দিল্লির বাইরে এবার ক্ষমতা দখল আম আদমি পার্টির (AAP)। তাও যেমন তেমন জয় নয়, একবারে ঝাড়ুর জোরে ঝেঁটিয়ে বিদায় ৭০ বছর ধরে শাসন ধরে রাখা কংগ্রেস এবং শিরোমণি আকালি দল (SAD)। দিল্লিতে প্রথমে কংগ্রেস, তারপর বিজেপিকে। এবার কংগ্রেসকে ক্ষমতাচ্যুত করল পাঞ্জাব (Punjab) থেকে।

১৯৫২- থেকে পাঞ্জাবে কংগ্রেস ৮ বার এবং এসএডি ৬ বার ক্ষমতা দখল করেছে। শুধুমাত্র ১৯৬৭ সালে কিছু ছোট দল ও নির্দলরা জোট বেঁধে সরকার গঠন করেছিল। এর মধ্যে তিনবার (১৯৯৭, ২০০৭, ২০১২) বিজেপি সরকারের শরিক হয়েছিল এসএডি-র সঙ্গে জোট বেঁধে। রাজ্যে ক্ষমতা বদলের প্রশ্নে দুটি দলেরই প্রাধান্যকে ইস্যু করে আপ তাদের প্রচারে এমন একটা ধারণা তৈরি করেছিল যে কংগ্রেস এবং আকালিরা একই মুদ্রার দুটি দিক। এবার পাঞ্জাব, বিশেষ করে মালওয়া অঞ্চলের মানুষ পরিবর্তনের পক্ষে ভোট দিয়েছে। রাজ্য জুড়ে যে বার্তাটি প্রতিধ্বনিত হয়েছিল তা হল যে ভোটাররা দুটি বড় দলকে ৭০ বছর ধরে শাসন করতে দেখেছে, কিন্তু সেই শাসন সুফল দেয়নি। তাই অন্য দলকে সুযোগ দেওয়ার সময় এসেছে। আপ-এর স্লোগান “ইস বার না খাওয়াঙ্গে ধোখা, ভগবন্ত মান তে কেজরিওয়াল নু দেওয়াঙ্গে মাউকা (এবার আমরা বোকা হব না, ভগবন্ত মান এবং কেজরিওয়ালকে সুযোগ দেব)”।
আপ সুপ্রিমো এবং দিল্লির মুখ্যমন্ত্রী অরবিন্দ কেজরিওয়াল (Arabinda Kejrial) তাঁর দিল্লির শাসনের মডেলের চারটি স্তম্ভের কারণে ভোটারদের সঙ্গে তাৎক্ষণিকভাবে উষ্ণ সম্পর্ক গড়ে তুলতে সক্ষম হয়েছেন। এই চারটি স্তম্ভ হল- উচ্চমানসম্পন্ন সরকারি শিক্ষা, স্বাস্থ্য, বিদ্যুৎ এবং সস্তায় জল। পাঞ্জাবের মত একটি রাজ্য যেখানে বিদ্যুতের অত্যধিক উচ্চ হার, যেখানে স্বাস্থ্য এবং শিক্ষা বেশিরভাগই বেসরকারি মালিকানাধীন, এরকম একটি রাজ্যে আপ-এর ‘দিল্লি মডেল’ ভোটারদের মন জয় করে নিয়েছে খুব সহজেই। আপ তরুণ এবং মহিলা ভোটারদের কাছ থেকে সমর্থন পেয়েছে যারা একটি নতুন দল হিসাবে ‘আম আদমি’কে একটি সুযোগ দিতে চেয়েছিল। দুর্নীতির মূলোৎপাটনের কেজরিওয়ালের প্রতিশ্রুতি এবং একটি নতুন শাসনব্যবস্থার প্রতি যা শিক্ষা ও কর্মসংস্থানে উৎসাহিত করবে, রাজ্যে স্থানীয় তরুণদের “ব্যবস্থা পরিবর্তন” করতে আগ্রহী করে তুলেছিল। একইভাবে, রাজ্যের মহিলাদের অ্যাকাউন্টে প্রতি মাসে ১০০০ টাকা জমা দেওয়ার আপ-এর প্রতিশ্রুতি মহিলা ভোটাররা পছন্দ করেছিল, যদিও অনেকেই স্বীকার করেছেন যে এই ধরনের জনপ্রিয় প্রতিশ্রুতিগুলো সাধারণত ভঙ্গ করা হয়। কিন্তু সত্য যে তিনি মহিলাদের একটি পৃথক ভোটব্যাঙ্ক হিসাবে চিহ্নিত করেছিলেন এবং শুধুমাত্র তাদের পিতা বা স্বামীর কর্তৃত্বাধীন হিসাবে নয়, অত্যন্ত পিতৃতান্ত্রিক রাজ্যে নারীকে স্বমর্যাদায় প্রতিষ্ঠিত করার কথা বলেছিলেন। মুখ্যমন্ত্রী পদপ্রার্থী হিসাবে ভগবন্ত মানকে ঘোষণা করা আপ-কে বিরোধীরা যে বহিরাগত ট্যাগ দিয়েছিল তা থেকে মুক্তি পেতে সহায়তা করেছিল। মান, জনপ্রিয় কৌতুক অভিনেতা যিনি তার রাজনৈতিক ও সামাজিক ব্যঙ্গের মাধ্যমে অনেক পাঞ্জাবিদের হৃদয়ে জায়গা করে নিয়েছিলেন কোনও ঐতিহ্যবাহী রাজনীতিকের মতো নয়, এক চিত্তাকর্ষক পরিচ্ছন্ন, মাটির ছেলে ইমেজ হিসাবে। এক বছরেরও বেশি সময় ধরে চলা কৃষক আন্দোলন কেন্দ্রকে বাধ্য করেছে সরকার তিনটি বিতর্কিত খামার আইন বাতিল করার জন্য।যা, অতীতে ভোটের ফলাফল নির্ধারণকারী ঐতিহ্যগত দলীয় ব্যবস্থা ভেঙে সরকার পরিবর্তনের জন্য জমি প্রস্তুত করে দিয়েছিল।

রাজনৈতিক মহলের মতে, আপ-কে ভরসার থেকেও কংগ্রেস ও এসএডি-র ব্যর্থতাই কেজরিয়ালের সাফল্যের মূল কারণ। ভোটের আগে কংগ্রেসের গোষ্ঠী কোন্দল তুঙ্গে ওঠে। একই সঙ্গে শিরোমণি আকালি দলের নাম জড়ায় দুর্নীতিতে। সব মিলিয়ে তাদের অপশাসন থেকে বের করে রাজ্যেকে একটি নতুন দলের হাতে তুলে দেওয়া শ্রেয় মনে করেছেন পাঞ্জাবের মানুষ।

আরও পড়ুন:‘জাদু সংখ্যা’ ছুঁতে পারেনি, নির্দলের সমর্থন নিয়ে রাজ্যপালের কাছে গোয়া বিজেপি
