অনবদ্য কোয়েল! মিতিন মাসির গতিতে তাল মেলালো দর্শক

পুজো (Durga Puja) মানে জমিয়ে ঠাকুর দেখা। রাত জেগে এক মন্ডপ থেকে অন্য মন্ডপে যাওয়ার মাঝে একবার মোবাইলে দেখে নেওয়া কোন হলে কোন সিনেমা চলছে। অনেকে আবার শুধুমাত্র পুজোর সিনেমার (Puja Movies) জন্যই অপেক্ষা করে থাকেন। এবার পুজোয় একগুচ্ছ বাংলা ছবির ভিড়ে সিলভার স্ক্রিনে হাজির মহিলা ডিটেকটিভ মিতিন মাসি (Mitin Mashi)। সঙ্গে উপরি পাওনা সিনেমা হলে বসে জঙ্গলের প্রাকৃতিক সৌন্দর্য উপভোগ করার দারুণ সুযোগ। ট্যাগ লাইন ‘বন্যেরা বনে সুন্দর..’।পুজোয় মুক্তি পেয়েছে অরিন্দম শীল (Arindam Sil) পরিচালিত ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’ (Jongole Mitin Mashi)। এ সিনেমা যতটা জঙ্গলের গল্প বলে, ততটাই যেন কোয়েল মল্লিকের (Koel Mallick) দূরদর্শিতার কথাও অকপটে জানায়। হেভিওয়েট সিনেমার মাঝেই নিজের লড়াইটা জমিয়ে করেছেন রঞ্জিত কন্যা। আর তাঁর দুরন্ত গতিতে পুরোদমে তাল মেলালো বাংলার দর্শক।

মূল গল্প যাঁরা জানেন তাঁদের নতুন করে কিছু বলার নেই। তবে চিত্রনাট্যের প্রয়োজনে একটু আধটু অদল বদল করে টানটান থ্রিলারের আমেজ বজায় রেখেছেন পরিচালক। মিতিন মাসির গল্প মানে যতটা পার্থ মেসো, ততটাই বুমবুম। যদিও এই সিনেমায় কেন কচি সদস্যকে দেখানো হলো না সেটা নিয়ে প্রশ্ন ওঠে। টুপুর যথাযথ। সুচিত্রা ভট্টাচার্যের ‘সারান্ডায় শয়তান’ গল্পটির আধারে ‘জঙ্গলে মিতিন মাসি’র চিত্রনাট্য গড়ে উঠেছে। ২০১৯ এর পর ফের পর্দায় প্রত্যাবর্তন প্রজ্ঞাপারমিতার। এবছর চ্যালেঞ্জটা একটু বেশি জোরালো ছিল। একদিকে মিতিনের প্রতিদ্বন্দ্বী আন্তর্জাতিক চোরাশিকারির দল, অন্যদিকে প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায়, অনির্বাণ ভট্টাচার্য, শিবপ্রসাদ-নন্দিতা এবং দেব। তাই অভিনেত্রীর জন্য লড়াইয়ের মাঠ কঠিন ভাবেই তৈরি করিয়েছিলেন পরিচালক অরিন্দম। আর তার পুরোপুরি সদ্ব্যবহার করলেন কোয়েল। এ ছবিতে মিতিন মাসি সবসময়ই ফ্রন্টলাইনে। জঙ্গল, পাহাড় পেরিয়ে রহস্যের সমাধান থেকে শুরু করে পুলিশ এবং বন দফতরের সাহায্য ছাড়াই শত্রু নিধনে মারকাটারি অ্যাকশন – সবেতে তিনিই প্রথম। দেখতে দেখতে মনে হবে এই কোয়েল মল্লিক কিনা একটা সময় শুধুমাত্র গ্ল্যামার্স নায়িকা হিসেবেই টলিউডের পরিচিত ছিলেন। অথচ আজ চরিত্রের প্রয়োজনে নিজেকে ভেঙে গড়ে নিতে বয়স তাঁর কাছে বাধা হয়ে দাঁড়ায়নি। কিছু কিছু ক্ষেত্রে মারামারি দৃশ্যগুলো অতিরঞ্জিত মনে হলেও পরিচালকের নাম যখন অরিন্দম শীল, তখন সিনেমা শুধুমাত্র শিশুদের জন্য আটকে থাকে না। গল্প হয়ে যায় প্রাপ্তবয়স্কদেরও।

পরিচালকের যোগ্য সঙ্গী বিক্রম ঘোষের অসামান্য আবহসঙ্গীত, মানানসই দৃশ্যে বিভূতিভূষণের ‘আরণ্যক’-এর উল্লেখ এক মুহূর্ত চোখ সরাতে দেবে না দর্শককে। কিশোর সাহিত্যে এতদিন যা কিছু ভাবনার অতীত ছিল, সেটাই ‘লার্জার দ্যান লাইফ’ চরিত্রে বাস্তব হয়ে উঠেছে এই সিনেমায়। গোটা ছবি জুড়ে মিতিন ছুটছেন। মহিলা গোয়েন্দা রূপে কোয়েলের ফিটনেস দেখে হিংসা করতে পারেন এ যুগের অনেক অভিনেতারাই। তবু মিতিন থামেননি, গোটা সিনেমা জুড়ে তিনি দৌড়ে বেরিয়েছেন। আসলে সমাজ সচেতনতার বার্তা দেওয়ার পাশাপাশি কোথাও যেন মাতৃপক্ষে নারীশক্তির গুরুত্ব বোঝানোর দায়িত্বও যেন তাঁর কাঁধে এসে পড়েছে। সপরিবারে ঠাকুর দেখার মাঝে বাড়ির ছোট সদস্যকে নিয়ে রহস্য রোমাঞ্চ আর জঙ্গলের অবর্ণনীয় দৃশ্য উপভোগ করতে চাইলে, এই ছবি একবার দেখতেই হচ্ছে। পুজো আবহে বিনোদনের এতটুকু খামতি রাখেননি পরিচালক। আর মল্লিকবাড়ির কন্যা? এক কথায় ‘অনবদ্য’!

Previous articleডে.ঞ্জার জোনে বিক্রম-প্রজ্ঞান! তারামণ্ডল ঘিরে ফেলেছে চন্দ্রযানের দুই সৈনিককে, তারপর..
Next articleবাংলার ঐতিহ্যকে সামনে রেখেই পুজোয় মেতে উঠেছে দুবাই