মুম্বই থেকে এক বালককে অপহরণ করে জম্মুতে পাচার! এই ঘটনায় মূল অভিযুক্ত কলকাতার এক জেল পালানো খুনি। নৃশংস এই অপরাধীর সন্ধানে নেমেছে কলকাতা, মুম্বই, জম্মু ও শ্রীনগর, দেশের এই ৪ শহরের পুলিশ। অনুমান করা হচ্ছে, জম্মু কাশ্মীরে নিয়ে গিয়ে জঙ্গিদের কাছে বিক্রি করে দিয়েছে ওই অপরাধী।

পুলিশের তরফে জানা গিয়েছে, কলকাতার ওই জেল পালানো অপরাধীর নাম বিপুল শিকারি। ২০১২ সালে বড়তলা থানা এলাকার সোনাগাছির যৌনপল্লিতে নৃশংসভাবে খুন হন মামনি নামে এক যৌন কর্মী। এই ঘটনার তদন্তে নেমে লালবাজারের গোয়েন্দারা নদিয়ায় তল্লাশি চালিয়ে বিপুলকে গ্রেপ্তার করে। উদ্ধার করা হয় ওই যৌনকর্মীর গয়না। এই মামলায় যাবজ্জীবন সাজা হয় বিপুলের। তবে ২০২০ সালে করোনা পরিস্থিতিতে জেল থেকে প্যারোলে মুক্ত করা হয় বহু বন্দিকে। সেই তালিকায় নাম ছিল বিপুলেরও। তবে তারপর আর ফেরেনি বিপুল। তার বিরুদ্ধে অভিযোগ দায়ের করে জেল কর্তৃপক্ষ।

এরইমাঝে দিন কয়েক আগে মুম্বই পুলিশ লালবাজারের গোয়েন্দা বিভাগে ফোন করে বিপুল সম্পর্কে জানতে চান। তখনই লালবাজারের নজরে তার পালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি আসে। একই সঙ্গে গোয়েন্দা পুলিশ জানতে পারে যে, সম্প্রতি মুম্বইয়ের ওয়াদালা থানা এলাকায় ১২ বছর বয়সের এক বালককে খাবার ও বেড়াতে নিয়ে যাওয়ার লোভ দেখিয়ে অপরণ করা হয়। তদন্ত করে মুম্বই পুলিশ জানতে পারে, বিপুল তাকে নিয়ে ভিন্ন রাজ্যে পাড়ি দিয়েছে। কলকাতার গোয়েন্দারা মুম্বই পুলিশকে জানান যে, বিপুলের আদি বাড়ি নদিয়ার কল্যাণীতে। সেই অনুযায়ী কিছুদিন আগে মুম্বই পুলিশের টিম কলকাতায় আসে। লালবাজারে সাহায্যে কল্যাণীতে বিপুলের বাড়িতে যায় পুলিশ। এরপরই এই মামলা নতুন মোড় নেয়। বিপুলের মা জানায় এর মধ্যে বিপুল বাড়িতে না এলেও ফোন করেছিল। সেই ফোনের সূত্র ধরে জানা যায়, মুম্বই থেকে প্রথমে দিল্লি ও সেখান থেকে জম্মুতে ওই নাবালককে অপহরণ করে নিয়ে গিয়েছে। যদিও এখনও তার নাগাল পায়নি মুম্বইয়ের তদন্তকারীরা।

পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, ২০২০ সালে কলকাতা থেকে পালিয়ে মুম্বইয়ের ওয়াদালায় ঘাঁটি গাড়ে বিপুল। সেখানে সে মাদক পাচারের কাজ করত। তদন্তকারীদের ধারণা এই চক্রের কোনও এজেন্টের মাধ্যমে কাশ্মীরের কোনও জঙ্গিগোষ্ঠীর সঙ্গে তার যোগাযোগ হয়। বিপুল টাকা রোজগারের লোভে নাবালককে অপহরণ করে জম্মুতে পাচার করেছে অভিযুক্ত। গোয়েন্দাদের দাবি, অনেক জঙ্গিগোষ্ঠী সীমান্তবর্তী এলাকায় ১২ থেকে ১৪ বছর বয়সের বালক বা কিশোরদের কিনে নিয়ে তারা নিজেদের সংগঠনে নিয়োগ করে। এর পর পাকিস্তানে তাদের প্রশিক্ষণেরও ব্যবস্থা করে জঙ্গিরা। ফলে বিভিন্ন রাজ্যের নাবালকদের যথেষ্ট চাহিদা রয়েছে জঙ্গিদের কাজে। এখানেও এমনই কিছু ঘটেছে বলে অনুমান তদন্তকারীদের।

