বঙ্গে বিনিয়োগে আগ্রহী, বিশ্বের ৪০ দেশের প্রতিনিধির সঙ্গে বৈঠক অমিত মিত্রের

বাংলায় বিনিয়োগ টানতে বিশ্ববঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনের(Bengal Global Business Summit) আয়োজন করছেন রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের(Mamata Banerjee) মুখ্য উপদেষ্টা ডঃ অমিত মিত্রর(Amit Mitra) সঙ্গে বৈঠকে বিশ্বের ৪০ টি দেশের কূটনীতিক এবং রাষ্ট্রদূতরা বাংলায় বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করলেন। মঙ্গলবার সকাল ১১:১৫ থেকে দুপুর ১.৩০ পর্যন্ত রাজধানী দিল্লির তাপ্যালেস হোটেলে অমিত মিত্রর সঙ্গে বৈঠক হয় বিভিন্ন দেশের কূটনৈতিকদের। সঙ্গে ছিলেন রাজ্যের শিল্প, বাণিজ্য দপ্তরের যুগ্ম সচিব রাজু মিশ্র সহ রাজ্য শিল্প দপ্তরের আমলারা। উল্লেখ্য, ২১ এবং ২২ নভেম্বর বেঙ্গল গ্লোবাল বিজনেস সামিট চলবে। বিদেশমন্ত্রকের আধিকারিক সি রাজাশেখরও ছিলেন এদিনের বৈঠকে। সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত মিত্র জানান, ৪০টি দেশের কূটনীতিবিদরা উপস্থিত ছিলেন এই বৈঠকে। বাংলার বিভিন্ন “গেম চেঞ্জার” ক্ষেত্রগুলির লগ্নিতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা।

অমিত মিত্র জানান, ইউরোপিয় ইউনিয়নের ১০টি দেশের কূটনীতিবিদ উপস্থিত ছিলেন বৈঠকে। পূর্ব ইউরোপ থেকে ৮টি দেশ এবং এশিয়ার সমস্ত বড় দেশ উপস্থিত ছিল। ইন্দোনেশিয়া, মালয়েশিয়া, ভিয়েতনামের পাশাপাশি দক্ষিণ আমেরিকা, আফ্রিকার দেশগুলিও বাংলায় বিনিয়োগে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। তিনি বলেন, “কোরিয়া, জাপান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখেছে। এই দুটি দেশেরই প্রতিনিধি ছিলেন। ভূটান, নেপাল, দক্ষিণ পশ্চিম এশিয়ার অনেক দেশ বৈঠকে উপস্থিত থেকে তাদের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন।” ৪০টির বেশি দেশের প্রতিনিধির মধ্যে ১৫ জন কূটনীতিক বক্তব্য রেখেছেন এদিন। কূটনীতিবিদদের সঙ্গে বৈঠকে একটি প্রেজেন্টেশনও দেওয়া হয়েছে।

কূটনৈতিকদের সামনে রাজ্যের তরফে বিশেষভাবে প্রাধান্য দেওয়া হয়েছে, খনিজ, সেল গ্যাস, প্রাকৃতিক গ্যাস, গেইল পাইপলাইন, ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প, সিলিকন ভ্যালি হাব, সিমেন্ট হাব, রেল সরঞ্জাম তৈরি এবং লেদার হাব। সাংবাদিক সম্মেলনে অমিত মিত্র জানান, রাজ্যের অর্থনৈতিক পরিস্থিতিতে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন অন্যান্য দেশের প্রতিনিধিরা। তিনি আরও জানান, কল্যাণীতে দেশের মধ্যে বৃহত্তম লজিস্টিক হাব তৈরি হচ্ছে। সেখানে বিপুল পরিমাণে কর্ম সংস্থান হবে। প্রতিটি শিল্পক্ষেত্রের বিস্তারিত তথ্য দিয়ে কেন সেগুলি গেম চেঞ্জার ক্ষেত্র, তার ব্যখা দেন অমিত মিত্র। বড় শিল্পের জন্য যেমন রাজারহাটের নিউটাউনের সিলিকন ভ্যালিতে ৪০ একর জমিতে দেশের বৃহত্তম ডাটা সেন্টার তৈরির কাজ শুরু করেছে জিও। কূটনীতিবিদরা এই তথ্য কেন্দ্র তৈরির খবরে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন বলে জানান অমিত মিত্র। বড় শিল্পে উৎসাহ দিতে রাজ্য সরকারের তরফে যেমন কম মূল্যে জমি দেওয়া হচ্ছে, তেমনই ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য বিপুল পরিমাণে ঋণ দিয়েছে ব্যঙ্কগুলি। অমিত মিত্র জানান, ২০২২-২৩ অর্থবর্ষে ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্পের জন্য ১.২৮ লক্ষ কোটি টাকা ঋণ দেওয়া হয়েছে। তিনি এদিন জানিয়েছেন, তিরুপতি মন্দির থেকে আনা চুল প্রক্রিয়াকরণ করে তা রপ্তানি করা হয়েছে যার মূল্য ৩৪০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। ডক্টর মিত্র বলেন, এবছর রাজ্যের জিডিপি লক্ষ্যমাত্রা ১৭ লক্ষ কোটি।দেশের চতুর্থ বৃহত্তম অর্থব্যবস্থার রাজ্য পশ্চিমবঙ্গ। প্রসঙ্গত, গত বারের বিশ্ব বঙ্গ বাণিজ্য সম্মেলনে ৩.৪২ লক্ষ কোটি টাকার বিনিয়োগের প্রস্তাব এসেছিল।

উল্লেখ্য, শিল্প সম্মেলনকে সামনে রেখে দিল্লি, চেন্নাই, চণ্ডীগড় এবং মুম্বইতে রোড শোর আয়োজন করা হবে বলেও সিদ্ধান্ত হয়েছে। বিভিন্ন রাজ্যে রোড শোগুলিতেও ক্ষুদ্র শিল্পের বিষয়টি তুলে ধরা হবে। বাংলায় ক্ষুদ্র শিল্পের প্রসারে রাজ্য সরকার কী কী সুবিধা দিচ্ছে তাও জানানো হবে ভিন রাজ্যের শিল্পোদ্যোগীদের। ক্ষুদ্র শিল্পে এখন দেশের মধ্যে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে বাংলা। বিশ্ব বাংলা বাণিজ্য সম্মেলনের প্রচারের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে চেম্বার অফ কমার্সকে । মুম্বইয়ে শিল্প সম্মেলনের প্রচারের দায়িত্বে ফিকি, চেন্নাইয়ের দায়িত্বে সিআইআই, দিল্লির দায়িত্বে অমিত মিত্র, কর্ণাটকের দায়িত্বে ইন্ডিয়ান চেম্বার্স।

Previous articleকার্গিলে ‘কাবুলিওয়ালা’!সেপ্টেম্বরের প্রথম সপ্তাহেই আউটডোর
Next articleভাইস চেয়ারম্যানের বিরুদ্ধে মারধরের অভিযোগে টাকি পুরসভার পাঁচ কাউন্সিলরের পদত্যাগ