পশ্চিমবঙ্গ দিবস নিয়ে বিজেপির ঘৃণ্য রাজনীতির বিরোধীতায় পশ্চিমবঙ্গ দিবসের দিন ঠিক করতে মঙ্গলবার নবান্ন সভাঘরে বৈঠকে বসেছিলেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। সেই বৈঠকে বিরোধীদের কেউ সামিল না হলেও উপস্থিত ছিলেন রাজ্য সরকারের সব মন্ত্রী সহ বুদ্ধিজীবীদের অধিকাংশই। সেই বৈঠক থেকে বেছে নেওয়া হল বাংলার জন্য রাষ্ট্রীয় গান। বুদ্ধিজীবীদের পরামর্শ মতো এই বৈঠক থেকে কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সম্মান দিয়ে তাঁর ‘বাংলার মাটি বাংলার জল’ গানটি পশ্চিমবঙ্গের রাষ্ট্রীয় গান হিসেবে বেছে নেওয়া হল। অন্যদিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে এখনও কোনও নির্দিষ্ট দিন ঠিক না হলেও বেশিরভাগ বুদ্ধিজীবীরাই ১ বৈশাখ দিনটিকে পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে গণ্য করার পরামর্শ দেন। যদিও মুখ্যমন্ত্রী এখনই এবিষয়ে চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে জানান, সকলের পরামর্শকে গুরুত্ব দিয়ে পশ্চিমবঙ্গ দিবসের দিন ঠিক করা হবে বিধানসভাতে।

কেন্দ্রীয় সরকারের নির্দেশেই রাজভবনে গত ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন করেন রাজ্যপাল সিভি আনন্দ বোস। যদিও ২০ জুন পশ্চিমবঙ্গ দিবস পালন নিয়ে তুমুল আপত্তি তোলে রাজ্য সরকার। তারপর থেকেই পশ্চিমবঙ্গের প্রতিষ্ঠা দিবস পালনের একটি দিন ঠিক করা নিয়ে কোমর বেঁধে নেমে পড়েন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। রাজ্যের প্রতিষ্ঠা দিবস ঠিক করা নিয়ে মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উপস্থিতিতে এদিন নবান্নে চলে চুলচেরা আলোচনা। তথ্য নির্ভর এই আলোচনায় ছিল চাঁদের হাট। কবি-সাহিত্যিক-ইতিহাসবিদ থেকে শুরু করে সমাজের বিভিন্ন ক্ষেত্রে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তিত্বরা ছিলেন বৈঠকে। সেই বৈঠকেই অধ্যাপক-ইতিহাসবিদ সুগত বসু, কবি সুবোধ সরকার, কবি জয় গোস্বামী, সিংহপ্রসাদ ভাদুড়ি, সাহিত্যিক আবুল বাশারদের মতো বিশিষ্ট ব্যক্তিত্বরা। এখানে নৃসিংহ প্রসাদ ভাদুড়ি বলেন, “পয়লা বৈশাখ হলে সেটা অখণ্ড বাংলার একটা ব্যাপার। রবীন্দ্রনাথ ১৯০৫ সালে বঙ্গভঙ্গের পর রাখীবন্ধন করেছিলেন। ওই দিনটায় তিনি হিন্দু-মুসলিমকে একত্রিত করতে পেরেছিলেন। তাঁর রাখী এপার এবং ওপার বাংলা মেনে নিয়েছিল। ভৌগোলিক দিক থেকে তাই রাখীর দিনটিই পশ্চিমবঙ্গ দিবস হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা উচিত।” যদিও তাঁর ভিন্ন মত পোষণ করেন, কবি সুবোধ সরকার, ইতিহাসবিদ সুগত বসুর মত ব্যক্তিত্বরা। তাঁরা ১ বৈশাখের পক্ষে মত দেন। তাঁদের সঙ্গে সহমত পোষণ করেন বেশিরভাগই।

যদিও এবিষয়ে এখনই চুড়ান্ত সিদ্ধান্ত না নিয়ে আগামী ৭ সেপ্টেম্বর বিধানসভা অধিবেশনের প্রথম দিন এই বিষয়টি বিধানসভায় তোলা হবে বলে জানান মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। তার আগে যদিও কারও কিছু প্রস্তাব থাকে তবে তা আলাপন বন্দ্যোপাধ্যায়ের কাছে জানানোর পরামর্শ দেন মুখ্যমন্ত্রী।
