এগরায় ভয়াবহ বিস্ফোরণের (Egra Blast) ঘটনায় FIR দায়ের করল পুলিশ। ইতিমধ্যে আইপিসির (IPC) ১৮৮, ২৮৬, ৩০৪ ধারায় দায়ের হয়েছে মামলা। পাশাপাশি বাজি কারখানার মালিক ভানু বাগের (Bhanu Bag) বিরুদ্ধে এফআইআর (FIR) দায়ের করা হয়েছে। মঙ্গলবারই পূর্ব মেদিনীপুরের পুলিশ সুপার জানিয়েছিলেন, এই ভানু বাগকে আগেও গ্রেফতার করা হয়েছিল। পরে জামিন পান তিনি। তবে শুধু বেআইনি আতসবাজিই নয়, ভানু বাগের নেতৃত্বেই বাঁধা হতো বোমা। কাজে লাগানো হতো স্থানীয় মহিলাদের। এমনই চাঞ্চল্যকর দাবি মৃত জয়ন্ত জানার পরিবারের। বেআইনিভাবেই সেখানে বোমা বাধা হতো এবং সবটাই জানতেন ভানু বাগের স্ত্রী, এমনটাই দাবি জয়ন্তর স্ত্রীর।

উল্লেখ্য, এগরায় ভানু বাগের যে বেআইনি বাজি কারাখানায় বিস্ফোরণে ৯ জনের মৃত্যু হয়েছে সেই কারখানাতেই কাজ করতেন জয়ন্ত। আর ছেলের মৃত্যুতে শোকে পাথর হয়ে গিয়েছেন তাঁর মা। তিনি জানাচ্ছেন প্রায় তিন বছর ধরে এই কারাখানায় কাজ করত তাঁর ছেলে। তিনি আরও জানান, ছেলে বোমা বাঁধার কাজ করত বলে জানতাম। তবে কী বোমা বাঁধত জানি না। তিনশো, সাড়ে তিনশো টাকা দৈনিক মজুরি পেত। আমি কতবার ওকে এই কাজ করতে নিষেধ করেছিলাম। জানতাম এটা বেআইনি কাজ। কিন্তু, ও কথা শোনেনি। আজ এই পরিণত হল। পাশাপাশি জয়ন্তর স্ত্রী ভানুর বিরুদ্ধে বিস্ফোরক অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন, বোমা তৈরির খুব কম সামগ্রীই এই কারখানায় থাকত। বাকি সবটাই আসতো বাইরে থেকে। ওর ছেলের বাড়িও কাছে। ওখানে গেলেও লুকানো বোমা দেখতে পাওয়া যাবে।

এদিকে স্থানীয় সূত্রে খবর, বিস্ফোরণের দিন ভানুর শরীরেও আঘাত লাগে। কিন্তু, পরিস্থিতি হাতের বাইরে বেরিয়ে যাচ্ছে দেখে তিনি এবং তাঁর স্ত্রী চম্পট দেন এলাকা থেকে। বাইকে করে তাঁদের ওড়িশার (Odissa) দিকেও যেতে দেখেন এলাকার বাসিন্দারা। সূত্রের খবর, সাহারা গ্রাম লাগোয়া ওড়িশার একটি গ্রামের বাড়িতে লুকিয়ে রয়েছেন ভানু। পুলিশের নজর এড়াতে বাড়িতেই চিকিৎসা করাচ্ছেন। সেই বাড়িটা আদতে কোথায় তা খোঁজার চেষ্টা করছে পুলিশ। খোঁজ নেওয়া হচ্ছে বালেশ্বর জেলায়। ইতিমধ্যেই ভানু বাগ, তাঁর ছেলে পৃথ্বীজিৎ বাগ এবং ভানুর স্ত্রীর নামে ভারতীয় দণ্ডবিধির ১৮৮, ৩০৪, ২৮৬ ও ফায়ার সার্ভিসেস অ্যাক্টের ২৪ ও ২৬ ধারায় FIR দায়ের হয়েছে বলে খবর। পাশাপাশি ঘটনায় দেবসুন্দর জানা ও তপন দেবনাথ নামে ২ জনকে গ্রেফতার করেছে জেলা পুলিশ। অভিযোগ, তাঁরা কারখানায় বারুদ মজুত করত। এদিকে বাজি কারখানার মালিক কৃষ্ণপদ বাগ ও তাঁর স্ত্রীর বিরুদ্ধে বিশেষ এফআইআর করেছে রাজ্য। পাশাপাশি ঘটনায় জড়িত সন্দেহে আরও ৪ জনকে আটক করে জেরা করা হচ্ছে বলে জানিয়েছে পুলিশ।

তবে এদিন সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তৃণমূলের রাজ্য সাধারণ সম্পাদক কুণাল ঘোষ (Kunal Ghosh) বলেন, এই ঘটনায় মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ইতিমধ্যে রাজধর্ম পালন করেছেন। ইতিমধ্যে, ওসি ও আইসিকে শোকজ করা হয়েছে। পাশাপাশি মুখ্যমন্ত্রী সাফ জানিয়েছেন, এনআইএ তদন্তে আপত্তি নেই রাজ্যের। পাশাপাশি এদিন অভিযুক্ত ভানু বাগের বিরুদ্ধে সরব হন কুণাল। তিনি অভিযোগ করেন, এই লোকটা আগে সিপিএম করত কিন্তু পরে অধিকারী পরিবার ঘনিষ্ঠ হয়ে পড়ে সে। তবে এদিন বিজেপির দিকেই অভিযোগের আঙুল তোলেন কুণাল। পাশাপাশি সাংসদ দিলীপ ঘোষকেও আক্রমণ করেন কুণাল। তিনি সাফ জানান, এমন পরিস্থিতিতে কেন দেখা যাচ্ছে না সাংসদকে? কোথায় তিনি? একটা দুর্ঘটনার খবর পাওয়া গিয়েছে। কোনও বোমার কারখানার হদিশ পাওয়া যায়নি। তবে এদিন বিরোধী দলনেতা শুভেন্দু অধিকারীকেও একহাত নেন কুণাল। অধিকারী পরিবারের ছত্রছায়ায় কীভাবে বাড়বাড়ন্ত ভানুর তার আসল রহস্য সামনে আনেন তৃণমূল কংগ্রেসের মুখপাত্র। তিনি মনে করিয়ে দেন বিরোধী দলনেতা দুদিন আগে বিজেপিতে গিয়ে বড় নেতা হয়ে গিয়েছেন। আসলে জনবিচ্ছিন্ন, তাই এসব করে প্রচারে আসতে চাইছেন।