নিঠারিকাণ্ড ‘বিরলতম’! এলাহবাদ হাই কোর্টের রায়ে অ.ভিযুক্তদের ফাঁ.সির সা.জা রদ, কোন পথে এগোয় তদন্ত?

0
1

নিঠারি হত্যা মামলায় (Nithari Case) সোমবারই ফাঁসির সাজা থেকে রেহাই মিলিছে প্রধান অভিযুক্ত সুরিন্দর কোলি সহ আরেক অভিযুক্ত মণীন্দর সিং পান্ধের। তাদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ ভিত্তিহীন বলে জানিয়েছে এলাহাবাদ হাই কোর্ট। আর সেকারণেই সমস্ত মামলা থেকে তাদের বেকসুর খালাস করে দেওয়া হয়েছে। নয়ডার (NOida) নিঠারি হত্যা মামলাটি দেশের ‘জঘন্যতম’ ঘটনার অন্যতম। উল্লেখ্য, ২০০৫ সালে নিঠারি হত্যা মামলাটি প্রকাশ্যে আসার পর, দেশজুড়ে পড়ে যায় শোরগোল। সুরিন্দর কোলি সহ আরেক অভিযুক্ত মণীন্দর সিং পান্ধের বিরুদ্ধে বেশ কয়েজন শিশুকন্যাকে ধর্ষণ এবং খুনের অভিযোগ ওঠে। সবচেয়ে বেশি আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে কম বয়সিদের মধ্যে। ঘটনার তদন্তে নেমে প্রায় ১ বছর পর অর্থাৎ ২০০৬ সালে দুই অভিযুক্তের খোঁজ পেয়েছিল তদন্তকারীরা।

তবে এই কাণ্ডে শারীরিক নির্যাতন থেকে শুরু করে খুন, নরমাংস ভক্ষণ এবং শবদেহের সঙ্গে সঙ্গমের মতো একাধিক জঘন্য অপরাধের অভিযোগ ছিল। অপরাধের নৃশংসতা এবং বিরল প্রকৃতির কারণে মামলাটি সংবাদমাধ্যমের শিরোনামে ছিল বহুদিন। আদালত সূত্রে খবর, সুরিন্দরকে ১২টি মামলায় এবং মণীন্দরকে দু’টি মামলায় বেকসুর ঘোষণা করেছে উচ্চ আদালত। তাতেই তাঁদের ফাঁসির সাজা রদ হল। ২০০৬ সালের ২৯ ডিসেম্বর নিঠারির ব্যবসায়ী পান্ধেরের বাড়ি থেকে উদ্ধার হয় ১৯টি কঙ্কাল এবং কিছু দেহাবশেষ। এই ঘটনায় গোটা দেশ জুড়ে তোলপাড় শুরু হয়। ঘটনাটি যাতে জানাজানি না হয়, তারপর খুন করত তারা। পাশাপাশি মৃত শিশুদের দেহ সিদ্ধ করে খেত কোলি এবং তার সঙ্গী। এরপর হাড়গোড় পুঁতে ফেলা হত মাটিতে। সিবিআই তদন্তে নেমে সেই সময় কোলি এবং মণীন্দর সিং পান্ধের ঘর থেকে প্রচুর হাড়গোড় উদ্ধার করে। এরপরই সিবিআইয়ের দায়ের করা মামলা নিম্ন আদালত দুই অভিযুক্তকে ফাঁসির সাজা শুনিয়েছিল। যথেষ্ট প্রমাণের অভাবে নিঠারি কাণ্ডের ১৯টি মামলার মধ্যে তিনটি মামলা খারিজ হয়ে গিয়েছিল। বাকি ১৬টি মামলার মধ্যে সাতটিতে ফাঁসির সাজা দেওয়া হয় কোহলিকে। পান্ধের অবশ্য জামিনে ছাড়া পেয়েছিলেন। পরে পিঙ্কি খুনের মামলায় তাঁকেও মৃত্যুদণ্ড দেওয়া হয়।

২০০৬ থেকে কোন পথ ধরে এগিয়েছে নিঠারি কাণ্ডের তদন্ত

  • ২০০৫-’০৬ সালে নয়ডার নিঠারি গ্রাম থেকে নিখোঁজ হতে শুরু করে বেশ কয়েক জন কিশোর-কিশোরী। সেই সংখ্যা বাড়তে থাকায় ঘটনাটি সকলের নজর আসে।
  • তদন্ত করতে গিয়ে বিভিন্ন সূত্র ধরে তদন্তকারী আধিকারিকেরা পৌঁছে যান পান্ধেরের বাংলোয়।
  • পেশায় ব্যবসায়ী মণীন্দর সেক্টর à§©à§§-এর ডি-à§« বাংলোর মালিক ছিলেন। সুরিন্দর নামে এক যুবক ২০০৩ সালে তাঁর বাড়িতে গৃহকর্মী হিসেবে যোগ দেন।
  • ২০০৫ সালের à§® ফেব্রুয়ারি রিম্পা হালদার নামে এক ১৪ বছর বয়সি কিশোরী নিঠারি গ্রাম থেকে নিখোঁজ হয়ে যায়। ওই বছরেরই মার্চ মাসে মণীন্দ্রের বাংলোর পিছনের নর্দমায় প্লাস্টিকের ব্যাগে মোড়া একটি কাটা হাত মেলে।
  • ২০০৬ সালের à§­ মে নিঠারি গ্রামের আরও এক তরুণী মণীন্দরের বাংলোয় গেলেও আর ফেরেনি সে।
  • পরে তদন্ত চালিয়ে পুলিশ মণীন্দরের বাংলোর পিছনের নর্দমা থেকে নরকঙ্কাল ভর্তি অনেকগুলি প্লাস্টিকের ব্যাগ উদ্ধার করে। গ্রেফতার হন মণীন্দর এবং সুরিন্দর।
  • ৬০ দিনের পুলিশ হেফাজতের পরেও অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে কোনও প্রমাণ খুঁজে বার করতে পারেনি সিবিআই।
  • কিন্তু এর পরই জেলাশাসকের উপস্থিতিতে সুরিন্দরের বয়ান রেকর্ড করা হয়। সুরিন্দর নিজের সব দোষ স্বীকার করে।
  • তদন্ত চলাকালীন আরও কিছু মানবকঙ্কাল উদ্ধার করা হয় মণীন্দরের বাংলো চত্বরে। সেই কঙ্কালের মধ্যেই ছিল বাঙালি তরুণী পিঙ্কি সরকারের কঙ্কাল। সিবিআই তদন্তে উঠে আসে, পান্ধেরের বাড়িতে পরিচারিকার কাজ করতেন পিঙ্কি।
  • ২০০৯ সালের ১২ ফেব্রুয়ারি অভিযুক্ত মণীন্দ্র এবং সুরেন্দ্রকে ১৪ বছর বয়সি রিম্পাকে খুন করার জন্য দোষী সাব্যস্ত করা হয়।
  • ২০১৭ সালেও পরিচারিকা পিঙ্কিকে অপহরণ, ধর্ষণ, খুন, প্রমাণ লোপাটের ঘটনায় পান্ধের এবং কোহলিকে দোষী সাব্যস্ত করে গাজিয়াবাদের বিশেষ সিবিআই আদালত। মৃত্যুদণ্ডের রায় দেন বিশেষ সিবিআই আদালতের বিচারক পবন তিওয়ারি।
  • সোমবার নিঠারি কাণ্ডের সেই দুই মূল অভিযুক্তর ফাঁসির সাজা রদ করল এলাহাবাদ হাই কোর্ট।