ঘটনার সূত্রপাত গত ২১ জুলাই। আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানর এক মঞ্চে চিত্রশিল্পী শুভাপ্রসন্নের একটি মন্তব্য ঘিরে জোর বিতর্ক শুরু হয়। বিষয়টি থেমেও গিয়েছিল, কিন্তু শুভাপ্রসন্ন খুঁচিয়ে তা জিইয়ে রাখার মতো তৎপরতা দেখাতে শুরু করেছেন। আর তা নিয়েই এবার কড়া ভাষায় প্রতিক্রিয়া দিলেন কুণাল ঘোষ। কুণাল এক্ষেত্রে অবশ্য দলীয় মুখপাত্র হিসেবে নয়, মূলত ব্যক্তিগত জায়গা থেকেই তাঁর প্রতিক্রিয়া দেন।

ভাষা দিবসের দিন বেশ কিছু শব্দ নিয়ে মুখ্যমন্ত্রীর সামনেই বিতর্ক তৈরি করেছিলেন শুভাপ্রসন্ন। তারপরেও বিষয়টি থামেনি। শুভাপ্রসন্ন এক্ষেত্রে আত্মকেন্দ্রিক হয়ে ইগোর জায়গা থেকে বিষয়টিকে দেখছেন। যেখানে তাঁর মনোভাব এইরকম, মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নয়, উনিই ঠিক। রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকেই নাকি সেদিন মুখ্যমন্ত্রী তাঁর “বিরোধিতা” করেছিলেন।
ঠিক কী ঘটেছিল? “পানি” বা ”দাওয়াত”-এর মতো শব্দগুলির বাংলা ভাষায় ব্যবহারের ক্ষেত্রে বেশ আপত্তির কথা শুনিয়েছিলেন শুভাপ্রসন্ন। মাতৃভাষা দিবসে দেশপ্রিয় পার্কের সেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তিনি শুভাপ্রসন্নের বিরোধিতা করেন। মুখ্যমন্ত্রীর ব্যাখ্যা ছিল, দাওয়াত শব্দটি বাংলাদেশের কথা। যাঁরা ওপার বাংলা থেকে এসেছেন, তাঁরা ওই ভাষাকেই গ্রহণ করেছেন। মুখ্যমন্ত্রীর কথায়, “আমি মাতৃভাষাকে চেঞ্জ করতে পারি না। যেটা শিখে এসেছে, সেটা চেঞ্জ করবে কীভাবে?” সেদিনের ঘটনার পর থেকে বেশ গুঞ্জন ছড়িয়েছে বিভিন্ন মহলে। বিশেষ করে শুভাপ্রসন্নর মতো একজন ”তৃণমূল্পন্থী” বুদ্ধিজীবীর এহেন আচরণ অনেকেই ভালো নজরে দেখছেন না।

বিষয়টি নিয়ে সংবাদ মাধ্যমে পাল্টা বক্তব্য পেশ করে বিতর্ককে আরও গাঢ় করতে চাইছেন শুভাপ্রসন্ন। পরবর্তী সময়ে সংবাদমাধ্যমকে শুভাপ্রসন্ন জানিয়েছেন, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় নাকি “রাজনৈতিক অসুবিধার” বা “রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা”র কারণে ভাষা দিবসে তাঁর মন্তব্যে আপত্তি জানিয়েছেন। অর্থাৎ শুভাপ্রসন্ন পরোক্ষে বলতে চাইছেন, মুখ্যমন্ত্রী নয় তিনিই ঠিক, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় রাজনৈতিক বাধ্যবাধকতা থেকে সেদিনের মঞ্চে আপত্তি করেছিলেন।

আপাত নিরীহ একটি বিষয় নিয়ে খোদ শুভাপ্রসন্ন যখন জলঘোলা করতে চাইছেন, তখন কিছুটা বাধ্য হয়েই বৃহস্পতিবার মুখ খুললেন তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক তথা মুখপাত্র কুণাল ঘোষ। সাংবাদিকরা প্রশ্ন করলে প্রথমেই কুণাল জানান, যা বলার তাঁর নেত্রী বলেছেন, তাই এ বিষয়ে তাঁর বলার বিশেষ অবকাশ থাকে না। তবে শুভাপ্রসন্ন বিষয়টি নিয়ে ”অত্যন্ত বাড়াবাড়ি” করছেন বলেই প্রতিক্রিয়া দেন কুণাল।

তাঁর কথায়, “শুভাপ্রসন্ন সত্যিকারের মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের শুভানুধ্যায়ী হলে মুখ বন্ধ রাখা উচিত। একাধিক শব্দ চলতি কথায় উঠে আসে। ভারতের ক্ষেত্রে উদারতার ডাক কবি দিয়ে গিয়েছিলেন। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় যথেষ্ট উদারতার পরিচয় দিয়েছেন ভাষা নিয়ে। ভাষার মূল উদ্দেশ্য মনের ভাব প্রকাশ করা। শুভাদা অত্যন্ত বাড়াবাড়ি করছেন। আমাদের দলের কারও কথা বলা উচিত, যাতে ওনার জমি বা কমিটিতে জায়গা লাগবে কিনা। উনি তো নিজের শিল্প সংস্থার নাম রেখেছেন আর্টস একর। তখন বাংলা ভাষার তো ধ্বজা ধরেননি। আমাদের দলের উনি কেউ নন। ওনার সঙ্গে কথা বলা হোক, বাড়তি জমি বা কমিটিতে জায়গা লাগবে কিনা।” দলের মুখপাত্র নয়, ব্যক্তিগত জায়গা থেকে কুণাল ঘোষ এদিন শুভাপ্রসন্নকে সুবিধাবাদী বলেও মন্তব্য করেন।
