চাঁদের মাটিতে ভারতের চন্দ্রযান বিক্রমের সাফল্যের পিছনে পরোক্ষে অবদান রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরেরও। বিষয়টির গভীরে ঢুকতে হলে জানতে হবে সুবর্ণ অতীত। ইতিহাসের পাতা ধরে ফিরে যেতে হবে অনেকটা পিছনে। পদ্মভূষণ ডঃ বিক্রম আম্বালাল সারাভাই। যাঁকে বলা হয় ভারতের মহাকাশ গবেষণা কেন্দ্র ইসরোর প্রাণপুরুষ। চন্দ্রযান ৩-এর ঐতিহাসিক সাফল্যের পর বিশ্বজুড়ে ভারতীয় মহাকাশ গবেষণা সংস্থার জয়জয়কার। আর এখানেও বারে বারে উঠে আসছে সেই মহান বিজ্ঞানী ডঃ বিক্রম আম্বালাল সারাভাইয়ের নাম। তাঁকে সম্মান জানাতেই ল্যান্ডারের নাম ‘বিক্রম’ রেখেছে ইসরো। প্রোপালসন মডিউল থেকে বিচ্ছিন্ন হওয়ার পর এর কাঁধে চেপেই একমাত্র উপগ্রহে পদার্পণ করেছে চন্দ্রযান ৩। সারাভাইয়ের বিশ্বখ্যাত মহাকাশ বিজ্ঞানী হয়ে ওঠার নেপথ্যে বড়সড় অবদান রয়েছে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের।

১৯১৯ সালের ১২ অগাস্ট আমদাবাদে জন্মগ্রহণ করেন আম্বালাল সারাভাইয়ের ছেলে বিক্রম সারাভাই। তিনি ছিলেন আম্বালাল ও সরলা দেবীর আট সন্তানের একজন। ১৯২০ সালে পরাধীন ভারতে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর যখন আমদাবাদ ভ্রমণে এসেছিলেন, তিনি আম্বালাল সারাভাইয়ের বাড়িতে অতিথি হিসেবে থেকে ছিলেন। দূরদর্শী রবীন্দ্রনাথ তখনই ছোট্ট বিক্রম সারাভাইকে দেখেই বলেছিলেন, “এই ছেলে বড় হয়ে বিরাট বড়ো কিছু করবে।”


পরবর্তী সময়ে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখা একটি চিঠিই বিক্রম সারাভাইকে পৌঁছে দিয়েছিল বিশ্বের আঙিনায়। আজ সেই বিক্রম পৃথিবীর কক্ষপথ ছাড়িয়ে পৌঁছে গিয়েছে চাঁদের দেশে। আর সেই জায়গা থেকেই অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ হয়ে উঠছে রবি ঠাকুরের সেই সেই সুপারিশ পত্র। গুজরাত কলেজ থেকে বিজ্ঞান নিয়ে স্নাতক হয়ে বিক্রম যখন কেমব্রিজে অঙ্ক ও বিজ্ঞান নিয়ে পড়াশুনো করতে যাচ্ছিলেন, তখন সুপারিশপত্র লিখে দেন রবীন্দ্রনাথ। ওই বিশ্ববিদ্যালয় থেকে ডক্টরেট ডিগ্রিও লাভ করেন বিক্রম।

সুপারিশপত্রে কবিগুরু লিখেছিলেন, ‘কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিক্রম সারাভাইয়ের নাম অত্যন্ত আনন্দের সঙ্গে সুপারিশ করছি। বিজ্ঞানের প্রতি এই তরুণের প্রবল আগ্রহ রয়েছে। আমি নিশ্চিত, কেমব্রিজে পড়ার সুযোগ পেলে ও বিশেষ উপকৃত হবে।’ সারাভাইয়ের পরিবারের সঙ্গেও তাঁর ব্যক্তিগত সম্পর্ক ও যোগাযোগের কথাও ওই সুপারিশপত্রে উল্লেখ করেছিলেন রবীন্দ্রনাথ। লিখেছিলেন, ‘বিক্রম ও তাঁর পরিবারকে ব্যক্তিগতভাবে চিনি। বোম্বে প্রেসিডেন্সির অত্যন্ত সমৃদ্ধশালী ও সংস্কৃতিবান পরিবারের সদস্য। তাঁর এক ভাই ও বোন বর্তমানে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশুনো করছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য বিক্রম একবারে যোগ্য প্রার্থী।’ টাইপ করা এই চিঠির নীচে রয়েছে রবীন্দ্রনাথের স্বাক্ষর। এই সুপারিশ পত্র এখন ভাইরাল সোশ্যাল মিডিয়ায়।

