রাজ্য পুলিশ (West Bengal Police)এবং NIA যৌথভাবে বেঙ্গালুরু রামেশ্বর ক্যাফে (Bengaluru Rameswaram Cafe) বিস্ফোরণ কান্ডের অন্যতম দুই অভিযুক্তকে গ্রেফতার করেছে। শুক্রবার দিঘার (Digha) হোটেল থেকে তাঁদের গ্রেফতার করার পর জেরার মুখে উঠে এসেছে চাঞ্চল্যকর তথ্য। ক্যাফে কাণ্ডের পর ট্রেনে করে হাওড়া দিয়েই কলকাতায় (Kolkata) এসেছিলেন অভিযুক্তরা, ভুয়ো পরিচয় পত্র নিয়ে শহরের বিভিন্ন হোটেলে কাটিয়েছিলেন প্রায় ২৮ দিন! কীভাবে বাংলার সমুদ্র সৈকতে আত্মগোপন করল, সেই সংক্রান্ত তথ্য উঠে এসেছে গোয়েন্দাদের হাতে।

বেঙ্গালুরু বিস্ফোরণ কাণ্ডের (Bengaluru Cafe Blast) অন্যতম দুই সন্দেহভাজন আবদুল মতিন আহমেদ তাহা ও মুসাভির হুসেন সাজিব ভুয়ো আধার কার্ড, ড্রাইভিং লাইসেন্স দিয়ে নাম পরিবর্তন করে কলকাতার অন্তত আটটি হোটেলে আত্মগোপন করেছিলেন বলে তদন্তে উঠে এসেছে। গত ৫ এপ্রিল থেকে এই দুই জঙ্গির সন্ধানে কলকাতার প্রায় ১৫টি হোটেলে হানা দেয় কেন্দ্রীয় তদন্তকারী সংস্থা এনআইএ-র টিম। ধৃতদের আই এস যোগ মিলেছে। বিস্ফোরণের পর তাঁরা চেন্নাইয়ে পালায়। সেখান থেকে কখনও বাস, কখনও ট্রেনে করে গত ১০ মার্চ এসে পৌঁছয় হাওড়া স্টেশনে। প্রথমে ট্যাক্সি করে লেনিন সরণির একটি হোটেলে থাকেন। একতলায় ৫৬০ টাকা দামের একটি ঘর ভাড়া নিয়ে একবেলা থাকার পর সেদিন বিকেলেই ওই হোটেল ছাড়েনি। এরপর ধর্মতলাতেই অন্য একটি হোটেলে দুদিন থাকার পর ১২ মার্চ দুপুরে এস এন ব্যানার্জি রোডের একটি হোটেল ৯০০ টাকার ঘর বুক করেন। চেক আউট করে ১৩ মার্চ দুপুরে। সব জায়গাতে ক্যাশ টাকা জমা দিয়েছিলেন তাঁরা। সেদিন বিকেল পর্যন্ত রাস্তায় ঘুরে বেড়ানোর পর বিকেল ৫টা ৪০ মিনিটে পৌঁছে যান লেনিন সরণির অন্য একটি হোটেলে। রেজিস্টার খাতায় ইউশা শাহনওয়াজ প্যাটেল ও আনমোল কুলকার্নি পরিচয় দিয়ে বলেন তাঁরা দার্জিলিং থেকে এসেছেন। ৭০০ টাকার রুম বুক করে ১৪ মার্চ দুপুর বারোটা পর্যন্ত ছিলেন। এরপর ২১ মার্চ তারা শিলিগুড়ি-সহ উত্তরবঙ্গের বিভিন্ন জায়গায় অস্থায়ীভাবে থাকতে শুরু করেন দুই সন্দেহভাজন বলেই কেন্দ্রীয় এজেন্সির গোয়েন্দারা মনে করছেন।গত ২১ মার্চ দুপুর একটায় অটোয় করে ফের কলকাতায় আসেন এবং ওই দুই জঙ্গি খিদিরপুরের একটি হোটেলে চেক ইন করে। এবার হাজার টাকার ঘর ভাড়া নেন। যদিও এখানে পরিচয়পত্র জমা দেননি। উল্টে ২২ মার্চ সন্ধ্যার পর রেজিস্টার খাতার পাতা ছিঁড়ে নিয়ে পালিয়ে যায়। সিসিটিভিতে তা ধরা পড়েছে। এর পর ২৫ মার্চ পর্যন্ত ওয়াটগঞ্জ ও একবালপুর এলাকার আরও দুটি হোটেলে ছিল তাঁদের আস্তানা। ২৮ মার্চ পর্যন্ত থাকার জন্য দু-দফায় প্রায় ৩০০০ টাকা হোটেল ভাড়া দেন দুই জঙ্গি। সেদিনই IS-এর এক স্লিপার সেলের সদস্যর বাড়িতে থাকার পর কাঁথিতে চলে যান।


গোয়েন্দারা বলছেন, দিঘায় একাধিক হোটেলে অভিযুক্তরা লুকিয়ে থাকার পর রাজ্য পুলিশ এবং NIA গোপন সূত্রে খবর পেয়ে তাঁদের গ্রেফতার করে। তবে শহরের বুকে এতদিন ধরে জঙ্গিদের লুকিয়ে থাকার খবরে মহানগরীর নিরাপত্তা নিয়ে প্রশ্ন উঠতে শুরু করেছে।
