দেব শাস্তি নিয়ে অতিসক্রিয় ছিলেন। আর কলকাতায় সংগঠন ডোবানো কল্লোল মজুমদার চাপাচাপি করেন শাস্তি দিতেই হবে। অজন্তার সূত্রে মিডিয়ায় নাম প্রকাশের সুযোগ তিনি সম্ভবত ছাড়েননি।

উল্লেখ্য, অজন্তা বিশ্বাস শুধু প্রয়াত সিপিএম শীর্ষনেতা অনিল বিশ্বাসের কন্যা নন। তিনি ইতিহাসের অধ্যাপিকাও বটে। রবীন্দ্রভারতী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ান তিনি। ‘জাগোবাংলা’য় তিনি কয়েক কিস্তিতে লেখেন,” বঙ্গরাজনীতিতে নারীশক্তি।” এটি গবেষণাধর্মী একটি নিরপেক্ষ লেখা। এখানে স্বাধীনতা আন্দোলন থেকে শুরু করে আজকের মুখ্যমন্ত্রী পর্যন্ত নারীশক্তির উল্লেখ ছিল। বহু বামপন্থী নেত্রীর কথাও তিনি লিখেছেন। ‘জাগোবাংলা’ সম্পাদকীয় দপ্তর একটি নামও বাদ দেয়নি। শেষপর্বে লেখিকা বিষয়বস্তুর অবধারিত নাম হিসেবে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের কথা উল্লেখ করেন।

আরও পড়ুন- পুরবাজেটে বড় ঘোষণা ফিরহাদের: শহরে মিউটেশন ফি মকুব, তৈরি হবে নতুন জলপ্রকল্প

অজন্তার লেখা নিয়ে প্রথম থেকেই রে রে করে ওঠে সিপিএমের একাংশ। প্রথম দিনেই একটি ফোন পেয়ে অজন্তা লিখিত জবাব দিলেও আবার জনসমক্ষে ‘শাস্তি দেব’ গোছের হাবভাব শুরু হয়। শেষমেষ এরিয়া কমিটির সুপারিশমত জেলা কমিটি তিন মাসের সাসপেনশনের সিদ্ধান্ত নেয়। এনিয়ে বামমহলেই তীব্র প্রতিক্রিয়া। একটি শিবির বলছে, এতে প্রমাণিত হল পার্টিতে কোনো স্বাধীনতা নেই। একটি ইতিহাসভিত্তিক নিরপেক্ষ লেখার জন্য এক অধ্যাপিকাকে শাস্তি দেওয়া হল। এতে পার্টির দৈন্যতা প্রকাশিত। এই কারণেই নতুন প্রজন্ম মুখ ঘুরিয়ে নিচ্ছে। 2008 থেকে ধারাবাহিক পরাজয়ের মধ্যে দিয়ে যাঁরা পার্টিকে লোকসভা, বিধানসভায় শূন্যতে নিয়ে গেছেন, তাঁদের কেন শাস্তি হয় না? অপসারণ হয় না? অনুশাসনের নামে এঁরাই ফতোয়া জারি করতে গিয়ে পার্টিকে সংকীর্ণ কূপমন্ডুক করে রাখছেন। পার্টিকে সময়োপযোগী করতে দেন না। এই কারণেই সিপিএম জনবিচ্ছিন্ন হচ্ছে।

আরও পড়ুন- কর কাঠামোর বাইরে থাকা প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৭,৫০০ টাকা দিক কেন্দ্র, প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর

এদিকে সিপিএম এখন জনমানসে বিরূপ প্রতিক্রিয়ার কথা ভেবে অজন্তার সাসপেনশন নিয়ে বেশি বাড়াবাড়ি চাইছে না। আসলে সিপিএমের ইতিহাসে এই ধরণের ঘটনা যখনই ঘটেছে, পরে দেখা গেছে পার্টি ভুল ছিল। যেমন নৃপেন চক্রবর্তী, সইফুদ্দিন চৌধুরী, সমীর পুততুন্ড, সুজিত বসু, সোমনাথ চট্টোপাধ্যায়। প্রতি ক্ষেত্রেই দেখা গেছে পার্টি দূরত্ব তৈরি করে ভুল করেছে। এবার সেই তালিকায় যোগ হলেন খোদ অনিল বিশ্বাসের কন্যা অজন্তা। পার্টির একটি মহল বলছে, যেভাবে অপরিচিত অপ্রাসঙ্গিক কিছু নেতা অজন্তা ইস্যুতে নিজেদেরই গুরুত্ব বাড়ানোর চেষ্টা করলেন, তাতে জলঘোলা বাড়ছে। এই জল বহুদূর গড়াবে। তবে এক শীর্ষ সিপিএম নেতার মন্তব্য,” সাসপেনশন পার্টির অভ্যন্তরীণ বিষয়। এটা হয়েছে না হয়নি, কিছুই বলব না।” advt 19

 

Previous articleকর কাঠামোর বাইরে থাকা প্রতিটি পরিবারকে মাসে ৭,৫০০ টাকা দিক কেন্দ্র, প্রস্তাব মুখ্যমন্ত্রীর
Next articleকরোনা শূন্য ৭বিধানসভা, উপনির্বাচনের জন্য কমিশনকে রিপোর্ট দিতে চলেছে তৃণমূল