ভিক্ষা করে চলত সংসার! রাতারাতি কোটিপতি বেঙ্গালুরুর রেণুকা, গল্প শুনলে চমকে যাবেন

একসময় টেনেটুনে কোনওভাবে সংসার চলতো। মাস শেষ হতে না হতেই টাকা শেষ। মাত্র ৬০০ টাকা উপার্জন করে দাঁতে দাঁত চেপে চালাতেন সংসার। কিন্তু কথায় আছে না রাখে হরি মারে কে? সেই প্রবাদ যেন অক্ষরে অক্ষরে মিলে গেল। ৬০০ টাকা বেতন পাওয়া সেই মানুষটি এখন কোটিপতি। হ্যাঁ, ঠিকই শুনেছেন। এমন অসাধ্য সাধন করেছেন বেঙ্গালুরুর রেণুকা আরাধ্য (Renuka Aradhya)। এখন তাঁকে দেখলে চেনা দায়। একদিকে যেমন তিনি বদলেছেন তাঁর পোশাক ঠিক তেমনই বদলে ফেলেছেন তাঁর জীবনযাত্রার মান। কিন্তু কীভাবে এমন অসাধ্য সাধন হল?


জীবনের প্রথম দিকে ভিক্ষা করে পেট চালাতেন। কিন্তু সেই মানুষটাকে দেখলে আজ আপনি বিশ্বাসই করতে চাইবেন না। কারণ তিনি আজ প্রায় ৫০ কোটি টাকার মালিক। বেঙ্গালুরু (Bengaluru ) শহরের আনেকাল তালুকের ছোট্ট গ্রাম গোপাসান্দ্রাতেই জন্ম রেণুকার। বাবা ছিলেন পুরোহিত। কিন্তু রোজ কাজ পেতেন না। সেকারণেই পাঁচজনের সংসারে খাবার জোটাতে বাবার সঙ্গে ভিক্ষা করতেন তিনি। কিন্তু রাতারাতি এমন কী ঘটল যার জেরে আজ বছরে ৩৮ কোটি টাকা আয় করেন রেণুকা! তবে ভিক্ষুক থেকে সফল ব্যবসায়ী হয়ে ওঠার পথটা মোটেও সহজ ছিল না। আজ সেই গল্প আপনাদের শোনাবো। পরিবারে তিন ভাইবোনের মধ্যে সবচেয়ে ছোট রেণুকা। গোপাসান্দ্রারই একটি স্কুলে লেখাপড়া। তবে বাবার সঙ্গে ভিক্ষার কারণে বেশির ভাগ দিনই স্কুলে যেতে পারতেন না। ভিক্ষা করে যা পেতেন তা বাজারে বিক্রি করেই পরিবারের জন্য খাবার নিয়ে যেতেন তিনি। কিন্তু এভাবে কতদিন? দিন বদলালেও পরিস্থিতি বদলায়নি। এরপর মাত্র ১২ বছর বয়সে রেণুকাকে একটি বাড়িতে গৃহকর্মী হিসাবে কাজ করার জন্য পাঠিয়ে দেন তাঁর বাবা। সেখানে গবাদি পশুর দেখাশোনা থেকে শুরু করে বাড়ির যাবতীয় কাজ করতে হত রেনুকাকে। তবে পড়াশোনার প্রতি তার ঝোঁক ছিল। কাজের ফাঁকে টুকটাক পড়াশোনা চালিয়ে যেতেন তিনি।

এরপর নিজের অদম্য জেদের জোরেই নিজের আয়ের টাকায় চিকপেটের একটি স্কুলে ভর্তি হন। কিন্তু সব ঠিকঠাক চললেও তিন বছর পরই বাবার মৃত্যুসংবাদ পেয়ে গ্রামে ফিরে আসেন। তারপর আর পড়াশোনার সুযোগ পাননি। মা আর বড় বোনের সমস্ত দায়িত্ব তার কাঁধে এসে পড়ে। স্বাভাবিকভাবেই সংসার চালাতে মাত্র ১৫ বছর বয়সে এক কারখানায় কাজ শুরু করেন রেনুকা। তারপর একটা প্লাস্টিক কারখানায় যোগ দেন। কিন্তু সেই উপার্জনও যথেষ্ট ছিল না পরিবারের জন্য। তাই একই সঙ্গে রাতে দারোয়ানের কাজও করেছেন। এরপর একটা ছাপাখানায় ঝাড়ুদারের কাজের সুযোগ আসে রেণুকার সামনে। পরে ছাপাখানার মালিক তাঁর সততায় খুশি হয়ে কম্পিউটারের বেসিক কাজ শিখিয়ে তাঁকে ছাপাখানায় কাজ দিয়ে দেন। টানা এক বছর তিনি সেখানেই ছিলেন। তারপর রেণুকা একটি সংস্থার সেলসম্যান হন। এরপর যেন মেঘদূতের মতো সতীশ রেড্ডি নামে এক গাড়ি চালকের সঙ্গে পরিচয়ই হয় রেণুকার। আর এই পরিচয়ই তাঁর ভাগ্য বদলে দেয়। সতীশের কাছ থেকে গাড়ি চালানো শিখে দীর্ঘ চার বছর লাশবাহী গাড়ির চালক হিসাবে কাজ করেন রেণুকা। তারপর নিজেই সিদ্ধান্ত নেন, ঋণ নিয়ে নিজের ট্রাভেল এজেন্সি খোলার।

বর্তমানে হায়দরাবাদ, চেন্নাইয়ের ট্যাক্সি পরিষেবার কথা বললে রেনুকার ট্যাক্সি কোম্পানি ‘প্রবাসী ক্যাব’-র নাম সবার আগে উঠে আসবে। এরপর ২০০৬ সালে দেড় লক্ষ টাকা ঋণের বিনিময়ে জীবনের প্রথম গাড়িটা কিনে ফেললেন আরাধ্য। প্রথমে নিজেই গাড়ি চালাতেন। পরে ব্যবসায় লাভ থেকে আরও ৬টা গাড়ি কেনেন। ১২ ঘণ্টা করে দুই শিফটের জন্য ১২ জন চালকও রাখেন। ক্রমে তার ব্যবসা এতটাই বড় হয়ে যায় যে, বর্তমানে তিনি ৮০০ গাড়ির মালিক। দিনরাত হায়দরাবাদ এবং চেন্নাইয়ের যাত্রীদের গন্তব্যে পৌঁছে দিচ্ছে তার সংস্থার গাড়ি। এখন বছরে আয় à§©à§® কোটি টাকা। তবে এতেই সন্তুষ্ট নন রেনুকা। এখন তার টার্গেট বছরে ১০০ কোটি আয় করা। তবে জিরো থেকে হিরো হলেও নিজের আদর্শ থেকে এক পাও পিছু হটেননি রেণুকা।