ওয়াগনার(Wagner) বাহিনীর প্রধান অলিগার্চ ইয়েভজেনি প্রিগোজিনের(Yevgeny Prigozhins) মৃত্যু কোনও সাধারণ দুর্ঘটনা নয়, পরিকল্পিতভাবে খুন। আর এই হত্যার ষড়যন্ত্র করা হয়েছে রাশিয়ার(Russia) প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের(Vladimir Putin) নির্দেশে। বিস্ফোরক এমনই দাবি করলেন মার্কিন গুপ্তচর সংস্থা সিআইএ-এর প্রাক্তন আধিকারিক ড্যানিয়েল হফম্যান। বৃহস্পতিবার তিনি দাবি করেন, “কোনও সন্দেহ নেই পুতিনের নির্দেশেই প্রিগোজিনকে হত্যা করা হয়েছে। এই উদ্দেশ্যেই জুন মাসে ব্যর্থ বিদ্রোহের পরেও তাঁকে গ্রেফতার করা হয়নি। এমনকি, স্বাধীন ভাবে ঘোরাফেরার অধিকার দেওয়া হয়েছিল।” অন্যদিকে, প্রগোজিনের মৃত্যুর খবর প্রকাশ্যে আসার পর মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “ঠিক কী হয়েছে আমি জানি না। তবে এই মৃত্যুতে একেবারেই বিস্মিত হইনি।
উল্লেখ্য, বুধবার মস্কো থেকে সেন্ট পিটার্সবার্গগামী একটি বেসরকারি সংস্থার ‘এমব্রেয়ার লিগ্যাসি ৬০০’ বিমান পশ্চিম রাশিয়ার তেভর অঞ্চলের কুজেনকিনো গ্রামের কাছে ভেঙে পড়ে। বিমানটিতে প্রিগোঝিন-সহ মোট ১০ জন ছিলেন। তাঁদের সকলেরই মৃত্যু হয়। অথচ, ওড়ার আগে নিয়মমাফিক ‘ফিট’ সার্টিফিকেট ছিল বিমানটির। এমনকি, ভেঙে পড়ার মাত্র ৩০ সেকেন্ড আগে পর্যন্ত বিমানের পাইলটের সঙ্গে ইন্টারনেট-নির্ভর রেডার ব্যবস্থার যোগাযোগ ছিল। প্রিগোজিন ছাড়াও ওই বিমানে ছিলেন ওয়াগনার ভাড়াতে যোদ্ধা বাহিনীর গুরুত্বপূর্ণ কম্যান্ডার দিমিত্রি উৎকিন। এই ঘটনায় পিছনে রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের হাত রয়েছে বলে অভিযোগ করলেন একদা মস্কো-সহ গোটা রাশিয়া জুড়ে সিআইএ নেটওয়ার্কের দায়িত্বপ্রাপ্ত হফম্যান। তাঁর দাবি, “সোভিয়েত যুগে গুপ্তচর সংস্থা কেজিবির প্রধান ছিলেন পুতিন। গুপ্তহত্যায় বর্তমান রুশ প্রেসিডেন্টের বিশেষ প্রশিক্ষণ রয়েছে। এবং পুতিনের নির্দেশেই সাজানো বিমান দুর্ঘটনায় খুন করা হয়েছে প্রগোজিনকে।” পাশাপাশি মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন বলেন, “ঠিক কী হয়েছে আমি জানি না। তবে এই মৃত্যুতে একেবারেই আশ্চর্য হইনি।” পাশাপাশি তিনি আরও বলেন, “রাশিয়াতে এমন ঘটনা খুব কমই রয়েছে যার পিছনে পুতিনের হাত নেই। তবে এই বিষয়ে উত্তর দেওয়ার মতো বিশেষ কিছু আমি জানি না।”
একদা রুশ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের ঘনিষ্ঠ ওয়াগনার প্রধানকে গত জুনে পুতিন-বিরোধী ‘বিদ্রোহে’ জড়িয়ে পড়তে দেখা যায়। মঙ্গলবার রুশ ভাড়াটে যোদ্ধাদলের নেতা প্রিগোঝিন ভিডিয়ো বার্তায় জানিয়েছিলেন, এখন আফ্রিকার মরুভূমিই তাঁর ঠিকানা। ভিডিয়ো বার্তায় তিনি বলেন, “এখানে তাপমাত্রা ৫০ ডিগ্রির বেশি। তবে আমরা খুশিতেই রয়েছি। ওয়াগনার এখন সব মহাদেশে রাশিয়ার গৌরব বাড়াতে অবদান রেখেছে। এ বার আফ্রিকার মানুষকে মুক্তি এবং আনন্দের স্বাদ দিতে এবং তাঁদের জন্য ন্যায়বিচার নিশ্চিত করতে আমরা কাজ করব। আমরা ইসলামিক স্টেট (আইএস), আল কায়দা-সহ সব জঙ্গির দুঃস্বপ্নে পরিণত হব।”
প্রসঙ্গত, গত জুন মাসে ওয়াগনার যোদ্ধারা ইউক্রেন সীমান্তবর্তী একাধিক এলাকার দখল নিয়েছিল। এর পর তারা রাশিয়ার রাজধানী মস্কোর উদ্দেশে অভিযান শুরু করে। কিন্তু সে সময় পুতিন দ্রুত নিজের অনুগত রুশ সেনাকে সামনে রেখে ‘বিদ্রোহীদের’ কোণঠাসা করেছিলেন। প্রিগোঝিন এর পরে রাশিয়া থেকে বেলারুশে চলে গিয়েছিলেন বলে বিভিন্ন পশ্চিমী সংবাদমাধ্যম জানিয়েছিল। পুতিন-ঘনিষ্ঠ বেলারুশের প্রেসিডেন্ট আলেকজ়ান্ডার লুকাশেঙ্কো দাবি করেছিলেন, তিনিই মস্কোর সঙ্গে ওয়াগনার বাহিনীর সমঝোতা করিয়েছেন। এর পর জুলাই মাসের গোড়ায় অভিযোগ ওঠে, পুতিনের নির্দেশে খুন করা হয়েছে ওয়াগনার প্রধানকে। কিন্তু সেই জল্পনা মিথ্যা প্রমাণিত করে সমাজমাধ্যমে ভিডিয়ো পোস্ট করে বেঁচে থাকার বার্তা দিয়েছিলেন তিনি।