প্রাকৃতিক দুর্যোগে বিপর্যস্ত সিকিম (Sikkim)। তিস্তার জল বিপদসীমা ছাড়িয়েছে। ধসে সম্পূর্ণ বন্ধ বাংলা-সিকিম লাইফলাইন, ১০ নম্বর জাতীয় সড়ক। এ দিকে চুংথামে ভেঙে গিয়েছে জলবিদ্যুৎ প্রকল্পের ড্যাম। তিস্তার জলে সিকিমে বন্যা পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার নিচ্ছে ক্রমেই। প্রশাসন সূত্রে খবর চুংথাম বাঁধ ভেঙে তিস্তার জলস্তর ২০ ফুট বেড়েছে বলে খবর। প্লাবিত বহু এলাকা। আজ সকালে গজলডোবা তিস্তা ব্যারেজ থেকে ৭ হাজার কিউসেক জল ছাড়া হয়েছে। যা এখনও পর্যন্ত এ বছরের পরিমানের অঙ্কে সর্বোচ্চ। ফলে বন্যার ভ্রূকুটি তৈরি হয়েছে। পরিস্থিতি মোকাবিলায় সমস্ত রকমের পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে প্রশাসনের তরফে। সিকিমের মুখ্যমন্ত্রীকে (Sikkim CM) ফোন করে খোঁজ নিয়েছেন স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী (PM Narendra Modi)। লাগাতার বৃষ্টিতে ক্ষতিগ্রস্থ সেনা ছাউনি। নর্থ সিকিমের সিংতামের কাছে তিস্তায় প্রবল জলোচ্ছ্বাস। তিস্তার প্রবল জলোচ্ছ্বাসে ক্ষতিগ্রস্থ সেনা ছাউনি। সূত্রের খবর, সেনা ছাউনি থেকে নিখোঁজ ২৩ সেনা জওয়ান। এখনও পর্যন্ত মোট ২৯ টি জায়গায় ধস (Landslide) নেমেছে বলে খবর।

সিকিমের পরিস্থিতি বারবার করে কেদারনাথের বিপর্যয়ের স্মৃতি ফেরাচ্ছে। বুধবার ভোরে মেঘভাঙা বৃষ্টিতে লোনক হ্রদ ফেটে হুহু করে জল নেমে আসে তিস্তায়। নদীর স্রোতে একাধিক মৃতদেহ ভেসে আসতেও দেখা যায়। সেনা জওয়ানদের খোঁজে তল্লাশি অভিযান শুরু হয়েছে। ঘটনায় শোকপ্রকাশ করেছেন বাংলার মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়। ভয়াবহ বিপর্যয়ের কারণে ইতিমধ্যেই উত্তর সিকিমের বিভিন্ন জায়গায় লাল সতর্কতা জারি করেছে সিকিম সরকার। তিস্তা নদী সংলগ্ন সিকিমের বেশ কয়েকটি গ্রাম সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। ইতিমধ্যেই যুদ্ধকালীন তৎপরতায় মেরামতির কাজ শুরু করে দিয়েছে সেচ দফতর। বাংলা থেকে ইতিমধ্যেই বিশেষ টিম পাঠানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গেও বন্যার আশঙ্কা রয়েছে। শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার থেকে এনডিআরএফ টিম যাচ্ছে তিস্তা সংলগ্ন একাধিক এলাকায়। তিন জেলার জেলাশাসক কে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে এলাকা মনিটরিংয়ের। বন্য়া পরিস্থিতি মোকাবিলায় রাজ্য সরকারের তরফে কন্ট্রোল রুম খোলা হয়েছে । ০৩৩-২২১৪৩৫২৬ ও ১০৭০-এই নম্বরে ২৪ ঘণ্টার ওই কন্ট্রোল রুমে যোগাযোগ করা যাবে। পর্যটন দফতরের তরফেও পৃথক কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। ১৮০০-২১২-১৬৫৫ ও ৯০৫১৮৮৮১৭১ এই দুটি নম্বর চালু হয়েছে। প্রত্যেকটি জেলায় কন্ট্রোলরুম চালু করা হয়েছে। মুখ্যমন্ত্রী খোদ বন্যাপরিস্থিতির ওপর নজরদারি করছেন। উত্তরবঙ্গের কালিম্পং, দার্জিলিং, জলপাইগুড়ি ও কুচবিহারের একাংশের নীচু এলাকা থেকে মানুষকে সরানোর কাজ চলছে । ৫৮০০ র বেশি মানুষকে ২৮ টি ত্রাণ শিবিরে সরিয়ে নিয়ে যাওয়া হয়েছে। দক্ষিণবঙ্গের হাওড়া, হুগলি, পশ্চিম মেদিনীপুর, পুরুলিয়া, বাঁকুড়ার বিস্তীর্ণ এলাকা জলমগ্ন হয়ে পড়েছে। ওই পাঁচ জেলার পাঁচ হাজারের বেশি মানুষকে ১৯০ টি ত্রাণ শিবিরে রাখা হয়েছে।

মুখ্যমন্ত্রী জানান, সেচ মন্ত্রী পার্থ ভৌমিক, বিদ্যুত মন্ত্রী অরূপ বিশ্বাস উত্তরবঙ্গে যাচ্ছেন । রাজ্যের সিনিয়র আইএএস অফিসারদের একচি দলও উত্তরবঙ্গের দিকে রওনা হয়েছে । শিলিগুড়ি, দার্জিলিং ও কোচবিহার থেকে তিস্তা সংলগ্ন একাধিক এলাকায় এনডিআরএফের চারটি দলের পাশাপাশি , সাত কোম্পানি এসডিআরএফ মোতায়েন করা হয়েছে। আরও দু কোম্পানি এনডিআরএফ মোতায়েন করা হচ্ছে। রঙপোতে আটকে থাকা একটি পরিবারকে উদ্ধার করতে এক কলাম সেনা চাওয়া হয়েছে। উত্তরবঙ্গের পাশাপাশি দক্ষিণ বঙ্গের বেশ কিছু এলাকার পরিস্থিতি উদ্বেগজনক বলে মুখ্যমন্ত্রী জানিয়েছেন। তিনি জানান, এখনো পর্যন্ত তিনজনের মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়েছে ।পরিস্থিতির উন্নতি না হওয়া পর্যন্ত সংশ্লিষ্ট সমস্ত কর্মীদের ছুটি বাতিলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে ।
