অস্তিত্বের সঙ্কটে কলকাতার ৬১ বছরের প্রাচীন সিয়ারাম আখড়া

হাওড়া ব্রিজের গা ঘেঁষে গঙ্গার পাড়ে মল্লিকঘাট ফুল বাজারে পাশেই রয়েছে বিখ্যাত কুস্তির আখড়া।

কুস্তির মারপ্যাঁচ দিতে ওরা সিদ্ধহস্ত। ওরা পালোয়ান। অথচ ওদের অস্তিত্ব আজ সঙ্কটে। কলকাতার অন্যতম পুরনো  সিয়ারাম ব্যায়াম আখড়ার কুস্তিগীররা বর্তমানে অস্তিত্ব সঙ্কটে। কারণ, কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষের একটা নোটিশ।

হাওড়া ব্রিজের গা ঘেঁষে গঙ্গার পাড়ে মল্লিকঘাট ফুল বাজারে পাশেই রয়েছে বিখ্যাত কুস্তির আখড়া। নয় নয় করে ৬১ বছরের পুরোনো এই আখড়া। শহর কলকাতার মুখে মুখে দারা সিংয়ের আখড়া নামেই পরিচিত এটি। মল্লিক ঘাট ফুলবাজারের রাস্তা ধরে ছোটেলাল গঙ্গার ঘাটে এসে নামলেই দেখবেন এই সুপ্রাচীন আখড়ার। যেখানে প্রতিদিন ভোর ৪ টে থেকে মুলতানি মাটি মেখে চলে কুস্তির অনুশীলন। কে নেই সেই দলে। ৭০ এর যুবক থেকে ১০ বছরের ছোট্টু। সবাই কুস্তির মারপ্যাঁচ অনুশীলন করে নিয়মিত। প্রায় ৫০ জনের মতো এখানে প্রশিক্ষণ নেন। আখড়ার কর্তাদের দাবি অনুযায়ী , বিনা পয়সায় চলে এই প্রশিক্ষণ। কোনও অর্থ কারও থেকে নেওয়া হয় না। আর এখানে প্রশিক্ষণ নিতে অন্য জেলা থেকেও ছেলেরা আসেন।

আরও পড়ুনঃ স্বস্তি ভারতীয় ফুটবলে, এআইএফএফ-এর উপর থেকে নির্বাসন তুলল ফিফা

কলকাতার সেই একমাত্র আখড়া বন্ধ হয়ে যাওয়ার উপক্রম হয়েছে। আখড়ার গুরুজি জোয়ালা তিওয়ারি জানিয়েছেন, কলকাতা বন্দরের তরফে তাদের কাছে একটা নোটিশ দেওয়া হয়েছে ৷ সেখানে বলা হয়েছে মাসিক কিস্তির টাকা দ্রুত মেটাতে হবে। সেই টাকা না মেটাতে পারলে যে কোনও দিন উচ্ছেদ করে দেওয়া হবে আখড়া৷ আসলে তাদের জবরদখলকারী হিসাবে চিহ্নিত করে দেওয়া হয়েছে ওই নোটিশে।

আখড়ার গুরুজি আরও বলেন, আমাদের টাকা মেটানোয় কোনও অসুবিধা নেই৷ কিন্তু ৪৭০ টাকা মাসিক বিলের বদলে এখন প্রতি মাসে ৭৬ হাজার টাকা দেওয়া আমাদের পক্ষে  সম্ভব নয়। গুরুজির ছেলে সুরজ নিজেও একজন জাতীয় স্তরের কুস্তিগীর। একাধিক পদক জিতেছেন তিনি। তাঁর বক্তব্য স্পষ্ট, বাবা পার্কিং লটে নিরাপত্তা রক্ষীর কাজ করেন৷ সেখান থেকে যা আয় হয় তা দিয়েই আখড়া চলে। এছাড়া আখড়ায় মন্দির আছে। গো-পালন করা হয়। সেখান থেকেও যা অর্থ আসে তাতে টেনে টুনে চলে যায়। যদিও বন্দর তাদের কমার্শিয়াল হিসাবে বিবেচিত করে বসে আছে। তাই টাকার অঙ্ক এক ধাক্কায় কয়েক হাজার গুণ বেড়ে গিয়েছে।

সুরজ জানান, এই আখড়া গঙ্গা সেবা সমিতি ট্রাস্টের অন্তর্ভুক্ত। ফলে টাকা জমা দিতে গিয়ে হিমশিম খেতে হচ্ছে তাদের। এই আখড়া থেকেই একাধিক জাতীয় স্তরের কুস্তিগীর বেরিয়েছে।

তাদের দাবি, শুধু কুস্তির মারপ্যাঁচ অনুশীলনেই তারা থেমে থাকেন না, প্রতিদিন নিজেরাই এই ছোটেলাল গঙ্গার ঘাটকে সাফ সুতরো রাখতে নেমে পড়েন। টাকার জন্য আখড়া বন্ধ হয়ে গেলে সেই কাজেও বাধা আসবে। কলকাতা বন্দর কর্তৃপক্ষ অবশ্য দাবি করেছে, তাদের জায়গা ব্যবহার করে এই আখড়া চলছে, মন্দিরও করা হয়েছে। তাই এস্টেট ম্যানেজার যথাযথ কারণেই নোটিশ পাঠিয়েছেন।

Previous articleস্বস্তি ভারতীয় ফুটবলে, এআইএফএফ-এর উপর থেকে নির্বাসন তুলল ফিফা
Next articleEntertainment: মুক্তি পেল রাজা চন্দ পরিচালিত নতুন বাংলা ছবি ‘হার মানা হার’ এর ট্রেলার