প্রচার মিটতেই নয়া নাটক! ভোটের শেষ লগ্নে মোদি ‘ধ্যানমগ্ন’ হতেই সরব বিরোধীরা

দোড়গোড়ায় শেষ দফার নির্বাচন। শনিবার দেশের পাশাপাশি রাজ্যের ৯ লোকসভা আসনে (Loksabha Seat) ভোটগ্রহণ (Voting)।হাতেগোনা কিছু সময়ের অপেক্ষা। বৃহস্পতিবারই দেশজুড়ে শেষ দফার নির্বাচনী প্রচার (Election Campaign) শেষ হয়েছে। কিন্তু নির্বাচনী বিধিভঙ্গ করে নয়া রাজনীতি শুরু প্রধানমন্ত্রী মোদির (Narendra Modi)। মূলত ধর্মীয় মেরুকরণের ধুয়ো তুলে শেষ দফা ভোটের আগে কন্যাকুমারীর (Kanyakumari ) বিবেকানন্দ রকে ধ্যানে বসেছেন মোদি। কিন্তু নির্বাচনী প্রচারের সময়সীমা আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ হওয়ার পরও শুধুমাত্র নিজের ইমেজ উজ্জ্বল করতে নোংরা রাজনীতি শুরু করেছেন প্রধানমন্ত্রী বলে ইতিমধ্যে সরব বিরোধীরা। তাদের দাবি, ভোট প্রচার শেষ হলেও প্রচারে থাকতে এই কৌশল নিয়েছেন মোদি।

বৃহস্পতিবার শেষ দিনের প্রচারে মোদিকে কড়া ভাষায় আক্রমণ করে মমতা বলেন, প্রতিবারেই ভোটের আগে কোথাও না কোথাও গিয়ে বসে পড়ে, আর ৪৮ ঘণ্টা পাবলিসিটি খায়। ৪৮ ঘণ্টা সব পাবলিসিটি বন্ধ। আজ সন্ধে ৬টা থেকে পড়শু বিকেল ৬টা পর্যন্ত। আপনি ধ্যান করবেন, ধ্যান করুন, কেউ তো বারণ করেনি, ক্যামেরার সামনে কেন? শনিবার অর্থাৎ ১ জুন শেষ দফার ভোট। হিসেব অনুযায়ী ভোটের ৪৮ ঘণ্টা আগে সমস্ত রাজনৈতিক দলের প্রচার কর্মসূচি শেষ করতে হয়। তবে ওই ৪৮ ঘণ্টাও প্রচার চালিয়ে যেতে প্রধানমন্ত্রী মোদি কৌশলে ধ্যানে বসছেন বলে অভিযোগ তৃণমূল নেত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের। সম্প্রতি নিজেকে ইশ্বরের দূত হিসেবে একাধিকবার দাবি করেছেন প্রধানমন্ত্রী। সেই প্রসঙ্গেও মমতাকে বলতে শোনা যায়, ওকে নাকি ঈশ্বর পাঠিয়েছেন! মানে বায়োলজিক্যাল বাবা-মা নেই। উনি নাকি দেবতার থেকেও বড় দেবতা। তাই যদি হয়, তবে ওঁর ধ্যান করার কী প্রয়োজন, আমরা ওর মন্দির বানিয়ে দেব! সেখানে বসে লোকে ওঁর ধ্যান করবে। এরপরই রাজনীতি করে মোদি দেশের সর্বনাশ করছেন বলে কমিশনের কাছে মোদির বিরুদ্ধে অভিযোগ জানানোর কথাও শোনা যায় মমতার গলায়।

বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা থেকে শনিবার সন্ধ্যা পর্যন্ত কন্যাকুমারীর বিবেকানন্দ রকে ধ্যানে বসবেন মোদি। তাঁর সাফাই, জনসমাগম থেকে দূরে থাকতেই ধ্যান করবেন তিনি। এদিন বিকেলে তিরুবনন্তপুরমে বিমানে নামেন মোদি। সেখান থেকে কন্যাকুমারীতে পৌঁছে যান সন্ধ্যা নামার আগেই। সেখানে বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে প্রায় দুদিন ধরে ধ্যান করবেন মোদি। প্রসঙ্গত, শনিবারের শেষ দফার ভোটের দিনই বারাণসীতে মোদীর ভাগ্যপরীক্ষা হতে চলেছে। তার আগেই পায়ের তলার মাটি সরতেই নয়া নাটক শুরু প্রধানমন্ত্রীর। এদিন কন্যাকুমারীতে এসে প্রধানমন্ত্রী প্রথমে ভগবতী আম্মান মন্দিরে পুজো দেন। সেখান থেকে চলে যান বিবেকানন্দ রক মেমোরিয়ালে। ১ জুন ধ্যান শেষে রওনা দেওয়ার আগে তিনি মেমোরিয়ালের গা ঘেঁষা তিরুভাল্লুভারের মূর্তিতেও শ্রদ্ধা নিবেদন করেন তিনি। তবে এই প্রথম নয়, ২০১৯ সালেও একইভাবে কেদারনাথের কাছে একটি গুহায় ধ্যানে বসেছিলেন মোদি। জেলা পুলিশ সূত্রে জানা গিয়েছে, প্রায় ২ হাজার উর্দিধারী মোদীর পাহারায় রাখা হচ্ছে। এছাড়াও প্রধানমন্ত্রীর জন্য যে যে নিরাপত্তা ব্যবস্থা রাখা হয়, তা থাকছেই।

তবে মোদির ধ্যান নাটক ইস্যুতে ইতিমধ্যে সরব তৃণমূল কংগ্রেস -সহ বিরোধীরা। এদিন সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তরে তৃণমূলের কুণাল ঘোষ বলেন, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ধ্যানে বসেছেন তার একটাই কারণ প্রচারের শেষেও এই ধ্যানকে তিনি প্রচারের কাজে ব্যবহার করতে চান। তার ছবি বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে প্রচারিত হবে। আসলে প্রচারের শেষে তিনি অন্যায় ভাবে প্রচারের সুযোগ নিচ্ছেন। কুণালের স্পষ্ট কথা, প্রধানমন্ত্রীর ধ্যানের কোনও ছবি, কোনও বাণী যাতে প্রচার না হয়, সেটা নির্বাচন কমিশন দেখুক। কারণ এতে নির্বাচনবিধি ভঙ্গ হয়। নির্বাচন কমিশন নজর রাখুক। আসলে নির্বাচনী প্রচার শেষ হয়ে যাওয়ার পর পরিকল্পিতভাবে মানুষের আবেগকে কাজে লাগানোর প্রচেষ্টা এটা। ধ্যান কে অপব্যবহার করা হচ্ছে। এটা ধ্যানের অপমান। এটা ধ্যানের রাজনীতি করণ। কংগ্রেসের অভিযোগ, ভোট চলাকালীন মোদির এই ধ্যান ধ্যান নাটক আদর্শ আচরণবিধির পরিপন্থী। এ নিয়ে তাঁরা নির্বাচন কমিশনে নালিশ জানাবেন। ভোট চলাকালীন মোদীর দিকে প্রচারের ক্যামেরা থাকায় তা ভোটারদের প্রভাবিত করতে পারে বলে অভিযোগ কংগ্রেসের।