চাকলায় মন্দিরের উদ্বোধনে গিয়ে তীর্থস্থানের উন্নয়নের খতিয়ান তুলে ধরলেন মুখ্যমন্ত্রী

"আমাদের কাছে ধর্ম মানে ভালবাসা। মায়ের শাড়ির আঁচলের মতো। মা যেভাবে শাড়ির আঁচল দিয়ে আগলে রাখেন, যত্ন নেন, আমরাও সেভাবে এই বাংলায় পরস্পর পরস্পরকে আঁকড়ে রেখেছি। একতাই বাংলার শক্তি"

উত্তর ২৪ পরগনার চাকলায় লোকনাথ বাবার মন্দির আগেই ঢেলে সাজানোর সিদ্ধান্ত নিয়েছিল রাজ্য সরকার। মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের উদ্যোগে শুরু হয় সংস্কারের কাজ। বৃহস্পতিবার নবরূপে সেজে ওঠা সেই মন্দিরের উদ্বোধন করেন মুখ্যমন্ত্রী। তারপর পুজো দেনও তিনি। এখান থেকে সর্বোধর্ম সমন্বয়ে একতারও বার্তা দেন মুখ্যমন্ত্রী। তাঁর কথায়, এখানে হিন্দু, মুসলমান, খ্রিশ্চান, জৈন থেকে মতুয়া, রাজবংশী সকলে হাতে হাত মিলিয়ে পরস্পরের উৎসবে সামিল হয়। বাংলার এই একতাকে ধরে রাখার আহ্বান জানান মুখ্যমন্ত্রী।

মন্দির উদ্বোধনের পর মুখ্যমন্ত্রী তাঁর বক্তব্যে বলেন, “অনেকে ভোটের সময় ধর্ম নিয়ে রাজনীতি করেন, আর সারা বছর অত্যাচার করেন। আমরা সেটা করি না। আমাদের কাছে ধর্ম মানে ভালবাসা। মায়ের শাড়ির আঁচলের মতো। মা যেভাবে শাড়ির আঁচল দিয়ে আগলে রাখেন, যত্ন নেন, আমরাও সেভাবে এই বাংলায় পরস্পর পরস্পরকে আঁকড়ে রেখেছি। একতাই বাংলার শক্তি।”

প্রতিদিন চাকলাধামে হাজার হাজার মানুষের ভিড় হয়। মুখ্যমন্ত্রী চেয়েছিলেন এই মন্দিরটি সংস্কার করে ডিসেম্বরের মধ্যেই উদ্বোধন করতে। সেই মোতাবেক কাজও শুরু হয়। মুখ্যমন্ত্রীর নির্দেশে গত দু’মাস ধরে পর্যটন দফতর জোরকদমে কাজ শেষ করে। রাজ্যের মন্ত্রী ইন্দ্রনীল সেনের তত্ত্বাবধানেই এই মন্দির সংস্কারের কাজ চলছিল।

তীর্থস্থানের উন্নয়নে রাজ্য ইতিমধ্যে তৎপর রাজ্য সরকার, একথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে মুখ্যমন্ত্রী জানান, তীর্থস্থানের উন্নয়নে গোটা রাজ্যজুড়ে এখনও পর্য়ন্ত ৪০০ কোটির বেশি খরচ হয়েছে। দক্ষিণেশ্বরে ৯০ কোটি খরচ করে স্কাইওয়াক হয়েছে। কালীঘাট মন্দিরের জন্যও স্কাইওয়াক হচ্ছে। গঙ্গাসাগরে আগে থাকার জায়গাও ছিল না, এখন আমূল পরিবর্তন হয়েছে। দিঘায় পুরীর মন্দিরের আদলে জগন্নাথ মন্দির তৈরি হচ্ছে। আগামী ৬ মাসের মধ্যে ওই মন্দিরের কাজ শেষ হয়ে যাবে। তারাপীঠ, ফুরফুরা শরিফ, গির্জা, গুরুদ্বার সব তীর্থস্থানেরই পরিকাঠামো উন্নয়ন করেছে মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সরকার। ধর্মীয় সম্প্রীতি বজায় রাখতে দুর্গাপুজো, বড়দিনের মতো প্রতিটি সম্প্রদায়ের উৎসবেই রাজ্য ছুটির ব্যবস্থা করেছে। ঠাকুরনগরকে ঢেলে সাজানো থেকে শুরু করে মতুয়া বিকাশ পরিষদ গঠন করা হয়েছে। হরিচাঁদ গুরুচাঁদ বিশ্ববিদ্যালয়,পি আর ঠাকুর কলেজ, আইটিআই পলিটেকনিক কলেজ হয়েছে। মধ্যমগ্রামে অনুকূলের সৎসঙ্গের জন্য ৫ একর জমি। ৩ কোটি ব্যয়ে ওঁকারনাথ তোরণ তৈরি হয়েছে ডানলপে। ইস্কনের জন্য ৭০০ একর জমি দেওয়া। সতীপীঠগুলোর উন্নয়ন। জল্পেশ মদনমোহন মন্দিরের উন্নতি- এসবই উঠে এসেছে মুখ্যমন্ত্রীর বক্তব্যে।

এদিকে চাকলার লোকনাথ মন্দির সংস্কার ও উন্নয়নের জন্য প্রায় ৫ কোটি টাকা বরাদ্দ করেছিল রাজ্য সরকার। সেই টাকাতেই গোটা মন্দির ঢেলে সাজানো হয়েছে। মন্দিরের মধ্যে পুজোর সামগ্রী রাখার জন্য একাধিক ঘর বানানো হয়েছে। ভোগ বিতরণের জন্যও আলাদা ঘরের বন্দোবস্ত করা হয়েছে। মন্দিরে ঢোকা বেরনোর জন্য বড় বড় দরজা তৈরি করা হয়েছে। বিশ্ববাংলা গেটের আদলে তৈরি করা হয়েছে সেগুলি। মন্দির চত্বরে ৩০টির বেশি ফুলের দোকান বা কাউন্টার তৈরি করা হয়েছে। যাঁরা এতদিন ওখানে ফুলের ব্যবসা করতেন, তাঁদের জন্য স্থায়ী দোকান বানিয়ে দেওয়া হয়েছে। মন্দির চত্বরে পর্যাপ্ত আলোর ব্যবস্থা করা হয়েছে। মন্দিরে ভোগ খাওয়ানোর জন্য বিশেষ ব্যবস্থা করা হয়েছে। একসঙ্গে বসে ২০০০ হাজার জন খেতে পারবেন। এছাড়াও রাতে যদি পুণ্যার্থীরা থাকতে চান তবে তারও ব্যবস্থা করা হয়েছে। নতুন গেস্ট হাউজ তৈরি করা হয়েছে মন্দির চত্বরে।
মুখ্যমন্ত্রী জানান, চাকলার উন্নয়নের জন্য সবমিলিয়ে প্রায় ১৬ কোটি ও কচুয়ার জন্য ৯ কোটি টাকা ব্যয় করা হয়েছে। চাকলায় একটি দমকল কেন্দ্র তৈরীর আশ্বাস দেন।

গোটা উত্তর ২৪ পরগনা জেলার সার্বিক উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দের কথা জানিয়ে মুখ্যমন্ত্রী বলেন, ১৯.৯৯ কোটি টাকা ব্যয়ে সোতপুর-মধ্যমগ্রাম রোডের সংস্কার ও ৬.৮১ কোটি টাকা ব্যয়ে মাধবপুর-কাকিনাড়া রোড়ের সংস্কার করেছে পিডাব্লুডি। এর জন্য উপকৃত হবেন ৩ লক্ষ ৫৪ হাজার মানুষ। এছাড়াও ৮.৫৬ কোটি টাকা ব্যায়ে বারাকপুরের নান্না পশ্চিম-বারিকপাড়া রাস্তা, ৫.২৬ কোটি টাকা ব্যায়ে স্বরূপনগরের দুর্গাপুর ঘোলেরঘাট-শাহিদকাটি মোড় রাস্তা ও ৩.৯১ কোটি কোটি টাকা ব্যায়ে বাদুড়িয়ার কানুর মোর-আটঘড়া-মাগুরখালি রাস্তার উদ্বোধন করেন।২.১৪ কোটি টাকা ব্যায়ে বাদুড়িয়া, মিনাখা, আমডাঙ্গা ও চাঁদপাড়ায় ৪টি বিপিএইচইউ বা ব্লক পাবলিক হেলথ ইউনিট এরও উদ্বোধন করেন তিনি। এই সবের জন্য মোট ৬৯.০১৯৯ কোটি টাকা ব্যয় হয়েছে। এদিন হাবড়ায় বস্ত্র হাটের উদ্বোধনও করেন মুখ্যমন্ত্রী। যার জন্য ব্যয় হয়েছে ১৭.২ কোটি টাকা।

Previous articleগৃহবধূরা বেকার নন,সংসারে ওঁদের কাজের আর্থিক মূল্যও রয়েছে: নির্দেশ হাই কোর্টের
Next articleপ্রয়াত ইস্টবেঙ্গলের প্রাক্তন ফুটবলার প্রবীর মজুমদার