দিল্লিতে মমতার নারী-ব্রিগেড: দেশে রেকর্ড গড়ে TMC-তে ৩৮% মহিলা সাংসদ, BJP-তে মাত্র ১২%

ক্ষমতায় আসার পর থেকেই নারী ক্ষমতায়নের উপর জোর দিয়েছেন মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় (Mamata Banerjee)। বরাবরই মহিলাদের সবক্ষেত্রে এগিয়ে আসার বিষয় উৎসাহ ও অনুপ্রেরণা দেন তিনি। এবারের লোকসভা নির্বাচনে দলের টিকিট দেওয়ার বিষয়ও মহিলা মুখেই আস্থা রেখেছিলেন তৃণমূল (TMC) সুপ্রিমো। আর তাতেই বাজিমাৎ। ২৯ জয়ী তৃণমূল প্রার্থীর মধ্যে ১১ জনই মহিলা। শুধু তাই নয়, বাংলা থেকে শুধুমাত্র তৃণমূলের মহিলা ব্রিগেটই যাচ্ছে সংসদে। সেখানে বিজেপি কোনও মহিলা প্রতিনিধি নেই। এবারের লোকসভা নির্বাচনের শতাংশের হারে তৃণমূলের ৩৮ শতাংশ মহিলা প্রতিনিধি, যেখানে সারাদেশে থেকে বিজেপির মহিলা সাংসদের হার মাত্র ১২ শতাংশ।দেশের একমাত্র মহিলা মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে (Mamata Banerjee) বিভিন্নভাবে আক্রমণ ও কুকথা বলেছেন বিজেপি নেতৃত্ব। নরেন্দ্র মোদি থেকে শুরু করে দিলীপ ঘোষ- বাদ যাননি কেউই। বিজেপি যে নারীদের সম্মান দেন না সেটা বহু ঘটনায় প্রকাশিত। দেবী দুর্গার পিতৃপরিচয় নিয়ে প্রশ্ন তুলেছিলেন দিলীপ ঘোষ। মহিলা কুস্তিগীরদের উপর যৌন হেনস্থাকারী ব্রিজভূষণ সিং-কে আড়াল করাই হোক বা তাঁর ছেলেকে লোকসভা ভোটে প্রার্থী করাই হোক বা রেবান্নার মতো ধর্ষকের হয়ে মোদির প্রচার- সবক্ষেত্রেই মহিলাদের অসম্মানের উদাহরণ গেরুয়া শিবিরে ভুরি ভুরি। বিজেপি ত্যাগ করে আসা মহিলা রাজনীতিবিদরা এ বিষয়ে অভিযোগ করেছেন। বাংলায় এবারের নির্বাচনে কোনও মহিলা বিজেপি প্রার্থী জিততে পারেননি। অথচ সুজাতা মণ্ডল ছাড়া তৃণমূলের সব মহিলা প্রার্থীরাই জয়ী হয়েছেন। তৃণমূলের জয়ী মহিলা প্রার্থীদের মধ্যে নতুন মুখ ৫ জন-রচনা বন্দোপাধ্যায়, জুন মালিয়া, সায়নী ঘোষ, শর্মিলা সরকার, মিতালি বাগ। মহুয়া মৈত্র থেকে মিতালী বাগ- ১১ জনের তালিকায় রয়েছেন সব ধর্ম-বর্ণ-স্তরের নারীদের প্রতিনিধিত্ব।

২০১৯-য়ের তুলনায় ২০২৪-এর লোকসভা নির্বাচনে আসন বেড়েছে তৃণমূলের। বেড়েছে মহিলা সাংসদের সংখ্যাও। আগের বার লোকসভায় পৌঁছেছিলেন ৯ জন মহিলা সাংসদ, এবারের সংখ্যাটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১১-তে। এবারের লোকসভা ভোটে ১২ জন মহিলাকে প্রার্থী করেছিল তৃণমূল। তাঁদের মধ্যে ১১ জনই জয়ী। শতাংশের হিসেবে ৩৮ শতাংশ। আর মহিলা সংরক্ষণ বিল পাশ করানো বিজেপির সারাদেশের মধ্যে মহিলা সাংসদ রয়েছে মাত্র ১২ শতাংশ।

এখানেই শেষ নয়। রাজ্যসভাতেও রয়েছেন তৃণমূলের দোলা সেন, সাগরিকা ঘোষ, সুস্মিতা দেব, মমতা বালা ঠাকুর, মৌসম বেনজির নুর। বিধানসভায় তৃণমূল সদস্যদের ৩৩ শতাংশের বেশি মহিলা। এদিকে বাংলা থেকে বিজেপির যে দুই মহিলা সাংসদ ছিলেন, সেই লকেট চট্টোপাধ্যায় ও দেবশ্রী চৌধুরী এবার হেরে গিয়েছেন। শ্রীরূপা মিত্র চৌধুরী ও অগ্নিমিত্রা পাল ফের বিধানসভায় ফিরবেন। প্রথমবার প্রার্থী হওয়া সন্দেশখালির বিতর্কিত মুখ রেখা পাত্র ও বোলপুরের পিয়া সাহাও হেরে গিয়েছেন। অনেক ঢাকঢোল পিটিয়ে রাজমাতা পরিচয় দিয়ে প্রার্থী করা অমৃতা রায়ও হেরেছেন কৃষ্ণনগরে।

প্রথম বার ক্ষমতায় আসার পরই কন্যাশ্রী, রূপশ্রীর মতো প্রকল্প ঘোষণা করেন মমতা। গত বিধানসভা ভোটের আগে ‘লক্ষ্মীর ভাণ্ডার’ প্রকল্প ও লোকসভা ভোটের আগে সেই ভাতা বৃদ্ধি অনেকের মতেই ‘মমতার মাস্টারস্ট্রোক’। আর তাতেই লোকসভায় চলল তৃণমূলের মহিলা ব্রিগেড।
মালা রায়-কলকাতা দক্ষিণ
কাকলি ঘোষ দস্তিদার- বারাসত
সাজদা আহমেদ- উলুবেড়িয়া
শতাব্দী রায়- বীরভূম
প্রতিমা মণ্ডল- জয়নগর
মহুয়া মৈত্র- কৃষ্ণনগর
সায়নী ঘোষ- যাদবপুর
শর্মিলা সরকার- বর্ধমান পূর্ব
জুন মালিয়া- মেদিনীপুর
রচনা বন্দ্যোপাধ্যায়- হুগলি
মিতালী বাগ- আরামবাগ

এই প্রসঙ্গে তৃণমূল নেতা কুণাল ঘোষ বলেন, “এটা উল্লেখযোগ্য ঘটনা। যাঁরা জয়ী হয়েছেন তাঁদের ৩৮ শতাংশ মহিলা। অর্থাৎ পশ্চিমবঙ্গ থেকে তৃণমূল কংগ্রেসের যে সাংসদরা জয়ী হলেন তার ৩৮ শতাংশ মহিলা, যেটা দেশের মধ্যে নজির। মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সব সময় মহিলাদের যে প্রাধান্য দেন সেটা সরকারের স্কীম থেকে মহিলাদের পাশে দাঁড়ানো, কিংবা দলের মধ্যে সাংগঠনিক পদ, কিংবা জনপ্রতিনিধিত্বে, সেটা দেশের মধ্যে নজির। বিজেপির মহিলা প্রার্থী জিতেছেন মাত্র ১২ শতাংশ। অন্য দলের কথা তো ছেড়েই দিন। তৃণমূলের ১১ জন মহিলা জয়ী হয়েছেন। মা বোনেদের সম্মান দিতে, সারা ভারতে সর্বস্তরে যে দলটি মহিলাদের সঙ্গে সব সময় থাকেন সেই দলের নাম তৃণমূল কংগ্রেস।“







Previous articleদিল্লি যাবেন সাংসদরা, পথ নির্দেশে বৈঠকে ডাক তৃণমূল সুপ্রিমোর
Next articleঅটুট তৃণমূলের ভোট ব্যাঙ্ক, বামের ভোট এবারও রামেই!