Sunday, November 9, 2025

সর্ষের মধ্যে ভূত, কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে কয়লা মন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে তদন্তের দাবি কুণালের

Date:

“সর্ষের মধ্যে ভূত। তাই পাচার।” এমন মন্তব্য করেই এবার দুর্গাপুরে এক কয়লা মাফিয়ার (Coal Mafia) হোটেলে শিল্পাঞ্চলের দাগি কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে কেন্দ্রের কয়লা মন্ত্রীর বৈঠক নিয়ে তদন্তের দাবি তুললেন তৃণমূল কংগ্রেসের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh)। তাঁর কথায়, “বিজেপির (BJP) কয়েকজন দলবদলু এবং কিছু আদি নেতা কয়লা কয়লা করে নিয়ে উদ্বেগ দেখান। কয়লা পাচার নিয়ে অন্যদের দিকে আঙুল তোলেন। যে বিজেপি কয়লা কেলেঙ্কারির বলে, তাদের দলেরই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে দেখা যাচ্ছে কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে বৈঠক করতে।” কেন, কী কারনে এই বৈঠক, তা নিয়ে প্রশ্ন তুলে অবিলম্বে কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশিকে (Central Coal Minister Pralhad Joshi) কয়লা কেলেঙ্কারি তদন্তের আওতাভুক্ত করার দাবি জানান কুণাল।

কুণালের আরও সংযোজন, “খনি পাহাড়া দেয় কেন্দ্রের বাহিনী (Central Force)। এতো সর্ষের মধ্যে ভূত। তাই এই পাচার। বিজেপি নেতাদের বলবো, থুতু উপরের দিকে ফেললে নিজের গায়েই পড়ে। এবার তাদের জবাব দিতে হবে, দুর্গাপুরের হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কেন কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ? সেখানে তিনি কী করছিলেন? অন্যের দিকে তাকিয়ে কথা বলার আগে জবাব দিক বিজেপি। সিবিআই-ইডি এখন কী করবে, অন্যদের নাম উঠলেই এখনই তো ছুটে ছুটে চলে যেত কেন্দ্রীয় এজেন্সি। কাদের হোটেল, কারা ছিল? ইডি-সিবিআই যেমন ছুটে ছুটে যায়, এবার কেন যাচ্ছে না? সিসিটিভি ফুটেজ (CCTV Footage) সংগ্রহ করা হচ্ছে না কেন? খনি থেকে কয়লা পাচারের বৈঠক ছিল কিনা, সেটা দেখা উচিত। দেরি করছে কেন? তাই কয়লা পাচার মামলায় কেন্দ্রীয় মন্ত্রীকে জিজ্ঞাসা করা হোক।”

কয়লা চুরিকাণ্ড নিয়ে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি রাজ্য সরকারের সহায়তা চেয়েছেন। এ প্রসঙ্গে কুণাল ঘোষ বলেন, “কয়লা চুরি নিয়ে জ্ঞান দেবেন আবার কয়লা মন্ত্রী কয়লা মাফিয়াদের সঙ্গে বৈঠক করবেন, এটা একসঙ্গে হয় না।ওনার বিরুদ্ধে আগে তদন্ত হওয়া দরকার।”

প্রসঙ্গত, দুর্গাপুরে সরকারি কাজে এসে শিল্পাঞ্চলের কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ-এর সঙ্গে এক ফ্রেমে ধরা দিয়েছেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। টুইট করে সেই ছবি ফাঁস করলেন তৃণমূলের সর্বভারতীয় সাধারণ সম্পাদক অভিষেক বন্দ্যোপাধ্যায় (Abhishek Banerjee)। কয়লাপাচার নিয়ে যখন তৃণমূল নেতাদের নামে মিথ্যাচার করছে বিজেপি, ঠিক তখনই কেন্দ্রীয় মন্ত্রীর সঙ্গে কয়লা মাফিয়ার ছবি প্রকাশ্যে আসতেই রাজ্য রাজনীতি তোলপাড়।

টুইটের অভিষেকের প্রশ্ন, তিনি আশ্চর্য এই ভেবে যে মন্ত্রী খোদ কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি লঙ্কিত কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ-এর সঙ্গে কী করছেন! এরপরই অভিষেকের কটাক্ষ, কেন্দ্রীয় মন্ত্রী কী বিজেপির পকেট ভরাট করার উপায় নিয়ে আলোচনা করছেন নাকি জাতীয় সম্পদ চুরির জন্য তাকে অভিনন্দন জানাচ্ছেন? কয়লা মাফিয়া জয়দেব খাঁ পুলিশের খাতায় একজন দাগি কয়লা মাফিয়া। তাঁর বিরুদ্ধে সিআইডি (CID) তদন্ত চলছে। একাধিক মামলা রয়েছে।

এদিকে আরও একটি বিষয় নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়। ফের প্রকাশ্যে বিজেপির দ্বিচারিতা। কয়লাপাচার কাণ্ড নিয়ে যখন একের পর এক কুৎসা, অপপ্রচার, মিথ্যাচার করে বেড়াচ্ছেন এ রাজ্যের বিজেপি নেতারা, ঠিক তখনই বাংলায় এসে সটান এক কয়লা মাফিয়ার হোটেলে উঠলেন কেন্দ্রীয় কয়লা মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। বিষয়টি নিয়ে রাজ্য রাজনীতিতে শোরগোল পড়ে গিয়েছে। শুধু ওঠাই নয়, সেই হোটেলে রাত্রিবাস, এমনকী ইসিএলের (ECL) গুরুত্বপূর্ণ বৈঠকও করেছেন তিনি।

 

গত, বুধবার দু’দিনের সরকারি সফরে দুর্গাপুর আসেন কেন্দ্রীয় কয়লা ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী প্রহ্লাদ যোশি। সেখানে তিনি অবৈধ কয়লা কারবারের বেতাজ বাদশা বলে পরিচিত রাজু ঝাঁয়ের বিলাসবহুল হোটেলে ওঠেন। বুধবার সন্ধ্যায় ইসিএলের শীর্ষ আধিকারিকদের নিয়ে রাজুর হোটেলেই গুরুত্বপূর্ণ রিভিউ মিটিং করেন। সেই মিটিংয়ে নেওয়া হয় একাধিক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত। ওই হোটেলেই রাত্রিবাস করেন মন্ত্রী।

দু’দশকেরও বেশি সময় ধরে শিল্পাঞ্চলের অবৈধ কয়লা কারবারের বেতাজ বাদশা রাজু ঝাঁ। বাম আমল থেকে এখনও পর্যন্ত রাজু একাধিকবার পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়েছে। তার নামে অসংখ্য মামলা ঝুলছে। রাজু ঝাঁয়ের সঙ্গে বিজেপির ঘনিষ্ঠতা গত বিধানসভা ভোটের (Assembly Election) আগে থেকেই। গত বিধানসভা ভোটে একাধিকবার বিজেপির প্রচারে তাকে দেখা গিয়েছিল। যা নিয়ে প্রশ্নের মুখে পড়েছিল বিজেপি। শিল্পাঞ্চলে ইসিএল ও সেইলের একাধিক বিলাসবহুল অতিথি নিবাস থাকতেও কেন সেই কুখ্যাত মাফিয়ার হোটেলে কেন্দ্রীয় মন্ত্রী উঠলেন তা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বেগতিক বুঝে বিজেপি দায় চাপিয়েছে ইসিএলের ঘাড়ে।

 

হোটেলটি রাজু ঝাঁয়ের নামে আর নেই, এই বলে বিতর্কে জল ঢালার চেষ্টা হয়েছিল। কিন্তু গত বছর দুর্গাপুর পুরসভা থেকে ইস্যু করা হোটেলের ট্রেড লাইসেন্সে রাজুর নাম রয়েছে। খুব স্বাভাবিক ভাবেই রাজনৈতিক মহলে প্রশ্ন উঠছে, কয়লা মন্ত্রীরা সরকারি অতিথি নিবাসেই থাকেন। কেন ওই বিশেষ হোটেলে বর্তমান কয়লা মন্ত্রীকে থাকতে হল?

Related articles

বেঁচে থাকলে রবীন্দ্রনাথ-নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত! পুরুলিয়ার সভা থেকে বিজেপিকে আক্রমণ দেবাংশুর

ভাগ্যিস রবীন্দ্রনাথ, নজরুল বেঁচে নেই। নইলে বিজেপি রবীন্দ্রনাথকে রোহিঙ্গা ও নজরুলকে অনুপ্রবেশকারী বলে দাগিয়ে দিত। শনিবার পুরুলিয়া শহরের...

টাকা পেয়েও কাজে দেরি! ‘বাংলার বাড়ি’ নিয়ে কড়া প্রশাসন, রিপোর্ট চাইল নবান্ন

প্রথম দফায় ১ লক্ষ ২০ হাজার টাকা পাওয়ার পরও বহু উপভোক্তা এখনও ‘বাংলার বাড়ি’ প্রকল্পের কাজ শুরু করেননি।...

ঝুলনের চোখে বাংলার সেরা ক্রিকেটার রিচা, মহিলা ক্রিকেটের প্রশংসায় পঞ্চমুখ সৌরভ

বাংলার বিশ্বকাপ জয়ী একমাত্র ক্রিকেট তারকা রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সম্বর্ধনা অনুষ্ঠানে শনিবার ইডেন গার্ডেন্সে বিশেষ অনুষ্ঠানের আয়োজন...

সৌরভ ছাড়া অন্য কারও ICC সভাপতি থাকার কথা নয়: বললেন ‘ঠোঁটকাটা’ মমতা

ছিল বিশ্বজয়ী ক্রিকেটার রিচা ঘোষের (Richa Ghosh) সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শনিবার ইডেনে সেই অনুষ্ঠানে বোমা ফাটালেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের...
Exit mobile version