বিরোধীদের অশান্তির অপচেষ্টাকে রুখে দিয়ে শান্তিতেই পঞ্চম দফার ভোট গ্রহণ

সবথেকে বেশি অভিযোগ দেয় বামেরা। সংগঠন হারিয়ে, মানুষের আস্থা হারিয়ে, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে বাঁচার চেষ্টায় বামেরা ২৪৫টি অভিযোগ দায়ের করে

পঞ্চম দফার নির্বাচনে ভোটারদের টানতে না পেরে বারবার বিভিন্ন কেন্দ্রে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করল বিজেপি প্রার্থী ও কর্মীরা। তবে অশান্তি তৈরির সব চেষ্টা ব্যর্থ করে শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন হল পঞ্চম দফার নির্বাচন। একদিকে সাধারণ মানুষ উৎসবের মেজাজে লাইন দিয়ে ভোট দিলেন। অন্যদিকে বিজেপি ও বিরোধীদের অশান্তির চেষ্টাকে রুখে দিলেন এলাকার মানুষই। ভোটের ময়দানে প্রতিযোগিতায় না পেরে কমিশনে অভিযোগের ঝুলি ভরিয়ে দিল শূন্যে থাকা বামেরা। পঞ্চম দফায় বিকাল ৫টা পর্যন্ত ভোটের হার ৭৩ শতাংশ।

সকালে থেকে হুগলি জেলার হুগলি কেন্দ্র বারবার গণ্ডগোলের পরিবেশ তৈরি করেন বিজেপি সাংসদ লকেট চট্টোপাধ্যায়। ধনেখালিকে যেন টার্গেট করে তৃণমূল কর্মীদের হেনস্থা ও অশান্তি করা শুরু করেন তিনি। একটি বুথে ঢুকে নির্বাচনের কাজে যুক্ত মহিলা পুলিশ কর্মীকেও জোর করে বের করে দেন তিনি। এরপর আরেক এলাকায় ঢুকে ভোটাদের হুমকি দিতে শুরু করেন বলে অভিযোগ। জিরাটে তৃণমূলের ফেস্টুন ব্যানার ছেঁড়ার অভিযোগ পেয়ে ঘটনাস্থলে যান তৃণমূল প্রার্থী রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়। অন্যদিকে শ্রীরামপুর কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে নির্বাচন পরিদর্শনের সময় সলপে বিক্ষোভের মুখে পড়েন। সেখানে বুথ থেকে বামেদের এজেন্ট বসা নিয়ে বচসা বাধে সিপিআইএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধরের সঙ্গে।

হাওড়ায় একটি আবাসনের বাইরে বোমাবাজির অভিযোগ ওঠে। বেলুড় এলাকার ওই আবাসনের বাসিন্দাদের ভোট না দিতে যাওয়ার চাপও দেওয়া হয় বলে অভিযোগ। স্থানীয় দুষ্কৃতীদের দিকেই আঙুল তুলেছে বাসিন্দারা। পুলিশ ও কেন্দ্রীয় বাহিনীর বিশাল দল ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি সামাল দেয়। তবে উলুবেড়িয়া কেন্দ্রের কংগ্রেস প্রার্থী আজহার মল্লিক কানপুর এলাকার একটি বুথে অশান্তির চেষ্টা করেন। নিরাপত্তা রক্ষীদের সামনেই হাতাহাতিতে জড়িয়ে পড়েন তিনি। শান্তিপূর্ণ ভোটের মাঝে অশান্তির পরিবেশ তৈরি করে বুথ দখলের চেষ্টা করে কংগ্রেস। হাওড়া কেন্দ্রের রাজখোলা এলাকায় বাম প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায় গিয়ে ভোটারদের প্রভাবিত করছেন, এই অভিযোগে বিক্ষোভ দেখান স্থানীয়রাই।

ব্যারাকপুরের বিজেপি প্রার্থী অর্জুন সিং তাঁর পরিচিত ঢঙেই সোমবার নির্বাচনের দিন বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে অশান্তির পরিবেশ তৈরির চেষ্টা করেন। দুপুর পর্যন্ত টিটাগড় থেকে ব্যারাকপুর, যেখানেই ভোটারদের প্রভাবিত করার জন্য যান অর্জুন সিং, সেখানেই স্থানীয়দের বিক্ষোভের মুখে পড়েন তিনি। টিটাগড়ে তাঁকে কালো পতাকাও দেখানো হয়। এমনকি ব্যারাকপুরে কেন্দ্রীয় বাহিনীকে এগিয়ে আসতে হয় অর্জুনের অসভ্যতা ঠেকাতে। অন্যদিকে তৃণমূল প্রার্থী পার্থ ভৌমিককে দেখা যায় গাড়িতে করে উদযাপনের পরিবেশে ভোট পরিদর্শন করতে। আবার বনগাঁ কেন্দ্রে তৃণমূল প্রার্থী বিশ্বজিৎ দাসকে কেন্দ্রের বিভিন্ন এলাকায় ঘুরে পরিদর্শন করতে দেখা যায়। সকালর দিকে বিজেপি প্রার্থী শান্তনু ঠাকুর একটি বুথে ঢুকে অশান্তির চেষ্টা করলেও সারাদিনে তাঁকে আর ঘর থেকে বেরোতে দেখা যায়নি।

পঞ্চম দফার নির্বাচনে শ্রীরামপুরের সিপিআইএম প্রার্থী দীপ্সিতা ধর ছাড়া আর কোনও কেন্দ্রেই বাম কংগ্রেস জোট প্রার্থীদের সেভাবে চোখে পড়েনি। বিক্ষোভের মুখে পড়ে ঘরে ঢুকে যান হাওড়ার আইনজীবী প্রার্থী সব্যসাচী চট্টোপাধ্যায়। ভোটের উত্তাপের মাঝে হারিয়েই গেলেন ব্যারাকপুরের বামেদের তারকা প্রার্থী দেবদূত ঘোষও। তবে একটা জায়গায় তারা শীর্ষে পৌঁছায়। দিনভর কমিশনে প্রায় দুহাজারের কাছাকাছি অভিযোগ জমা পড়ে। তার মধ্যে সবথেকে বেশি অভিযোগ দেয় বামেরা। সংগঠন হারিয়ে, মানুষের আস্থা হারিয়ে, প্রশাসনের দ্বারস্থ হয়ে বাঁচার চেষ্টায় বামেরা ২৪৫টি অভিযোগ দায়ের করে।

Previous articleদিনভর প্রবল বিক্ষোভের মুখে লকেট! হুগলিতে জমি হারিয়েছে বিজেপি
Next articleমেদিনীপুরে মমতা-ম্যাজিক! আবেগে ভেসে পদযাত্রা তৃণমূল সভানেত্রীর