হাসপাতালে ‘না’, স্বামীর ইউটিউবের ভরসায় প্রসবে মৃত্যু মা-সন্তানের

নিজের জন্য না হলেও, যে আসছে সেই সন্তানের জন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও মানেনি নায়াস। হাসপাতালে গেলেই তাঁকে ছেড়ে দেবে, এই ভয় দেখিয়ে ঘরেই চলে 'ডাক্তারি'।

স্বাস্থ্যক্ষেত্রে বিরাট উন্নতি দেশের, ফলাও করে প্রচারে মত্ত কেন্দ্র সরকার। গোটা ভারতটাই না কি ডিজিটাল হয়ে গিয়েছে। সেই দুর্ধর্ষ ডিজিটাল দৌড়ের বলি হতে হল এক মা ও তাঁর ভূমিষ্ঠ না হওয়া সন্তানকে। স্বাস্থ্যক্ষেত্রে সাধারণ ভারতীয়দের অশিক্ষা ও কুসংস্কার কতটা গভীর তাও প্রাণ দিয়ে প্রমাণ করল কেরালার তিরুবনন্তপুরমের শেমিরা। স্বামীর চাপে ইউটিউবের ভরসায় সন্তানপ্রসব করতে গিয়ে মৃত্যু হল মা ও সন্তানের।

প্রথম স্ত্রীকে ত্যাগ করে শেমিরার সঙ্গে বিয়ে করেন তিরুবনন্তপুরমের নায়াস। স্থানীয় স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি শেমিরা সন্তানসম্ভবা হওয়ার পর তাঁর চিকিৎসা করানো তো দূরের কথা, আশাকর্মীদের বাড়িতে ঢুকতে দেয়নি নায়াস। তাঁর দাবি ছিল ঘরেই জন্মাবে তাঁদের সন্তান। কিন্তু স্বাস্থ্যকর্মীদের দাবি ছিল আগে তিনবার সি-সেকশন হওয়া শেমিরার নর্মাল ডেলিভারি হওয়া সম্ভব ছিল না। কিন্তু নিজের জেদে অনড় থেকে এই প্রসবে সাহায্য করার জন্য প্রথম পক্ষের স্ত্রীকে ডেকে আনেন নায়াস।

কিন্তু জটিল পরিস্থিতিতে সন্তানসম্ভবা শেমিরার প্রসব কীভাবে বাড়িতে হওয়া সম্ভব? ভরসা ইউটিউব। অপ্রশিক্ষিত পদ্ধতিতে ইউটিউব দেখে প্রসব করতে গিয়ে শুরু হয় রক্তক্ষরণ। নিজের জন্য না হলেও, যে আসছে সেই সন্তানের জন্য হাসপাতালে যেতে চাইলেও মানেনি নায়াস। হাসপাতালে গেলেই তাঁকে ছেড়ে দেবে, এই ভয় দেখিয়ে ঘরেই চলে ‘ডাক্তারি’। শেষে মৃতঃপ্রায় শেমিরাকে স্থানীয় একটি বেসরকারি হাসপাতালে নিয়ে যাওয়া হলে ডাক্তার তাঁকে ও তাঁর সন্তানকে মৃত ঘোষণা করে।

মাত্র কয়েকমাস আগে তামিলনাড়ুতে এভাবে ইউটিউব দেখে সন্তান প্রসব করতে গিয়ে একই ভাবে মৃত্যু হয় এক মায়ের। কিন্তু সেখবর হয়তো নায়াসের কাছে পৌঁছায়নি। ‘ডিজিটাল ভারতে’ ইউটিউবে সন্তান প্রসবের ভিডিও দেখা সম্ভব, একথা জানলেও বহুল প্রচারিত তামিলনাড়ুর মহিলার মৃত্যুর সংবাদ হয়তো তাঁর কাছে পৌঁছায়নি। বা পৌঁছালেও হয়তো নিজের বিচার বুদ্ধিকেই বেশি গুরুত্ব দিয়েছিল সে। তবে শেমিরার মৃত্যুর পর পুলিশ তাকে গ্রেফতার করেছে। প্রথম স্ত্রী ও পরিবারের অন্যদের বিরুদ্ধেও তদন্ত শুরু করেছে পুলিশ।