
১৯৩০

এদিন অলিন্দ যুদ্ধে লিপ্ত হন বিনয় বাদল দীনেশ। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের একটি ঘরে বসে নিজের কাজকর্ম পরিচালনা করছেন অত্যাচারী ইংরেজ আধিকারিক কর্নেল সিম্পসন। আর তাঁর পাশে দাঁড়িয়ে আলোচনা করছেন ব্যক্তিগত সহকারী জ্ঞান গুহ। বেলা বারোটা নাগাদ খবর এল, তিনজন বাঙালি যুবক কর্নেল সিম্পসনের সঙ্গে দেখা করতে চান। দরজার সামনে দাঁড়িয়ে থাকা জ্ঞান গুহকে ঠেলে ভিতরে ঢুকে পড়লেন সেই তিন বাঙালি যুবক। মুখ তুলে কর্নেল দেখলেন তাঁরা দাঁড়িয়ে আছেন সামনে, তাঁরই দিকে রিভলভার তাক করে। তাঁদের মধ্যে একজন ইংরেজিতে বললেন, “Pray to God, Colonel. Your last hour has come!” কিছু বুঝে ওঠার আগেই আচমকা তিনটি রিভলভার থেকে বের হওয়া ছ’টি বুলেট এসে কর্নেলের শরীর ভেদ করে বেরিয়ে গেল। মাটিতে লুটিয়ে পড়লেন কর্নেল। লক্ষ্য পূরণ হতেই এবার এই বিপ্লবী ত্রয়ী প্রাণ নিয়ে পালানোর চেষ্টা করলেন। কিন্তু সে সুযোগ তাঁরা পেলেন না। রিভলভারের শব্দে মুহূর্তের মধ্যেই ছুটে এল পুলিশ বাহিনী। রাইটার্স বিল্ডিংয়ের অলিন্দে তাদের সঙ্গে বিপ্লবীদের লড়াই শুরু হল। একদিকে মাত্র তিনজন যুবক, অন্যদিকে পুলিশ কমিশনার টেগার্ট ও ডেপুটি কমিশনার গার্ডনের নেতৃত্বে রাইফেলধারী পুলিশ। বাঁচার আর কোনও রাস্তা খোলা নেই দেখে ব্রিটিশ পুলিশের হাতে ধরা দিতে নারাজ বাদল পকেট থেকে পটাশিয়াম সায়ানাইড বের করে মুখে পুরলেন এবং মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়লেন। আর বিনয় ও দীনেশ তাঁদের রিভলভারের শেষ দুটি বুলেট চালিয়ে দিলেন নিজেদের মাথা লক্ষ্য করে। গুরুতর আহত হলেন। পুলিশবাহিনী তাঁদের বন্দি করে পাঠিয়ে দিল মেডিক্যাল কলেজে। বিনয় ক্ষতস্থানে আঙুল চালাতে চালাতে সেপটিক করে ফেলেন এবং ১৯৩০ সালের ১৩ ডিসেম্বর তিনি মারা যান। দীনেশ গুপ্ত ১৯৩১ সালের ৭ জুলাই ফাঁসির মঞ্চে আত্মাহুতি দেন।



১৯০০ উদয়শংকর

(১৯০০-১৯৭৭) এদিন জন্মগ্রহণ করেন। নাচের পাঠ নেননি কারও কাছে, অথচ গোটা ভুবনের সামনে তাঁর প্রথম পরিচয় নৃত্যশিল্পী। শৈশবে আঁকা শিখেছিলেন অম্বিকাচরণ মুখোপাধ্যায়ের কাছে। বয়স আঠারোয় পড়লে যাঁকে পাঠানো হয় মুম্বইয়ে। চিত্রণ নিয়ে আরও উচ্চতর পাঠের জন্য। এর পর ব্যারিস্টার বাবার ডাকে লন্ডন। তখন তেইশের যুবক। বাবা তাঁকে নিয়ে যান রয়্যাল কলেজ অফ আর্ট-এ। সেখানে শুরু হয়ে যায় চিত্রকলার আরও এক পাঠ। তার আগে, শৈশবে উদয়ের জীবনে পরিচয় আদিবাসী মাতাদিনের সঙ্গে। যাঁর লোকনাচ দেখে বাড়িতে অভ্যেস করতেন উদয়। যে ঘটনার একমাত্র সাক্ষী তাঁর মা। ঘুণাক্ষরে জানতেন না বাবাও। চিত্রণে যখন তাঁকে পেয়ে বসেছে, মগ্ন থাকতেন একটি চিন্তায়, এই মাধ্যমকে কীভাবে চলমান করা যায়। হয়তো বা সেখান থেকেই তাঁর নাচের বিভিন্ন ধারা খুঁজে বেড়ানো। এই ভাবনাটি তীব্র হয় হয়তো লন্ডনে বিখ্যাত নৃত্যশিল্পী আনা পাভলোভার সঙ্গে আলাপের পর। শুরু হয়ে যায় তাঁর খোঁজ। উদয়শংকর-পাভলোভা জুটির আকর্ষণীয় অভিনয়কলা দক্ষিণ এশিয়ার ধ্রুপদী লোকনৃত্য ও সংগীতের সমৃদ্ধি সম্পর্কে পাশ্চাত্য জগতে এক নতুন ধারণার জন্ম দেয়। উদয়শংকরের জাতীয় ও আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি ভারতীয় নৃত্যকলার জন্য অভূতপূর্ব সম্মান, প্রতিষ্ঠা ও মর্যাদা বয়ে আনে। ভারত ও বাংলায় তিনি নৃত্যকে সংগীত ও নাটকের সমমর্যাদায় উন্নীত করেন। ১৯৭১ সালে তাঁকে ‘পদ্মবিভূষণ’ দিয়ে সম্মানিত করা হয়। বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয় ১৯৭৫ সালে তাঁকে ‘দেশিকোত্তম’ উপাধি প্রদান করে। ভারতীয় ডাকবিভাগ তাঁর এবং তাঁর দলের ‘তাণ্ডব নৃত্যের’ ওপর বেশ কয়েকটি বর্ণাঢ্য ডাকটিকিট প্রকাশ করে।



১৯৮০ বিটল খ্যাত জন লেনন

(১৯৪০-১৯৮০) এদিন বন্দুকের গুলিতে লুটিয়ে পড়লেন। নিউ ইয়র্ক শহরে তাঁর ম্যানহাটন অ্যাপার্টমেন্ট বিল্ডিংয়ের সামনে গুলি চালায় তাঁরই ভক্ত শ্রোতা মার্ক ডেভিড চ্যাপম্যান। এদিন সন্ধেতেই উৎসাহী সইশিকারির মতো সে লেননের ‘ডবল ফ্যান্টাসি’ অ্যালবামে তাঁর সই নেয়। আর রাতে লেনন যখন সস্ত্রীক বাড়ি ফিরছিলেন তখন তাঁকে গুলি করে হত্যা করে। পুলিশ না আসা পর্যন্ত অকুস্থলেই ঠায় দাঁড়িয়েছিল ডেভিড। এই অপরাধের জন্য যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে দণ্ডিত হয় সে। এমনকী ২০২০-তে শর্তাধীন মুক্তি পাওয়ার কথা থাকলেও জেল থেকে ছাড়া পায়নি ডেভিড।



১৯৮৫ সার্ক

দক্ষিণ এশীয় আঞ্চলিক সহযোগিতা সংস্থা, সংক্ষেপে সার্ক, এদিন ঢাকায় গড়ে ওঠে। এর সদস্য রাষ্ট্রসমূহ হল বাংলাদেশ, পাকিস্তান, ভারত, শ্রীলঙ্কা, মালদ্বীপ, নেপাল, ভুটান এবং আফগানিস্তান। সার্কের প্রথম শীর্ষ সম্মেলনও এই সময় ঢাকায় অনুষ্ঠিত হয়। সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশের আতাউর রহমান খান।














