Tuesday, August 26, 2025

জিটিএ চুক্তি থেকে মোর্চা সমর্থন প্রত্যাহার করতেই সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি

Date:

বিমল গুরুংয়ের দল গোর্খাল্যান্ড টেরিটোরিয়্যাল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (জিটিএ) চুক্তি থেকে সরে আসার পরই ফের সরগরম পাহাড়ের রাজনীতি। আজ, শুক্রবার সই প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত লিখিত আকারে কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারের কাছে পাঠানো হয়েছে দলের তরফ থেকে । আজ, শুক্রবার সাংবাদিক বৈঠক করে একথা জানান মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি । তাঁর দাবি, “জিটিএ গোর্খাদের উন্নয়নের উদ্দেশ্যে তৈরি করা হয়েছিল । কিন্তু এতবছরেও তা কোনওভাবেই গোর্খাদের উন্নয়নের পক্ষে কোনও কাজ করেনি । সেই কারণেই এই সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।”

মোর্চার ওই সমর্থন প্রত্যাহারের বিষয়টি চাউর হতেই জোর জল্পনার সৃষ্টি হয়েছে পাহাড়ে । যদিও এদিন রোশন গিরির অভিযোগ, “আমরা পরবর্তীতে পাহাড়, তরাই ও ডুয়ার্সে কোনoরকম অশান্তি, আন্দোলন করব না । আমাদের আন্দোলন হবে দিল্লিমুখি । আমরা জিটিএ-র জন্য ৩৯৬টি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানিয়েছিলাম । কিন্তু মাত্র পাঁচটি মৌজা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছিল । বাদ দেওয়া হয়েছে তরাই, ডুয়ার্সকে । এসবের জন্যই আমরা সমর্থন প্রত্যাহার করলাম ৷”

এদিকে সমর্থন প্রত্যাহার নিয়ে পালটা মোর্চাকেই একহাত নিয়েছেন জিটিএ-র বর্তমান কার্যনির্বাহী আধিকারিক অনিত থাপা । তিনি বলেন, “মোর্চার নেতারা আইন, চুক্তি সম্পর্কেই ঠিকমতো জানে না । এরা আবার পাহাড়ের নেতা হয়েছেন । সবই হেরো নেতা । নির্বাচনে জিততে পারেনি । জিটিএ নির্বাচন হয়ে গিয়েছে, আর আমরা সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেয়েছি । আমরা নির্বাচিত হয়েছি । ফলে তাঁদের কথার আর কোনও গুরুত্ব নেই ।”

তৃণমূল নেতা তথা শিলিগুড়ির মেয়র গৌতম দেব বলেন, “শূন্যর সঙ্গে শূন্য যুক্ত হলে ফলাফল শূন্যই হয় । ফলে গুরুত্বহীন নেতার গুরুত্বহীন কথার কোনও মানে হয় না । এখন পাহাড় শান্ত রয়েছে । মমতা বন্দ্যোপাধ্যয়ের নেতৃত্বে পাহাড়ে উন্নয়ন হচ্ছে । বিজেপি সত্যিই কিছু করেনি । প্রতিবার বিধানসভা অথবা লোকসভা নির্বাচনের আগে এই ধরনের জিগির তোলা হয় ।”

প্রসঙ্গত, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা প্রধান বিমল গুরুং আগেই ঘোষণা করেছিলেন জিটিএ ছেড়ে তাঁর দল বেরিয়ে যাবে। সেইমতো আজ, শুক্রবার গোর্খা টেরিটোরিয়াল অ্যাডমিনিস্ট্রেশন ছেড়ে বেরিয়ে গেল গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা। ২০১১ সালে কেন্দ্র-রাজ্য ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার মধ্যে ত্রিপাক্ষিক চুক্তি হয়। সেই চুক্তি থেকে বেরিয়ে গিয়ে, জিটিএ ছাড়ার সিদ্ধান্ত আজ, শুক্রবার ঘোষণা করেছেন গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার সাধারণ সম্পাদক রোশন গিরি। এই মর্মে রাষ্ট্রপতি দ্রৌপদী মুর্মু, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ও মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কে চিঠি দিয়েছে গোর্খা জনমুক্তি মোর্চা নেতৃত্ব।

গত, সোমবার ২৩ জানুয়ারি কালিম্পংয়ে নবগঠিত ভারতীয় গোর্খাল্যান্ড সংঘর্ষ কমিটির সভা থেকে জিটিএ ছাড়ার কথা ঘোষণা করেছিলেন বিমল গুরুং। ২০১১ সালে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় বাংলায় ক্ষমতায় আসার পর জিটিএ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়। কেন্দ্র ও রাজ্যের প্রতিনিধি ও গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার তরফে রোশন গিরি এই চুক্তিতে স্বাক্ষর করেন। যদিও তখন গোর্খাল্যান্ডের দাবিকে বজায় রেখেই জিটিএ চুক্তিতে স্বাক্ষর করে মোর্চা। কিন্তু তারপরেও পাহাড়ে অশান্তি কমেনি। বিভিন্ন সময় জিটিএ চুক্তি পুরোদস্তুর কার্যকর করার দাবিতে আন্দোলন হয় পাহাড়ে। পৃথক রাজ্যের দাবিতেও উত্তাল হয় পাহাড়। ঝড়ে রক্তও। পাহাড় ছাড়তে হয় বিমল গুরুংকে। এরপর তৃণমূলের সঙ্গে আঁতাত করে গুরুং পাহাড়ে ফিরলেও সম্পর্ক চিরস্থায়ী হয়নি।

সম্প্রতি, পাহাড়ের রাজনীতিতে নয়া সমীকরণ তৈরি হয়েছে। দার্জিলিং পুরসভা হাতছাড়া হওয়ার পর হামরো পার্টির নেতা অজয় এডওয়ার্ড, গোর্খা জনমুক্তি মোর্চার বিমল গুরুং, বিনয় তামাংরা মিলে তৈরি করেছেন ভারতীয় গোর্খাল্যান্ড সংঘর্ষ কমিটি। সেই কমিটির সভা থেকেই গুরুং জানান, জিটিএ চুক্তি থেকে বেরিয়ে আসতে তাঁরা কেন্দ্র ও রাজ্য সরকারকে চিঠি দেবে। এনিয়ে তাঁরা আইনি পরামর্শও নিচ্ছেন। এছাড়াও গোর্খাল্যান্ড আন্দোলনকে কোন পথে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া হবে, তা নিয়ে রোড ম্যাপ ঠিক করতে ৯ সদস্যের কমিটিও গঠন করা হয় ওই সভা থেকে। এই কমিটি ৫ ফেব্রুয়ারির মধ্যে তাঁদের রিপোর্ট দেবে। যে রিপোর্টের ওপর ভিত্তি করেই আন্দোলন কর্মসূচি ঠিক হবে।

আরও পড়ুন- BBC Documentry: প্রদর্শনের আগেই দিল্লি বিশ্ববিদ্যালয়ে পুলিশের ধড়পাকড়, বিদ্যুৎহীন প্রেসিডেন্সি

Related articles

দুর্গাপুজোর আগে রাজ্যে ডেঙ্গি-উদ্বেগ! টানা বৃষ্টিতে বাড়ছে আশঙ্কা 

দুর্গোৎসবের মুখে একদিকে নিম্নচাপের জেরে টানা বৃষ্টি, অন্যদিকে ডেঙ্গি সংক্রমণ রাজ্যবাসীর কপালে ভাঁজ বাড়াচ্ছে। জুলাইয়ের শেষ দিক থেকে...

মহিলা স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হঠাৎ মুখ্যমন্ত্রী! কিনলেন শাড়ি 

বর্ধমানে প্রশাসনিক সভায় এসে হঠাৎ স্বনির্ভর গোষ্ঠীর স্টলে হাজির মুখ্যমন্ত্রী। শুধু মহিলাদের হাতের কাজই ঘুরে দেখলেন না, কেনাকাটাও...

ধনধান্যে ভরে, মা এসেছে ঘরে: মুখ্যমন্ত্রীর লেখা-সুরে গান এবার দুর্গাপুজোয়

বাংলা ও বাঙালির বড় উৎসব আর পুজোর গান— এক অপূর্ব মেলবন্ধন। এখন দুর্গাপুজোয় মণ্ডপে মণ্ডপে বাজে মুখ্যমন্ত্রীর লেখা...

প্রধানমন্ত্রী বাংলা ছাড়তেই জীবনকৃষ্ণের গ্রেফতারি তৃণমূলকে অপদস্থ করার চক্রান্ত, তোপ কুণালের      

ইডির (ED) হাতে জীবনকৃষ্ণ সাহার (Jiban Krishna Saha) গ্রেফতারি আসলে তৃণমূল কংগ্রেসকে (TMC) অপদস্থ করার চক্রান্ত। প্রধানমন্ত্রী বাংলায়...
Exit mobile version